সিরিয়া নিয়ে আমেরিকা-রাশিয়ার সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত; ভাবগতিক সুবিধার নয়
নাহ, বারাক ওবামার সময়কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুতেই আর রাশিয়ার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে উঠতে পারল না। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ওবামা এবং ভ্লাদিমির পুতিন প্রশাসনের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন প্রথম থেকেই ছিল। সাম্প্রতিককালে, ওয়াশিংটন এবং মস্কো তাও চেষ্টা করে সব ব্যবধান ঘুঁচিয়ে সিরিয়ার রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধকে থামানোর একটা সম্মিলিত চেষ্টা করতে।
গতমাসে দু'দেশের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক রফা হয় সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে। কিন্তু শেষমেশ তাও ব্যর্থই হল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে এ-ব্যাপারে সহযোগিতা ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে মস্কোও ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ-সম্পর্কিত একটি ষোলো-বছরের পুরোনো চুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করে।
রাশিয়া জানায় তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে আমেরিকানদের তাদের প্রতি "অবন্ধুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড"-এর প্রত্যুত্তরে। সে-দেশের বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন আমেরিকা যেন রাশিয়াকে নিচু নজরে দেখার ভুল না করে। মস্কোর সঙ্গে ইচ্ছেমতো সহযোগিতা করার মধ্যিখানে ওয়াশিংটনের হুমকি এবং একপেশে দাপট দেখানোর প্রবণতা তাঁরা মেনে নেবেন না বলে জানান ল্যাভরভ।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা ভালো যে ইউক্রেন থেকে শুরু করে মানবাধিকার সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা, ন্যাটো বাহিনীর অভিযান, ইত্যাদি, নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে উত্তপ্ততা ক্রমেই বেড়েছে সম্প্রতি আর সোমবারের ঘটনা দেখিয়ে দিলো যে ঠান্ডা যুদ্ধ বহুদিন শেষ হলেও এই দুই পরমাণু শক্তির সম্পর্কের মধ্যে তার রেশ এখনও রয়েছে ভালো মতোই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে হোয়াইট হাউস-এর প্রেস সেক্রেটারি জোস আর্নেস্ট অন্যদিকে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করে বলেন যে মস্কো চুক্তির প্রতি ন্যূনতম দায়বদ্ধতা দেখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সিরীয় সেনার সঙ্গে মিলে তারা সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে সিরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পক্ষে, রাশিয়ার অবস্থান ঠিক তার উল্টোদিকে কারণ পশ্চিম এশিয়াতে আসাদ মস্কোর অন্যতম বড় মিত্র।
অতএব, এই দুই দেশের মধ্যে যে সিরিয়া প্রশ্নে ঐক্যমত্য হওয়া বেশ কঠিন বা কার্যত অসম্ভব, তা বলাই বাহুল্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে এই দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সামরিক এবং সরকারি প্রতিনিধিদের সুইজারল্যান্ডের জেনিভাতে পাঠিয়েছিল, তাঁদেরও ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
গত মাসেই হওয়া আমেরিকা-রাশিয়ার সিরিয়া চুক্তি ভণ্ডুল হওয়ার অর্থ এখন আর যুদ্ধ-বিধস্ত দেশটিতে সংঘর্ষ আটকানোর কোনও পথ আর খোলা রইল না আপাতত।
এই পুরো ঘটনাটি প্রমাণ করে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একপেশে দাপটের দিন এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অতীত। পুতিনের রাশিয়া এবং জি জিনপিং-এর চিনও এখন প্রবল জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে এবং আমেরিকার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে তাঁরা বিন্দুমাত্র পিছপা নন।
ওবামার মতো তুলনামূলকভাবে 'শান্ত' রাষ্ট্রপতি সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিনিদের সহজাত সামরিক পেশি আস্ফালনের প্রদর্শন না করাতেও সিরিয়াতে রাশিয়া এবং চিনের মতো দেশ ওয়াশিংটনের বিরোধিতা করেছে বেশ শক্তভাবেই। কিন্তু ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে এমন গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়া মোটেই ভালো লক্ষণ নয় সিরিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার ভবিষ্যতের পক্ষে।