'আফস্পা' আসলে কি? যার জন্য ১৬ বছর অনশন করলেন ইরম চানু শর্মিলা! জেনে নিন
২ নভেম্বর ২০০০ সাল। মণিপুরে অনশন শুরু করলেন ২৮ বছরের যুবতী ইরম চানু শর্মিলা। কেন? কারণ তাঁর দাবি ছিল সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন আইন 'আফস্পা' [আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ার্স) অ্যাক্ট] প্রত্যাহার করতে হবে। আর সেই দাবি নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর অনশন চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। [১৬ বছরের অনশন প্রত্যাহার করতে চলেছেন ইরম শর্মিলা চানু]
তাঁর এই দীর্ঘ লড়াই সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত হয়েছে। ৫০০ সপ্তাহের বেশিদিন অনশন করে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে যাওয়া অনশনকারী হয়েছেন। তাঁকে ডাকা হয় 'আয়রন লেডি' হিসাবে। ভারতের মহিলা আইকনদের মধ্যে অন্যতম সমাদৃত নাম ইরম চানু শর্মিলা।
এতদিন তিনি নিজে মুখে কিছু খাননি। জোর করে নাকে নল ঢুকিয়ে তাঁকে খাওয়ানো হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর অনশন চালিয়ে যাওয়ার পরে অবশেষে শর্মিলা তা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ৯ অগাস্ট। এরপরে তিনি আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন।
আফস্পা আইন কী?
আফস্পা বা [আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ার্স) অ্যাক্ট] সেনাবাহিনীর জন্য একটি বিশেষ আইন। এটি চালু হয় ১৯৫৮ সালে ভারতের উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্য - অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয়, অসম ও ত্রিপুরার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করতে।
৮০-র দশকে পাঞ্জাবে খলিস্তান আন্দোলন এবং পরে ৯০ দশকে জম্মু ও কাশ্মীরেও এই আইন প্রয়োগ করা হয়। তখন থেকে সেখানেও এই আইন বলবৎ রয়েছে।
কী রয়েছে এই আইনে?
- এই আইনানুযায়ী, সেনাবাহিনী যে কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গুলি করতে পারবে।
- বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করতে পারবে।
- বিনা ওয়ারেন্টে যে কোন জায়গায়, যেকারও বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে।
- কোথাও জঙ্গিদের ঘাঁটি রয়েছে বলে সন্দেহ হলে তা নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দিতে পারবে।
- রাস্তায় কোনও যানবাহনের সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করলে তা থামিয়ে তৎক্ষণাৎ তল্লাশি চালানো যাবে।
- এবং সর্বোপরি এই আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সেনা আধিকারিকের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত বা আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না।
কোন প্রেক্ষাপটে শর্মিলার লড়াই শুরু
২ নভেম্বর ২০০ সালে মণিপুরের মালোম শহরে ১০ জন সাধারণ নাগরিককে গুলি করে মেরে ফেলে সেনাবাহিনী। সকলে স্টপেজে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এই ঘটনার নাম দেওয়া হল 'মালোম ম্যাসাকার'।
'মালোম ম্যাসাকার' ঘটিয়েছিল অসম রাইফেলসের জওয়ানেরা। মৃতদের মধ্যে ৬২ বছরের এক বৃদ্ধা মহিলা যেমন ছিলেন তেমনই ১৮ বছরের যুবক সিনম চন্দ্রমণিও ছিলেন। এদের পরিচয় না জেনেই সেনাবাহিনী তাদের হত্যা করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ইরম চানু শর্মিলা। আফস্পা আইন প্রত্যাহার করতে হবে, এই দাবিতে তিনি অনশন শুরু করেন। সেই অনশন দীর্ঘ ১৬ বছর চলল।
আফস্পা ঘিরে বিতর্ক
এই ঘটনার রেশ দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বেঁচে রয়েছে ইরম চানু শর্মিলার অনশনের মধ্য দিয়ে। এই আইনের বিরুদ্ধে বারে বারে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিবাদ উঠেছে। এই আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করারও দাবিও তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
২০০৪ সালের ১৫ জুলাই মণিপুরের কাংলা দুর্গের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে কয়েক জন নারী অসম রাইফেলসের জওয়ানদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান। অসম রাইফেলসের তৎকালীন সদর দফতরের সামনে সেই মহিলারা চিৎকার করে বলেছিলেন, 'ভারতীয় সেনা, এসো, আমাদের ধর্ষণ কর'।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়
সম্প্রতি শীর্ষ আদালত তার নির্দেশে বলেছে, সেনাবাহিনী বা আধাসেনা কোনও অবস্থাতেই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা বা প্রতিশোধমূলক আচরণ করতে পারবে না। যতই সেই এলাকা জঙ্গি অধ্যুষিত হোক বা আফস্পা আইন জারি থাকুক।