আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুতিন কড়া বার্তা দিলেন: আমাকে ঘাঁটাতে এসো না
আন্তর্জাতিক আদালতের এক্তিয়ার থেকে বেরিয়ে গেল রাশিয়া। পুতিনের দেশ যে ক্রমেই একটি বেপরোয়া অতিজাতীয়তাবাদী শক্তিতে পরিণত হচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
রাশিয়ার শাসক ভ্লাদিমির পুতিন যে সহজ-সরল বান্দা নন, তা প্রমাণিত হল আরও একবার। বুধবার (নভেম্বর ১৬) তাঁর নির্দেশে রাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট বা আইসিসি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল।
রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি পুতিন সরকারিভাবে তাঁর সরকারকে নির্দেশ দেন ১৯৯৮ সালে স্বাক্ষরিত হওয়া রোম চুক্তি থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিতে। রোম চুক্তির মাধ্যমেই প্রায় দু'দশক আগে আইসিসি-র প্রতিষ্ঠা করা হয় মানবজাতির বিরুদ্ধে হওয়া নানা অপরাধের বিচার করার জন্য।
রাশিয়ার অভিযোগ, আইসিসি বাস্তবে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আইসিসির আর কোনও আইনি এক্তিয়ারই রইল না রাশিয়ার উপরে।
২০০৮ সালে দক্ষিণ ওসেটিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী লড়াইকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং জর্জিয়ার মধ্যে সংঘাত বাধলে আইসিসি তার তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। রাশিয়ার মতে, এই সিদ্ধান্ত রাশিয়া-বিরোধী।
এদিনের বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায় যে ২০০৮-এর সেই সংঘর্ষে তদানীন্তন জর্জিয়ান কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ ওসেটিয়ায় হামলা চালিয়ে রাশিয়ান শান্তিরক্ষকদের হত্যা করার পরেও রাশিয়াকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়। ওই ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া এও জানায় যে আইসিসি যে তদন্ত করার কথা বলে, তার দায়িত্ব দেওয়া হয় জর্জিয়ান কর্তৃপক্ষকেই। অতএব, আইসিস-র উপর বিশেষ ভরসা রাখা যায় না, বলছে রাশিয়া।
রাশিয়া ১৯৯৮ সালে রোম চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও তাতে সিলমোহর লাগায়নি। আর এখন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে রাশিয়ার কোনও নাগরিকের বিরুদ্ধে আইসিসি পদক্ষেপ নিতে পারবে না। একমাত্র রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কোনও বিশেষ প্রস্তাব আনে সেহেতু। কিনতু পাশপাশি এটাও ঠিক যে নিরাপত্তা পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া সেরকম কোনও প্রস্তাবনায় ভেটো প্রয়োগ করে তা অবরুদ্ধ করে দিতে পারে।
রাশিয়ার এই সমস্ত পদক্ষেপ আদতে দেখায় যে অতীতের জারের রাশিয়ার মতো পুতিনের রাশিয়াও এক অতি-জাতীয়তাবাদী শক্তি হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করতে আর সে বেশি রাজি নয়। বারাক ওবামার শাসনকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই সক্রিয়তার অভাব দেখানোর সুযোগ নিয়ে পুতিন নিজের পেশী ফুলিয়েছেন। আর আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও সেই পেশী ফোলানোর কৌশলের অন্যতম। এসবের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমকে পুতিনের বার্তা: আমাকে ঘাঁটাতে এসো না, ফল ভালো হবে না।