বাংলায় গোর্খাল্যান্ডের মতো ত্রিপুরাতেও শুরু রাজ্যভাগের আন্দোলন, জানুন নেপথ্য কাহিনি
ত্রিপুরা ভেঙে দুভাগ করার আন্দোলন জোরদার হয়েছে। স্থানীয় 'ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রর্ন্ট অব ত্রিপুরা' (আইপিএফটি) দলটি এই আন্দোলনের প্রবক্তা। গত তিনদিন ধরে এই দলের অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট চালাচ্ছে।
অনেকদিনের দাবি হলেও ২০১৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা ভাগ হওয়ার পরই ত্রিপুরা ভেঙে দুভাগ করার আন্দোলন জোরদার হয়েছে। স্থানীয় 'ইন্ডিজেনাস পিপলস ফ্রর্ন্ট অব ত্রিপুরা' (আইপিএফটি) দলটি এই আন্দোলনের প্রবক্তা। গত তিনদিন ধরে এই দলের অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘট চালাচ্ছে, অবরোধের ফলে ত্রিপুরায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে গত কয়েকবছর ধরেই তীব্র আন্দোলন চালাচ্ছে। সেই দেখেই উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরাতেও জনগোষ্ঠীর একটা অংশ আন্দোলনে নেমেছে। এদিন উপজাতি যুবকেদর একটা বড় অংশ নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ করেন। তবে তা শান্তিপূর্ণই ছিল বলে ত্রিপুরার পশ্চিম জেলার সুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
ত্রিপুরায় নানা জায়গায় অবরোধ
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার অদূরে খামতিংবাড়ি ও সাধুপাড়ায় আইপিএফটি নেতা ও সমর্থক মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ এদিন অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। ভৃগুদাসপাড়ায় রেললাইনের ওপর পিকেটিং করেন তারা। ফলে ট্রেন চলাচল প্রায় বিপর্যস্ত ছিল।
সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন
বামশাসিত ত্রিপুরায় মানিক সরকারের দল ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। সেটা মাথায় রেখেই আন্দোলন আরও জোরদার করার ইচ্ছা বিক্ষোভরত আইপিএফটি গোষ্ঠীর।
অহিংস আন্দোলন করার দাবি আইপিএফটি-র
তাঁদের নেতা এনসি দেববর্মা জানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যান্ডের মতো ত্রিপুরাতেও তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন চলবে। তবে পৃথক রাজ্যের দাবিতে অহিংস পথেই তারা আন্দোলন চালাবেন বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে এদিন যেভাবে নগ্ন হয়ে আন্দোলনকারীরা আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আন্দোলনে শামিল হয়েছেন তাতে আন্দোলন ভবিষ্যতে অহিংস থাকবে এমনটা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
মানিক সরকারের অভিযোগ
ত্রিপুরায় ভোটের আগে এভাবে আন্দোলন শুরু করার পিছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক চক্রান্ত দেখছে সিপিএম। রাজ্যভাগের দাবি ও সেই দাবির সমর্থনে অবরোধ কর্মসূচিকে অযৌক্তিক বলেও ভর্ৎসনা করেছে সিপিএম। বিরোধী কংগ্রেসও রাজ্য জুড়ে বিরোধিতার সমালোচনা করেছে।
বিজেপির বক্তব্য
বিজেপির বিরুদ্ধে গোপনে তিপ্রাল্যান্ড নিয়ে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও ত্রিপুরায় দলের মুখপাত্র অরুণকান্তি ভৌমিক জানিয়েছেন, তাঁরা তিপ্রাল্যান্ডের দাবির বিরোধী। পাশাপাশি বিজেপি অবরোধের রাজনীতিকেও সমর্থন করছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
নেপথ্যের কাহিনি
ভারতের অন্য রাজ্যের মতোই ত্রিপুরায় রাজ্যভাগের দাবি কোনও নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও বহুবার ত্রিপুরা ভাঙার দাবি উঠেছে। হিংসাত্মক আন্দোলনও হয়েছে। মূলত ত্রিপুরার বিভিন্ন উপজাতি সংগঠনের নেতারা পৃথক রাজ্য়ের দাবিতে নানা সময়ে সোচ্চার হয়েছেন। সঙ্গে নানা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনও এই আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনী ও ত্রিপুরা সরকার কঠিন হাতে বারবার সেই আন্দোলনকে থামিয়ে দিয়েছে।