কী এই 'তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি' যা নিয়ে এত বিতর্ক? জেনে নিন বিস্তারিত
সন্ত্রাসবাদ সহ প্রায় সমস্ত বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে গোলযোগ বেঁধে রয়েছে একমাত্র তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সাক্ষর করতে গিয়েই। একনজরে জেনে নেওয়া যাক এই বিতর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
ভারতের সঙ্গে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের জন্য ও দ্বিপাক্ষিক সম্প৪ক ও বাণিজ্য এগিয়ে নিয়ে যেতে এদেশে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত যে একেবারে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু তা বরাবরের মতো এবারও জানিয়েছেন বাংলাদেশের আওয়ামী লিগের সর্বোচ্চ নেত্রী শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসবাদ সহ প্রায় সমস্ত বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে গোলযোগ বেঁধে রয়েছে একমাত্র তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি সাক্ষর করতে গিয়েই। কেন্দ্র তিস্তা চুক্তি করতে চাইলেও রাজি নন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যেহেতু জল বন্টনের বিষয়টিতে রাজ্যের উপরে নির্ভরশীল কেন্দ্র, তাই মমতার সম্মতি ছাড়া তিস্তা জলবণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে না। একনজরে জেনে নেওয়া যাক এই বিতর্কের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
তিস্তার উৎস
তিস্তা নদীর উৎপত্তি সিকিমে। সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তা বাংলাদেশে গিয়েছে। এই নদীর ৫৫ শতাংশ জল ভারত দাবি করে থাকে। তবে বাংলাদেশ এখন যতটুকু জল পায় তার চেয়ে বেশি দাবি করছে।
জল নিয়ে দরাদরি
১৯৮৩ সাল থেকে জল নিয়ে দরাদরি চলছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। ২০১১ সালে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হওয়ার কথা ছিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। যার সময়কাল ১৫ বছরের। সেই অনুযায়ী তিস্তার ৪২.৫ শতাংশে ভারতের অধিকার ও ৩৭.৫ শতাংশ বাংলাদেশের অধিকার রয়েছে।
মমতার বাধা
এই চুক্তির বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে তা আর সাক্ষরিত হয়নি। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে প্রস্তাবিত ঢাকা সফরও প্রথমে রাজি হয়ে এই চুক্তির বিরোধিতা করে শেষে বাতিল করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের দাবি
বাংলাদেশ ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে প্রতিবছর তিস্তার জলের ৫০ শতাংশ ভাগ চায়। কারণ সেইসময়ে সেদেশে জলের যোগান সবচেয়ে কম থাকে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের একাংশ জীবন-জীবিকা নিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েন।
ভারতের ব্যাখ্যা
তবে ভারতের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের নিজস্ব কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাংলার তরফে জানানো হয়েছে, চাষবাস ও সেচের কাজে প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জল তিস্তা থেকে রাজ্য পাচ্ছে না। এই অবস্থায় বাংলাদেশকে কীভাবে বেশি জল ছাড়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের তিস্তা নির্ভরতা
এদিকে তিস্তা অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়া নদীগুলির মধ্যে চতুর্থ সবচেয়ে বড়। সেচ ও মৎস্য চাষে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিস্তার প্লাবনভূমি বাংলাদেশের ২৭৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
শুখা মরশুমে চাষের সমস্যা
ফলে জল সঠিকভাবে না পেলে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলার ১ লক্ষ হেক্টর জমি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শুখা মরশুমে এই জেলায় জলের সমস্যা একেবারে চরমে ওঠে।
বাংলার সমস্যা
এর আগে তিস্তার জল নিয়ে বিরোধিতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, যথেষ্ট পরিমাণে জল বাংলাদেশকে দেওয়া হচ্ছে। জলের প্রয়োজন রয়েছে এরাজ্যেরও। সেখানেও অপ্রতুলতা রয়েছে। কলকাতা বন্দর জলের অভাবে তার নাব্যতা কমে গিয়েছে। ফলে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। এদিকে তিস্তা ও ফারাক্কা বাঁধ থেকে বাংলাদেশকে জল ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও এমনটা করা হচ্ছে।
জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও বিতর্ক
এর পাশাপাশি তিস্তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওটা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সিকিমে তিস্তার উপরে অন্তত ২৬টি এমন প্রকল্প রয়েছে। যা থেকে ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র রাখা হয়েছে।
মমতার বিকল্প প্রস্তাব
শনিবার ভারত-বাংলাদেশের বৈঠকের মাঝে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জল পাক সেটাও তিনি চান। তবে তার জন্য বিকল্প প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন। তিস্তার জল উত্তরবঙ্গের লাইফলাইন বলে জানিয়ে মমতা তোর্সা সহ বেশ কয়েকটি ছোট নদী যেগুলির জল বাংলাদেশকে দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন। সেগুলির জলের ভাগ নিয়ে সমীক্ষা হোক। সেই জল দিতে রাজ্যের বাধা নেই বলেও শেখ হাসিনাকে জানিয়ে এসেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এখন দেখার তিস্তার জল নিয়ে বিতর্ক কোথায় গিয়ে থামে।