তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে তো চলছেই; কিন্তু পদ ছাড়তে রাজি নন দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি গুন-হে
রাষ্ট্রপতির বনধু সরকারের কাজে নাক গলিয়েছে, এই অভিযোগে একমাসের উপর উত্তাল পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি
দুই কোরিয়ায় আকাশ-পাতাল তফাৎ। উত্তর অর্থাৎ স্বৈরাচারী শাসক কিম জং উন-এর কোরিয়ায় শেষ কথা বলেন তিনিই। আর দক্ষিণ, অর্থাৎ গণতান্ত্রিক কোরিয়ায় শেষ কথা বলে মানুষ। আর বর্তমানে সেই গণতন্ত্রের তীব্র কণ্ঠস্বরই দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলের আকাশ বাতাস কাঁপাচ্ছে।
শনিবার (নভেম্বর ২৬) সে-দেশের হাজার হাজার নাগরিক দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি পার্ক গুন-হের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফের রাস্তায় নামলেন। অভিযোগ, গুন-হে-র এক বনধু সরকারের কাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এক মাসের ওপর চলা এই প্রতিবাদ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিকে রীতিমতো নড়িয়ে দিয়েছে। ১৯৮৭ সালের পর পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি এতবড় জনবিক্ষোভ আর দেখেনি বলে জানিয়েছেন ঐতিহাসিকরা।
প্রতিবাদের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন শনিবার আট থেকে ১৫ লক্ষ মানুষ জমায়েত হন গুন-হে-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।
এই প্রতিবাদ অবশ্য এখনও পর্যন্ত শান্তিপূর্ণই রয়েছে। মোমবাতি মিছিল এবং ব্যান্ড সঙ্গীতের মধ্যেই সীমিত থেকেছে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অবস্থান। প্রতিবাদীদের মধ্যে ছাত্র ছাড়াও অফিসকর্মী এবং পারিবারিক সদস্যরাও রয়েছেন। তাঁদের সকলের দাবি, গুন-হে-কে পদত্যাগ করতে হবে। শনিবার বিক্ষোভকারীদের একটি দল গুন-হে-র সরকারি বাসস্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায় কিনতু সূর্যাস্তের পর রাষ্ট্রপতির বাড়ির সামনে অবস্থান করা যাবে না -- এই আইনের জোরে তাঁদেরকে নিরস্ত করে কর্তৃপক্ষ।
গুন-হে-র বনধু চৈ সুন-সিল এবং তাঁর আরেক প্রাক্তন সহযোগী সম্প্রতি অভিযুক্ত হন নিজেদের সংস্থাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করার জন্য সরকারের মদতে দেশের বড় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়ে। গুন-হে অবশ্য এই নিয়ে দু'বার ক্ষমাও চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে কিনতু ইস্তফা দিতে অস্বীকার করেছেন। আর তার ফলে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। সরকারি প্রক্রিয়ামাফিক তাঁকে সরানোর দাবি তুলেছে বিরোধীপক্ষও।
একটি সাম্প্রতিক জনসমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে গুন-হে-র সমর্থন হু-হু করে পড়ার ছবি। গ্যালাপ কোরিয়ার ওই সমীক্ষা বলছে গত শুক্রবার (নভেম্বর ২৫) গুন-হে-র সমর্থনের হার নেমে গিয়েছে মাত্র এক শতাংশে আর তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ৯৩ শতাংশ মানুষ।
প্রয়াত দক্ষিণ কোরিয়ান রাষ্ট্রপতি পার্ক চুং-হি-র কন্যা গুন-হে তাঁর পিতার জনপ্রিয়তার জোরেই ২০১২ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে অনেকেরই অভিমত। চুং-হি তাঁর প্রায় দু'দশকের শাসনকালে দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত উন্নতি ঘটিয়েছিলেন বলে সে-দেশের প্রবীণ নাগরিকদের অনেকেই এখনও তাঁকে মনে রেখেছেন। ১৯৭৯ সালে তাঁর দেশের গোয়েন্দা প্রধানের হাতে খুন হন চুং-হি।
কিনতু গুন-হে সেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের মনে দাগ কাটতে পারেননি। প্রবীণরা তো বটেই, দেশের মাঝবয়সী এবং কমবয়সী নাগরিকদের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কম। আর এই সাম্প্রতিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে যে গুন-হে-এর গ্রহণযোগ্যতা কোনওভাবে বাড়বে, তার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। পাশাপাশি, ক্রমাগত প্রতিবাদ চলার ফলে দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে তাতেও সাধারণ মানুষের দেশের রাষ্ট্রপতির উপর ক্ষোভ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।