শিবরাত্রি ২০২১: শিবের এই ১২ টি জ্যোর্তিলিঙ্গ মন্দির কেন স্থাপিত হয় , পড়ুন সেই পৌরাণিক কাহিনি
পৌরানিক কাহিনিই হোক বা মন্দিরের দৃশ্যপট, সব মিলিয়ে এই মন্দিরগুলি তীর্থযাত্রী তথা পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষণের বিষয়। দেখে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় রয়েছে এই জ্যোর্তিলিঙ্গগুলি, আর তার নেপথ্যের কাহিনি।
জ্যোতি বলতে আলোকস্তম্ভকে বোঝানো হয়। হিন্দু পুরাণ মতে শিবশক্তির আলোকজ্যোতি পুজার্চনার যোগ্য। সেই উদ্দেশে সারা দেশে প্রায় ১২ টি জায়গায় মহাদবের জ্যোর্তিলিঙ্গের উপাসনা করা হয়। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শিবের এই জ্যোর্তিলিঙ্গের মন্দির স্থাপিত হয়েছে।
[আরও পড়ুন:রঙবেরঙের বৌদ্ধ উৎসবে যোগ দিতে হলে বেড়াতে যেতে পারেন দেশের এই বৌদ্ধ-শহরগুলিতে]
প্রতিটি মন্দিরের স্থাপনার নেপথ্যে রয়েছে নান নানা পৌরাণিক কাহিনি। পৌরানিক কাহিনিই হোক বা মন্দিরের দৃশ্যপট, সব মিলিয়ে এই মন্দিরগুলি তীর্থযাত্রী তথা পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষণের বিষয়। দেখে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় রয়েছে এই জ্যোর্তিলিঙ্গগুলি, আর তার নেপথ্যের কাহিনি ।
সোমনাথ
গুজরাতের সোমনাথ মন্দির শিবশক্তির জ্যোর্তিলিঙ্গগুলির মধ্যে অন্যতম পবিত্র মন্দির বলে মনে করেন হিন্দুরা। কথিত রয়েছে , এই মন্দির , ১৬ বার ধ্বংস ও ১৬ বার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। কথিত আছে, দক্ষের কাছ থেকে অভিশাপ পায় চন্দ্র। অভিশাপ পেয়ে চন্দ্রের আলো কমে যায়। ফলে সমস্ত বিশ্ব অন্ধকার হওয়ার ভয়ে, দক্ষের কাছে দরবার করেন বাকি দেবতারা। তখন দক্ষ জানান যে যদি মহাদেব শিবের পূজা করেন চন্দ্র, তাহলেই তাঁর আলো ফিরে আসবে। এরপর চন্দ্র শিবের পুজা শুরু করলে , তাঁর আলো ফিরে আসে, শিবশক্তির জ্যোতির আশির্বাদে। সেই কাহিনির স্মরণেই গুজরাতের সোমেশ্বর মন্দির। পুর্ণিমার রাতে এই মন্দির অসামান্য সুন্দর দেখতে লাগে।
মল্লিকার্জুন মন্দির
অন্ধ্র প্রদেশের রায়ালসীমায় রয়েছে মল্লিকার্জুন মন্দির। দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈলমে অবস্থিত একটি শিবমন্দির। এটি শিবের পবিত্রতম বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম। কথিত রয়েছে যে, একবার শিব, বিষ্ণু, ও ব্রহ্মার মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে বিতর্ক ওঠে, তখনই শিব ব্রহ্মা ও বিষ্ণুকে একটি পরীক্ষায় ফেলেন। যার পর শিব ত্রিভুবনকে একটি অনন্ত আলোর লিঙ্গ বা জ্যোতির্লিঙ্গ দ্বারা বিভক্ত করেছিলেন। শিবের সেই রূপকে এই মন্দিরে পূজা করা হয় বলে শোনা যায়। অনেকে বলেন, শিব পার্বতীর কথা শুনে কার্তিকের রাগের প্রেক্ষিতেও শিবের জ্যোতির উদয়মানতাকে এখানে পুজা করা হয়।
মহাকালেশ্বর মন্দির
উজ্জয়িনীর মহাকাশ্বরে মনে করা হয় শিব স্বয়ম্ভূ। অর্থাৎ তিনি নিজেই উত্থিত হয়েছেন। রূদ্রসাগরের তীরে অবস্থিত এই মন্দির । মনে করা হয়, দুশন নামের এক রাক্ষসের হাত থেকে উজ্জয়িনীবাসীদের মুক্তি দেওয়ার পর থেকে শিবকে এখানে মহাকালেশ্বর রূপে পুজা করা হয়।
