কোন সূত্রে কাছাকাছি আসতে চলেছেন মোদী-মমতা!
আগামী বছর ২০১৬-তে রাজ্যে বিধানসভা ভোট। বলতে গেলে এখন থেকেই সব দলগুলি ভিতরে ভিতরে তার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে যে দল গ্রহণযোগ্যতায় এগিয়ে থাকবে সেই দলের জেতার সম্ভাবনাই বেশি।
আগামী ভোটে বাম-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে সেই বিজেপিই। মোদী ঝড় বাংলায় এসে ধাক্কা খেলেও আশাতীতভাবে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে বেড়েছে। এরাজ্যে তৃণমূল ও কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও যুযুধান দু'পক্ষের কিন্তু একে অপরকে ভীষণভাবে প্রয়োজন।
বন্যা দুর্গত, ঋণের বোঝায় কাত হওয়া বাংলাকে ফের একবার উপরের দিকে তুলে ধরতে চান, এমনই দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারজন্য সর্বাগ্রে চাই কেন্দ্রীয় সাহায্য।
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটে প্রবল প্রতাপে জিতে আসা নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র রাজ্যসভায় হাল খুব খারাপ। লোকসভাতেও প্রধান বিরোধী কংগ্রেসের উৎপাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়।
তাই আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী তৃণমূলকে সঙ্গী হিসাবে পেলে মন্দ হয় না। আরও বিশেষ করে যখন অতীতে দুই দল একে অপরের হাত ধরেছে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের যে তত্ত্ব প্রধানমন্ত্রী খাড়া করেছেন সে পথে চললে রাজ্য়ের যদি উন্নতি হয়, তাতে আখেরে লাভ হবে তৃণমূলেরও। আসলে ঘটনা হল, পণ্য পরিষেবা বিল ও জমি অধিগ্রহণ বিল সংসদে পাশ করানো নিয়ে প্রবল চাপে রয়েছে বিজেপি।
এমতাবস্থায় রাজ্যের জন্য কেন্দ্রীয় সাহায্যের বদলে যদি তৃণমূলকে পাশে নিয়ে বিল পাশ করানো যায় তাহলে সাপও মরে আর লাঠিও বাঁচে। এই মুহূর্তে তাই বিজেপির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েও রেখেছেন যে, হয় ঋণ মকুব করা হোক অথবা ঋণ শোধে আরও বেশি সময় দেওয়া হোক। এছাড়া বন্যা দুর্গতদের সাহায্যার্থে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন মমতা। আগামিকাল অর্থাৎ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চাষিদের নেওয়া ঋণ মকুবের আবেদন জানাবেন মমতা।
সংসদ আপাতত ললিত মোদী বিতর্কে সুষমা স্বরাজ ও বসুন্ধরা রাজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। কোনও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও বিল পেশ করা যাচ্ছে না সংসদে। এমতাবস্থায় তৃণমূলকে কিছু ক্ষেত্রে পাশে পেয়েছে বিজেপি। শোনা গিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূলের।
সেই ছিদ্র দিয়েই বিজেপি ঢুকে পড়তে চাইছে। 'দেওয়া-নেওয়া'-র এই নীতিতে ভর করে আগামিদিনে দুটি দলই রাজ্যের বুকে রাজনৈতিকভাবে কতোটা ফায়দা তুলতে পারে, এখন আপাতত সেটাই দেখার।