টেট জটিলতা কাটবে তো? নাকি বানচাল হয়ে যাবে পুরো প্রক্রিয়াটাই!
টেট-জট কাটবে তো? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের যুব সমাজের কাছে। রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে, কিন্তু সেই জটিলতা যে কাটছেই না।
টেট-জট কাটবে তো? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের যুব সমাজের কাছে। রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের সরকারি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে, কিন্তু সেই জটিলতা যে কাটছেই না। ক্রমশ বেড়ে চলা এই সঙ্কট মুক্তির অপেক্ষার দিন গোনা ছাড়া উপায় নেই টেট প্রার্থীদের।[পকেটে ৮-১০ লক্ষ থাকলেই চাকরি, টেট-ভেট নিয়ে তৃণমূলকে বিশ্বাসঘাতক বললেন শমীক]
শিক্ষিতের সংখ্যার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। কী রাজ্য, কী দেশ, সর্বত্রই প্রায় একই চিত্র। তার উপর রাজ্যে যদিও বা টেটের ফল প্রকাশ হল, তালিকা প্রকাশ হল না। গোপন এসএমএসে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ এলেও, সেখান থেকেই নতুন জটিলতা শুরু। হাহাকার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।[এবার চাকরি পেয়েছেন মিস্টার 'ওয়াই'! নয়া বিতর্কে প্রাইমারি টেট]
আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটি আরও একটু প্রকট। কারণ, এই রাজ্যে জমির আনুপাতে জনসংখ্যার হার যথেষ্ট বেশি। শিক্ষার হারও অন্য রাজ্যের চেয়ে কম নয়। সেইসঙ্গে তাল মিলিয়ে বেকারত্বের মাত্রাও বেশি। এই আবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষকপদে একলপ্তে হাজার হাজার নিয়োগের উদ্যোগ রাজ্যের শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে খুশির জোয়ার এনেছিল।[নিয়োগপত্রে লেখা পার্শ্বশিক্ষক! অনিয়মের অভিযোগ টেট-বিক্ষোভের আঁচ রাজ্যজুড়ে]
লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিল একটা চাকরির আশায়। কিন্তু সেখানেও ঢুকে পড়ল অসাধু চক্র। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মোটা টাকা কামাতে বাজারে নেমে পড়ল অনেকেই। এমনকী শাসক দলের অনেক নেতাও এই কু-চক্রে শামিল হল। দর উঠল ছয় থেকে আট লক্ষ। টাকা দিলেই প্রাথমিক শিক্ষকতার একটি চাকরি হাতের মুঠোয়। এরকম একটি হুজুগ তৈরি হল রাজ্যে।
চাকরি পেতেই হবে- এই মানসিকতায় চাকরিপ্রার্থীরা পড়লেন ওই আসাধু চক্রের ফাঁদে। ফলে এবারের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি যে স্বচ্ছ হবে না তা বলাই বাহুল্য। সন্দেহের বীজ বপন হয়েছে প্রত্যেকের মনেই। কর্তৃপক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেনি। এমনকী ফল প্রকাশের পরও এমন পন্থা নেওয়া হয়েছে যে, তাতে সন্দেহের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব সন্দেহ নিহিত হয়েছে এসএমএস-কাণ্ডে।
এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রাথমিক শর্তটিই পূরণ করেনি কর্তৃপক্ষ। প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের পূর্ণাঙ্গ তালিকা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। কেন এই আবশ্যিক শর্তটি লঙ্ঘন করা হল, তার যথাযথ উত্তর নেই। পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ দূর অস্ত, জেলাভিত্তিক তালিকাও এবার প্রকাশ করা হয়নি। তার উপর, কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়াটিও আস্থা রাখতে ব্যর্থ।
এবারের এই নিয়োগ সবচেয়ে কলঙ্কিত হয়েছে প্যারাটিচার ইস্যুতে। চাকরি পেয়েও বিভিন্ন জেলায় চাকরিপ্রার্থীদের অসম্মানজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁরা নিয়োগপত্র পেয়ে নির্দিষ্ট স্কুলে স্কুলে চাকরিতে যোগ দিয়ে কাজ শুরু করার বেশ কয়েকদিন বাদে চাকরি বাতিলের ফরমান হাতে পেয়েছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরে ঘটেছে এই ঘটনা। কেন তাঁরা চাকরি পেলেন, আর কেনই-বা তাঁদের চাকরি হারাতে হল-তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
চাকরিপ্রার্থীরা প্যারাটিচার কোটায় আবেদন করেননি, অথচ তাঁদের কাছ থেকে নিজেদের প্যারাটিচার প্রমাণের নথিপত্র দাবি করা হচ্ছে! এই পরিস্থিতিই অনেক প্রশ্ন তুল দিয়েছে। এই প্রশ্নেরও যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই বিশ্বাসযোগ্যতাও ফিরিয়ে আনতে পারেনি। সদ্য পাওয়া চাকরি হারিয়ে প্রার্থীরা আদালতে যাবেনই, তখন জটিলতা আরও বাড়ার সম্ভবনা। ফলে পুরো প্রক্রিয়াটিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাবে বলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। শেষপর্যন্ত এমন পরিস্থিতি না তৈরি হয়, যাতে পুরো প্রক্রিয়াটাই বানচাল হয়ে যায়!