আতঙ্কের যাত্রা : প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসহানার ঝুঁকি নিয়েই মেট্রোতে চলাচল কলকাতাবাসীর!
কলকাতা, ৫ আগস্ট : কলকাতার মেট্রোর জনপ্রিয়তার কোনও তোড় নেই। ২৭.২ কিলোমিটারের রাস্তা, ২৪টি মেট্রো স্টেশন যদি মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে বিনা যানজটে পাড় করে ফেলা যায় তাহলে রাস্তার ট্র্যাফিকে পড়ে হাঁসফাঁস করা কেন।
তবে, সময়ে বদলাচ্ছে, মেট্রোর এই সুখের যাত্রা ক্রমেই আতঙ্কের যাত্রা হয়ে উঠছে নগরবাসীর কাছে। ফ্রান্স, লন্ডন, তুরস্ক একেক দিন একের জায়গায় সন্ত্রাসহানার খবর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে মেট্রোর নিত্যযাত্রীদের মনে।
মূলত সন্ত্রাসবাদীদের টার্গেট হয় জনবহুল জায়গা, যাতে এক আঘাতেই বিশাল পরিমাণ ক্ষতি সৃষ্টি করা যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে জঙ্গিদের টার্গেট যে কোনও দিন হতে পারে কলকাতার মেট্রো। যেখানে প্রত্যেকদিন ঘন্টায় ৩০,০০০ যাত্রী যাতায়াত করে।
মেট্রো জঙ্গিদের 'ইজি টার্গেট'
মেট্রো জঙ্গিদের 'ইজি টার্গেট' হওয়ার অন্যতম মূল কারণ মেট্রোর ঢিলেঢালা নিরাপত্তা। অধিকাংশ মেট্রো স্টেশনে এক্স রে মেশিন কাজ করে না। দিনের পর দিন খারাপ হয়ে পড়ে থাকলেও তা সারানোর কোনও উদ্যোগ নেই।
মেটাল ডিটেক্টর হাতে খাঁকি উর্দিধারীরা ঘুরে বেড়ালেও নিজেদের ব্যাগ স্ক্যান করানোটা যেন যাত্রীদেরই ব্যক্তিগত দায়িত্ব। অনেকসময় যাত্রীরা মেটাল ডিটেক্টর গেটের পাশ ঘেঁষেই বেরিয়ে যান, তাও খেয়াল করেন না নিরাপত্তারক্ষীরা। এককথায় বলতে গেলে দেশের সবচেয়ে পুরনো এই পাতাল রেল-এর যাত্রী নিরাপত্তা শূণ্য।
পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর পাশাপাশি যেটুকু রয়েছে তাও নিরাপত্তারক্ষীদের গাছাড়া ভাব সন্ত্রাসবাদীদের পরিকল্পনাকে সফল করতেই কাজে আসবে।
নিরাপত্তারক্ষীদের গাছাড়া মনোভাব
মেট্রো তৈরির জন্মকাল থেকে সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করতে মেট্রো স্টেশনের মধ্যে ছবি তোলা বা ভিডিও করার ক্ষেত্রে নিষেধাক্ষা রয়েছে। তবুও অধিকাংশ সময়, সেলফি তোলা বা ভিডিও তোলার ক্ষেত্রে মেট্রোর কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মীরা কাউকে বাধা দেননা। অনেকসময় তো আবার গোটা একটি মেট্রো স্টেশনে নিরাপত্তারক্ষীদের দেখাই মেলে না।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে মেট্রোর গোটা সুরক্ষা ব্যবস্থাতেই ফাঁক রয়েছে। মেট্রোতে কোনও সন্ত্রাস হানা হলে তার মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হবে মেট্রো। যেহেতু মেট্রোর প্রবেশ ও বাহিরের দুটি পথ রয়েছে, সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪৮টি এক্স-রে মেশিন থাকা উচিত। সেখানে মাত্র ২৩টি স্ক্যানিং মেশিন রয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকই কাজ করে না বেশিরভাগ সময়।
কী বলছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ
যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের কথায়, যে নিরাপত্তরক্ষীরা গা ছাড়া মনোভাব দেখান, তাদেরকে শনাক্ত করে কড়া শাস্তিও দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে তারা এণন ভুল না করেন। সিসিটিভির মাধ্যমে এবং সাপ্রাইজ ভিজিটের মাধ্যমে এদের উপর নজর রাখা হয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষের কথায় প্রথমে তারা উপলব্ধ পরিকাঠামোকে আরও উন্নত করতে চান, তারপরেই অন্যান্য ব্যবস্থাকে আপগ্রেড করার কথা ভাবা হবে।
কী বলছেন সাধারণ মেট্রো যাত্রীরা
বাগবাজারের বাসিন্দা মঞ্জু তলাপাত্রর কথায়, প্রত্যেকদিন কাজের জন্য রাসবিহারিতে যেতে হয়। হাতের কাছেই মেট্রো, কম সময়ে চলে যাওয়া যায় তাই যাই। কিন্তু সত্যিই মেট্রোতে নিরাপত্তা বলে কিছুই নেই। ব্যাগ ট্যাগ চেক করে নাম কে ওয়াস্তে। আমি যদি বোমা নিয়েও ঢুকে যাই আমায় কেউ আটকাবে না। টিভি খুললেই কাগজ পড়লেই যেভাবে সন্ত্রাসহানার খবর দেখি, ভয় তো লাগেই।
একই সুর গড়িয়ার মেনকা ভট্টাচার্যের গলাতেও। তাঁর কথায় রোজ ছেলেকে স্কুলে দিতে যাই আবার আনতে যাই। সত্যিই মেট্রো স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তার নামে রসিকতা হয়। এত চারিদিকে খবর শুনেও কারোর কোনও হুঁশ নয়, বড় কোনও দুর্ঘধটনা না হলে এদের ঘুম ভাঙবে না।
২৫ বছরের পীযুশের কথায়, আরে সন্ত্রাসবাদীর তো আর আলাদা চেহারা হয় না। এই তো টিভিতে দেখছিলাম বাংলাদেশে হামলার জঙ্গিরা আমাদের বয়সীই ছেলে। এরা তো আগে থেকে এসে লক্ষ্য করে সবার গতিবিধি, তারপর হামলা করে। কলকাতার মেট্রো স্টেশনে ঢুকতে তো সন্ত্রাসবাদীদের বেশি পরিকল্পনাও করতে হবে না। নিরাপত্তা তো নয় প্রহসন। ভাবলে ভয় তো লাগেই। কিন্তু উপায় কী এই ভয় নিয়ে চলতে হবে।