দশ মাসের মধ্যে দু'বার নির্বাচন হওয়ার পরেও স্পেনে ক্ষমতায় এল সংখ্যালঘু সরকার
অনেক টালবাহনার পরে স্পেনে ক্ষমতায় এল মারিয়ানো রাক্সয়ের নেতৃত্বাধীন সংখ্যালঘু সরকার; প্রশাসন কি আদৌ চালাতে পারবেন বর্ষীয়ান এই নেতা?
গত শনিবার (অক্টোবর ২৯) স্পেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হলেন মারিয়ানো রাক্সয়। একষট্টি বছর বয়সী এই নেতার নির্বাচন দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঐদিন স্প্যানিশ সংসদে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৭০টি ভোট পিপলস পার্টির সভাপতি রাক্সয়ের পক্ষে পড়ে আর বিপক্ষে পড়ে ১১১টি। আটষট্টিজন সাংসদ ভোটদান থেকে বিরত থাকেন।
রাক্সয়ের নির্বাচন স্পেনের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ডামাডোলের অন্ত ঘটিয়ে সেখানে স্থিতিশীলতা আনবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। পর পর দু'টি নির্বাচনের পরেও কোনও রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছতে পারেনি স্পেন। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় নির্বাচন এড়ানোর নির্দিষ্ট সময়সীমার ঠিক দু'দিন আগে অনুষ্ঠিত হয় এই সংসদীয় ভোটাভুটি এবং জয়লাভ করেন রাক্সয়।
এই সপ্তাহেই তাঁর রক্ষণশীল সরকারের শপথ নেওয়ার কথা।
যদিও রাক্সয়ের সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবেই শপথ নেবে। স্প্যানিশ গণতন্ত্রের চার দশকের ইতিহাসে রাক্সয়ের সরকারই দুর্বলতম হতে চলেছে। তবে রাক্সয়ের নিজের উত্থানের জন্য তাঁকে ফিনিক্স পাখির সঙ্গেই তুলনা করছেন স্পেনের রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য রাক্সয়ের পুনর্নির্বাচন যে খুব মসৃণভাবে হয়েছে তা নয় । ভোটাভুটির আগে প্রায় ৪,০০০ প্রতিবাদী কণ্ঠ সংসদের সামনে জড়ো হয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। রাক্সয়ের দলকেও দুর্নীতির প্রশ্নে অভিযুক্ত করে।
এর আগে ২০১১ সালে রাক্সয় প্রথমবার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন যখন তাঁর পিপলস পার্টি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। সেই সময় থেকে রাক্সয় তাঁর দলের লাগাম শক্ত হাতে ধরেন যদিও এই সময়ে বেকারত্ব এবং দলকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে রাক্সয়ের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি যথেষ্ট ব্যাহত হয়।
এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর এবং ২০১৬ সালের জুনে দু'টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় স্পেনে এবং এর কোনওটিতেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনও দল। ২০১১ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া পিপলস পার্টি এই দু'টি নির্বাচনে যথাক্রমে ১২৪ এবং ১৩৭টি আসন পায় যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার (১৭৬) থেকে অনেকটাই কম। তবে আসনসংখ্যা কমলেও রাক্সয়ের দলই এই নির্বাচনগুলিতে সথেকে বেশি আসন পায়।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ক্ষমতায় এলেও রাক্সয়ের আসল পরীক্ষা শুরু হবে এরপরেই। সামনের দিনগুলিতে রাক্সয় তাঁর সরকারের বাজেট পেশ করবেন এবং সংসদে সংখ্যালঘু হওয়ার ফলে তিনি কতটা তাঁর লক্ষ্যে সফল হবেন তা বলা কঠিন।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির দাবিদাওয়ার পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থনৈতিক শর্তাবলীও তাঁকে মাথায় রাখতে হবে।
এছাড়া স্পেনের বহুচর্চিত ক্যাটালোনিয়ার স্বাধীনতাকামী আন্দোলন তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে, রাক্সয় তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের দ্বিতীয় দফায় কতটা সুবিধা করতে পারবেন সেটা সময়ই বলবে।