পথ হারিয়েছেন কমিউনিস্টরা, কৃচ্ছ্রসাধন থেকে সরে বিলাসিতায় ঋতব্রতরা ডোবাচ্ছেন পার্টিকে
আজ কতটা বদলে গিয়েছে কমিউনিস্টদের চরিত্র! মুজফ্ফর আহমেদ থেকে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃচ্ছ্রসাধনের দৃষ্টান্ত থেকে জীবনযাত্রায় বিলাস ব্যসন। সত্যিই কতটা ফারাক আজকের কমিউনিস্ট পার্টিটায়।
আজ কতটা বদলে গিয়েছে কমিউনিস্টদের চরিত্র! মুজাফ্ফর আহমেদ থেকে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃচ্ছ্রসাধনের দৃষ্টান্ত থেকে জীবনযাত্রায় বিলাস ব্যসন। সত্যিই কতটা ফারাক আজকের কমিউনিস্ট পার্টিটায়। সহজ, সরল অনাড়ম্বর জীবনচর্যায় একটা সময় কতই না খ্যাতি ছিল পার্টিটার। সেই ট্র্যাডিশন এখন ভেঙে খান খান।
সহজ-সরল, অনাড়ম্বর জীবনচর্যার মাধ্যমে যাঁরা আদর্শের সোপান তৈরি করেছিলেন, সেই আদর্শের ধারক-বাহকরা আজ অনেকেই নেই, যাঁরা আছেন তাঁরা চলে গিয়েছেন অন্তরালে। নতুন প্রজন্ম আদর্শের ধারক হয়ে উঠতে পারেনি। তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভর করে কমিউনিজমকে শিকেয় তুলেছেন। পার্টির আদর্শ তাঁদের কাছে গৌন। তাই তো আজ আর সর্বক্ষণের কর্মীর উত্থান ঘটে না। কমিউনে থাকা কোনও পার্টি সদস্যের দেখা মেলে না নয়া প্রজন্মে।
ঘর ছেড়ে পার্টির কমিউনে আজীবন কাটিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। তালিকাটা বেশ দীর্ঘই হবে। প্রমোদ দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে মুজাফ্ফর আহমেদ, সমর মুখোপাধ্যায়দের কাছে কমিফন্স্ট পার্টিটাই ছিল তাঁদের পরিবারে। কিংবা সিপিআই-এর এ বি বর্ধনের কথাও ধরা যেতে পারে। দিল্লির অজয় ভবনে ছোট্ট একটি ঘরে তাঁর জীবনচর্যার জন্য একটি সুটকেসে জামাকাপড়, আর আলমারিতে বই।
সিপিএম নেতাদের পার্টির সম্মেলনে প্রায়ই বলতে শোনা যেত সমর মুখোপাধ্যায়ের কথা। তাঁর কৃচ্ছ্রসাধঘনের উদাহারণ পার্টির নেতারা প্রায়ই তুলে ধরতেন। মুজাফ্ফর আহমেদ জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি কাটিয়েছেন পার্টি অফিসে। বাকিটা কারাগারের অন্তরালে কিংবা গোপন আস্তানায়। নিজের বিলাস ব্যসেনর জন্য কোনওদিন কিছু করেননি। জীবনটাকেই উৎসর্গ করেছিলেন পার্টির জন্য। জীবনের সমস্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য এক লহমায় ত্যাগ করেছিলেন পার্টির জন্য।
অবশ্যই বলতে হয় বিমান বসুর কথা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি যিনি দীর্ঘদিন পার্টির সম্পাদকের পদও সমালেছেন। অকৃতদার। পার্টি অফিসই তাঁর ঘর। বেনিয়াপুকুরের কমিউনে তিনি দীর্ঘজিন কাটিয়েছেন। তারপর এজেসি বোস রোডের কমিউন। তারপর আজ পর্যন্ত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের পার্টি অফিসই তাঁর ঘর। আজও নিজের সমস্ত কাজ নিজেই করেন। তাই তো তিনি বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন, প্রমোদ দাশগুপ্ত মুজফ্ফর আহমেদ হরেকৃষ্ণ কোঙারদের কাছে থেকে শিক্ষা নিতে হবে বর্তমান প্রজন্মকে। কমিউনিজমের সেই শিক্ষাই ভবিষ্যতে চলার পথ মসৃণ করবে।
কিন্তু কোথায় সেই ডেডিকেশন। কোথায় সেই পার্টির প্রতি জীবনের নিবেদন। শিক্ষা নেননি আজকের কমিউস্টরা। তাই তো বারে বারে অস্বস্তিতে পড়তে হয় পার্টিকে। অনুশাসনের বাণী শোনাতে হয়। কিন্তু সেই বাণী শোনানোও সার। আজকের কমিউনিস্টরা কেউ কানে তোলে না সে কথা। সেই কারণেই ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় পার্টির সত্তা।
প্রমোদ দাশগুপ্ত, মুজফ্ফর আহমেদরা ভেবেছিলেন তাঁদের জীবনাদর্শকে পাথেয় করে বর্তমান প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে পার্টিটাকে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল অন্য। লক্ষ্মণ শেঠ থেকে শুরু রে অশোক পট্টনায়কদের বহিষ্কার করেও শেষ রক্ষা করা যয়ানি। দুর্নীতির যে বীজ পোতা হয়েছিল, সেই চোরাবালিতে নিমজ্জিত হতে বসেছে পুরো পার্টিটাই। বিনয় চৌধুরীরা সেই রোগ ধরেছিলেন অনেক আগেই। কিন্তু রোগের দাওয়াই দিতে পারেননি, তাঁরা। নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বিমান বসু-রা ঈআর রোগ সারাতে পারলেন কই।
ক্যানসার সম এই রোগ তো সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়বেই। একেবারে ভিতর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষয় রোগ। তাই তো বিতর্ক বাড়ালেও ভাবাবেগ হয় না দলের ভবিষ্যৎদের। তাঁরা একের পর এক ভুল করে যান আর বিতর্ক বাড়ান। অনুশাসনের ধার ধারেন না। পকেটে দামী পেন, হাতে বহুমূল্য ঘড়ি- থোড়াই কেয়ার। লোকে যা-ই বলুক, আমি চলব আমার মতো। আমার মতো করেই ময়দানে থাকব।
ঋতব্রত পেন-ঘড়ি খোঁচা খেয়ে ছুঁচোর বিষ্ঠা পর্বতে তুলে দিলেন। একেবারে চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দিয়ে বসলেন সমালোচককে। তাঁর কমিউনিস্ট সত্তা ধাক্কা খেল জোর। তবু চেতনা ফিরল না। সিপিএম জনসংযোগ হারিয়েছে। নেতারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এভাবে যতই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণব্রতী হন, মানুষের মন থেকে চিরতের মুছে যাওয়া আর বেশি দূরে নয়।