বামেদের শক্তিহীন করতে গিয়ে বিজেপির উত্থানের পথ সহজ করে দিয়েছে তৃণমূল
শাসকদলের নেতারা প্রায়শই হুঙ্কার দেন, রাজ্যে কোথাও লাল পতাকা থাকবে না। সেই মতো হুমকি, সন্ত্রাস চলে। কোনও তৃণমূল নেতা বলেন না একটাও গেরুয়া পতাকা থাকবে না।
শাসকদলের নেতারা প্রায়শই হুঙ্কার দেন, রাজ্যে কোথাও লাল পতাকা থাকবে না। সেই মতো হুমকি, সন্ত্রাস চলে। কোনও তৃণমূল নেতা বলেন না একটাও গেরুয়া পতাকা থাকবে না। বিজেপি এবং নানা সংগঠনের মুখোশে সংঘ পরিবার সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে।
২০১৪-তে রাজ্যে আরএসএসের শাখা সংগঠন ছিল ৫৮০। ২০১৭-তে দাঁড়িয়েছে ১৪৯২। এই একটা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে শাসকদল চিরশত্রু বামেদের কোমর ভেঙে দেওয়ায় সংঘ পরিবার কেমন ফাঁকা মাঠ পেয়ে যাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে সে অর্থে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তেমন গুরুত্ব দেননি শাসকদলের প্ল্যানমেকাররাও।
তবে এবার শাসক শিবির বুঝতে পারছে শষ্যক্ষেত থেকে পাখি তাড়াতে গিয়ে হনুমানের দল ডেকে আনা হয়েছে। পাখি চারটে দানা খেত, হনুমানের দল এবার সব খাবে এবং শষ্যক্ষেতও তছনছ করবে। এখন তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝছেন, পদ্মকাঁটা ঠেকাতে প্রয়োজনে বামেদের সঙ্গে নেওয়া দরকার।
এ
রাজ্যের
ধর্মনিরপেক্ষ
চরিত্র
এবং
সম্প্রীতির
পীঠস্থানের
গর্ব
যাতে
নষ্ট
না
হয়,
তার
জন্য
সচেষ্ট
হতে
হবে
শাসকদল
তথা
রাজ্য
সরকারকে।
সাম্প্রদায়িক,
দাঙ্গাবাজ
এবং
সংবিধান
অগ্রাহ্যকারী
ক্ষতিকর
শক্তিকে
রুখতে
অন্যান্য
ধর্মনিরপেক্ষ
শক্তিগুলিকে
সঙ্গে
নিয়ে
এগোতে
হবে।
গণতন্ত্রের
অন্যতম
প্রধান
শর্ত
হল
শক্তিশালী
বিরোধী
পক্ষ।
এই
শক্তিশালী
বিরোধী
পক্ষই
সরকারের
বিবেক
আয়না
হিসাবে
কাজ
করে।
এ
রাজ্যের
মানুষ
দ্বিতীয়
পর্যায়ে
বাম-কংগ্রেস
শক্তিকে
কার্যত
নিঃস্ব
করে
তৃণমূল
কংগ্রেসকে
বিপুলভাবে
জিতিয়েছে।
তবু
বিরোধী
তো
ছিল।
শক্তি
কম
হলেও,
তাদের
অস্তিত্ব
ছিল।
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্ষমতায় আসার পর শাসকদলের মধ্যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অর্থের প্রলোভনে বা হুমকির জোরে বিরোধী সদস্যদের ভাঙিয়ে এনে একের পর এক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা পুরসভা দখল করার মানসিকতা পেয়ে বসেছিল শাসকদের।
মানুষ জেতাল এক দলকে বা একটা জোটকে। নানা কারসাজিতে তা চলে গেল অন্য দলের হাতে। এটা গণতন্ত্রকে উপহাস করা। শুধু চাণক্যনীতিতে সুশাসন সম্ভব নয়। তার জন্য চাই মানুষের মন জয়। শাসকদল সে পথে না হেঁটে, রাজ্য শাসনে চাণক্যনীতিকেই প্রাধান্য দিয়ে ফেলল। এতে 'আমরাই সব জায়গায়' এমন আত্মতৃপ্তিতে খুশি হওয়া যায়। 'বিরোধীশূন্য রাজ্য' বলে অহং ছড়ানো যায়। কিন্তু গোপনে রচিত হয় গণতন্ত্রের কবর- এই সত্য বুঝতে চায়নি শাসকদল।
এটা মানতেই হবে- বামেরাই বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের 'ঘোষিত শত্রু'। বিজেপিও সেটা জানে। তাই বামেরা বাদে বাকি সব দলকে বন্ধু না ভাবলেও শত্রু ভাবে না। সে বিচারে তৃণমূল কংগ্রেস একদা বিজেপি-র বন্ধুই ছিল। এখনও বাম ও কংগ্রেস অভিযোগ করে, ভিতরে ভিতরে 'দিদি-মোদি' গাঁটছড়া বাঁধা আছে। কখনও তা কাছাকাছি হয়, আবার কখনও তাতে টান পড়ে।
ভবিষ্যতে তৃণমূল বিজেপি বন্ধুত্ব আবারও হতে পারে- এটা মাথায় রেখেছে বিজেপি। সেটা দিল্লিতে প্রয়োজনভিত্তিক। রাজ্যের বিষয়টা আলাদা। বামেদের কোমরভাঙা দশায় বিজেপি ভাবতে চাইছে, তারা একদিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে। ফাঁকা মাঠে কার্যত তলোয়ার ঘোরাচ্ছে। সেই দাপাদাপি রোখার ক্ষমতা বামেদের রাখেনি শাসকদল তৃণমূল।
ক্ষমতায় থাকলে শক্তি বাড়ে, সংহত হয়। না থাকলে বিছিন্ন অবস্থায় থাকে। এত দমন-পীড়নের পরেও বামেরা আছে। মাঝে মাঝে বিশাল জমায়েত বা মহামিছিল করে তা বুঝিয়ে দেয় বামেরা এবং বামেদের দাবিও, তাদের যতই জীবন্মৃত করে রাখা হোক, এখনও তারা সংঘের বিরুদ্ধে জবরদস্ত লড়াইয়ের ক্ষমতা রাখে। সংঘ পরিবারের নীরবে মাটি তৈরির খবরে তারা বিচলিত।
অন্যদিকে একছত্র ক্ষমতার অধিকারী হলে দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হবেই, শাসক দলে তা হচ্ছেও। সংঘ পরিবার সেই বিক্ষুব্ধদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। এটাও বিপদের তৃণমূলের কাছে। এছাড়াও সংঘ বাড়ন্তে 'দিদি-মোদি' গাঁটছড়ার প্রচার বা অপপ্রচারে সংখ্যালঘুদের তৃণমূল বিরোধী করে তুলতে পারে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংঘ বাড়ন্ত ঠেকাতে নয়া পরিকল্পনা বানাতেই হবে।
জানা গেছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টা প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। এবং বুঝছেন, সংঘ মোকাবিলায় একা লড়ে ততটা সুফল পাবেন না। তাই সংঘশত্রু বামেদের সঙ্গে নেওয়ার পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন। এখনও সময় আছে । রাজ্যকে সর্বনাশের দিকে এগিয়ে যেতে না দিয়ে, এখনই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে পাশে নিলে, আর যাই হোক সংঘকে রুখে দেওয়া সম্ভব- এটা রাজনৈতিক মহলের মত।