ওমকারেশ্বর
মধ্যপ্রদেশের ওমকারেশ্বর মন্দিরও যথেষ্ট বিখ্যাত। মনে করা হয় রাজা মান্ধাতা শিব পূজার জন্য এই মন্দির স্থাপন করেন।
কেদারনাথ
বিখ্যাত এই জ্যোর্তিলিঙ্গকে নিয়ে মহাভারতের এক কাহিনি রয়েছে। শোনা যায়, পান্ডবরা নিজেদের পাপ স্খলন করতে শিব পূজা করেত চান। তবে তার জন্য তাঁদের প্রয়োজন হয় ,জ্যোর্তিলিঙ্গের। যে জ্যোর্তিলিঙ্গ তাঁরা দেখতে পান কেদারনাথে। সেই জ্যোর্তিলিঙ্গের স্থানেই গড়ে ওঠে মন্দির।
ভীমশঙ্কর
ষষ্ঠ জ্যোর্তিলিঙ্গটি ছিল মহারাষ্ট্র পুনের ভিমশঙ্করে। ভীম নামের এক দানবকে রক্ষা করে ভক্তদের রক্ষা করেন শিব। তারপর শিবের আরাধনার জন্য গড়ে ওঠে পুনের এই মন্দিরের জ্যোর্তিলিঙ্গ।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির
উত্তর প্রদেশের বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির হল সপ্তম জ্যোর্তিলিঙ্গ। মনে করা হয়, এই কাশী শহরটির মালিক স্বয়ং শিব। হিন্দু মতেল এই নগরী গড়ে ছিলেন শিবই। সেই বিশ্বাস থেকে এই জ্যোর্তিলিঙ্গের প্রতি ভক্তদের প্রবল আস্থা।
ত্রিম্বকেশ্বর
শোনা যায় স্ত্রী অহল্যাকে নিয়ে গৌতম মুণি মহারাষ্ট্রের এই স্থানে বাস করতেন। সেখানে নদী নিয়ে আসার জন্য শিবের কাছে প্রার্থনা জানান মুণি। তারপরই তাঁর সেই প্রার্থনা পূরণ করেন মহাদেব। সেই কাহিনিকে স্মরণ কেরি শিবের ত্রিম্বকেশ্বর মন্দির স্থাপিত হয়েছে। এখানে একটি বিশেবর পাথর খচিত মুকুটও রয়েছে , যা দেখতে ভিড় করেন অনেকেই।
বৈদ্যনাথ মন্দির
ঝাড়খন্ডের বৈদ্যনাথ মন্দির ঘিরেও রয়েছে অনেক পৌরাণিক কথা। একবার নিজের উপাসনায় শিবকে খুশি করেন রাবণ। প্রত্যুত্তরে শিবের কাছ থেকে একটি জ্যোতির্লিঙ্গ পান তিনি। শিব বলেন, যে এই লিঙ্গ লঙ্কা যাওয়ার আগে যেন রাবণ কোথাও না রাখেন। যেখানে রাখা হবে সেখানেই এটি প্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর লঙ্কা ফেরার পথে রাবণ সেই লিঙ্গকে একটি ছোট বালকের হাতে দিয়ে , তা ধরে রাখতে বলেন। সেই বালক লিঙ্গটি রেখে দেন ভূমিতে, আর সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় শিব মন্দির। পরে জানা যায় সেই বালকটি শিবপুত্র গণেশ। যে জায়গায় সেই জ্যোর্তিলিঙ্গ রাখা হয়, তার স্থান ছিল ঝাড়খণ্ডে ,যেখানে মন্দিরটি গড়ে উঠেছে।
নাগেশ্বর
গুজরাতের দ্বারকা রয়েছে এই জ্যোর্তিলিঙ্গের মন্দির। দৌরাকা রাক্ষসের হাত থেকে ভক্তকে রক্ষা করার পর শিবের মহিমার আরাধনায় স্থাপিত হয় নাগেশ্বর মন্দির।
রামেশ্বরম
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমেও জ্যোর্তিলিঙ্গ রূপে শিবের অবস্থান। এখানে শিবের দুটি লিঙ্গ রয়েছে। একটি লিঙ্গ পুজা করতেন সীতা, অন্যটি হনুমান দ্বারা পুজিত হত বলে কথিত রয়েছে। রাবণকে পরাজিত করে, এসে এখানেই শিবের আরাধনা করেন রাম। সেই থেকে রামেশ্বরমে শিবের দুটি জ্যোর্তিলিঙ্গ স্থাপিত আছে।
গ্রীষ্ণেশ্বর
ঔরাঙ্গাবাদের গ্রীষ্ণেশ্বর মন্দির মহারাষ্ট্রের অজন্তা ও ইলোরার খুবই কাছাকাছি অবস্থিত। এখানেও এক ভক্তের ডাকে সাড়া দিতে শিব নিজের মহিমা বিচ্ছুরণ করেন বলে পুরাণে বর্ণিত রয়েছে। এই মন্দিরকে কুসুমেশ্বর মন্দিরও বলা হয়।