আমেরিকা ছাড়া টিপিপি-র কোনও অর্থই হয় না": জাপানি প্রধানমন্ত্রী কি হতাশ?
নিজের দেশে টিপিপির স্বার্থে অনেক বিরোধিতার মোকাবিলা তাঁকে করতে হয়েছে; আর এখন ট্রাম্প সেই টিপিপিকে কী না নিমেষে নস্যাৎ করছেন!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম থেকেই ১২-দেশীয় ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি-র বিরোধিতা করে এসেছেন। তাঁর মতে, এই বাণিজ্যিক সংগঠনটি বাস্তবায়িত হলে তা মার্কিন মুলুকে বেকারত্বের হার আরও বাড়াবে।
আর এবার পূর্ব এশিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র দেশ জাপান জানাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না থাকলে টিপিপি-র কোনও অর্থই থাকে না। সোমবার (নভেম্বর ২১) জাপানের রাষ্ট্রপতি শিনজো আবে পেরুতে এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলির একটি শীর্ষসম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরে আর্জেন্তিনা সফরকালীন একথা বলেন।
টিপিপি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বেঁকে বসার পরে এই প্রকল্পটিকে সফল করতে এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলি একটি শেষ চেষ্টা করে। চুক্তির মধ্যে রদবদল ঘটানো বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই তা সম্পাদনা করার কথা উঠে আসার পর আবে তাঁর মত জানান।
আবের মতে ওয়াশিংটনকে ছাড়া যেমন এই চুক্তির কোনও মানে নেই, তেমনি তার মধ্যে রদবদল ঘটিয়েও কোনও লাভ নেই কারণ তাতে চুক্তিটির মৌলিক চরিত্রই বদলে যাবে।
আবের এই মন্তব্য স্বভাবতই বোঝা যায় যে তিনি হতাশ। নিজের দেশে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে টিপিপির ব্যাপারে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এরপর যখন মিত্রদেশ থেকেই এর কড়া বিরুদ্ধাচরণ শুরু হয়েছে, তখন অভিজ্ঞ আবে বুঝে যান যে এই চুক্তির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অন্যদিকে, টিপিপি নিয়ে এই মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে চিন আরসেপ নামে একটি পাল্টা বাণিজ্যিক সংগঠন তৈরি করার কথা ভাবছে। স্বাভাবিকভাবেই, জাপানের উদ্বিগ্নতা এতে বাড়বে।
ট্রাম্পের পূর্বসূরি তথা বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা টিপিপির বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে পূর্ব এশিয়াতে চিনকে কোনঠাসা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিনতু ট্রাম্প এতে গররাজি হওয়ায় ওবামার পিভট টু এশিয়া নীতি যে বড়রকম ধাক্কা খেল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
লিমাতে এশিয়া প্যাসিফিক ইকনমিক কোঅপারেশন বা আপেক-এর দু'দিনব্যাপী শীর্ষসম্মেলনে আবে-সহ বিভিন্ন দেশের নেতৃত্ব ট্রাম্পের 'ঘরমুখী' নীতি এবং গ্রেট ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করেন।
বিশ্ব রাজনীতিতে দাপট দেখিয়ে আসা এই দু'টি দেশের এমন বিশ্বায়ন-বিরোধী অবস্থানের ফলে উদ্বিগ্ন বহু দেশই -- বিশেষ করে আর্থিক এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে।
আবে গত সপ্তাহেই নিউ ইয়র্কে ট্রাম্পের বাসস্থান ট্রাম্প টাওয়ারে ভাবী মার্কিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন তাঁর দেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বৈঠকের পরে যদিও আবে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন কিনতু বৈঠকে কী কথা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি।