উরি-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানও কম দিশেহারা নয়, বোঝাচ্ছে ডন-এর প্রতিবেদন
উরিতে ভারতীয় সেনা ছাউনিতে হামলার ঘটনার পর ভারত জুড়ে তীব্র ক্ষোভে নড়েচড়ে বসেছে পাকিস্তানও। মঙ্গলবার সে-দেশের প্রথম শ্রেণীর দৈনিক 'ডন'-এ প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে (রেস্পন্ডিং টু আ ডেঞ্জারাস টাইম) ভারত এবং আফগানিস্তানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে ইসলামাবাদের কী কড়া উচিত, সেই সম্পর্কে বিশদে আলোচনা কড়া হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, উরি-পরবর্তী পরিস্থিতে পাকিস্তান বিশেষ স্বস্তিতে নেই।
কী লেখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে?
প্রতিবেদকরা জানাচ্ছেন যে সাম্প্রতিককালে, ভারত এবং আফগানিস্তানের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান পাকিস্তানের দিকে এক বিপজ্জনক রকমের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। যদিও তাতে ও লেখা হয়েছে যে ভারতের নরেন্দ্র মোদী সরকার কাশ্মীরের 'বিদ্রোহ' চাপা দিতেই পাকিস্তানের প্রতি বিষোদ্গার করছে, কিন্তু প্রতিবেদনটির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে পাকিস্তানের উৎকণ্ঠাও।
"উরির ঘটনার পরে ভারত কাশ্মীর উপত্যকা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানকে আরও খারাপ পরিণতির জন্যে তৈরী হয়ে থাকতে হবে," বলেছে প্রতিবেদনটি।
পাকিস্তান নিজের প্রতিরক্ষা মজবুত করুক
কিন্তু পাকিস্তান কি এক পারবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে? 'ডন'-এর লেখাটির মতে ইসলামাবাদের চীন বা ইসলামিক দুনিয়ার বিভিন্ন বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে কূটনৈতিক সমর্থন প্রয়োজন পড়লেও তার নিজের প্রতিরক্ষার কথা তাকে নিজেকেই ভাবতে হবে। তাতে বলা হয়েছে যে ইসলামাবাদকে এমন কিছু একটি নীতি নিতে হবে যার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করা যায় আবার কাশ্মীরের মানুষকেও কাছে টেনে রাখা যায়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতে সর্বাগ্রে উচিত কাবুল এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কে মেরামতি করা, বক্তব্য প্রতিবেদনটির।
ইসলামাবাদের আফগান নীতি বদলের পরামর্শ যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আস্থাভাজন হওয়া যায়
ইরাক এবং আফগানিস্তানের মার্কিন সামরিক অভিযানের নিন্দা করলেও আত্মসমীক্ষার সুরও স্পষ্ট প্রতিবেদনটির ভাষায়। তাতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন এবং কাবুলের ধারণা পাকিস্তান আফগানিস্তানে তালিবানদের মদত দিয়ে থাকে যদিও ইসলামাবাদ সবসময়েই চেষ্টা করেছে তালিবানদের আলোচনার টেবিলে বসাতে। তাতে পাকিস্তানের বদনামই হয়েছে বেশি।
"আমাদের উচিত এবার একটি নতুন তালিবান নীতি প্রণয়ন করা," বলা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। পাকিস্তানের উচিত আফগান তালিবানের হয়ে আর কোনও দায়িত্ব না নেওয়া আর আফগানিস্তানের নিজের বিষয় তার নিজের উপরেই ছেড়ে দেওয়া। যদি একান্তই প্রয়োজন পড়ে পাকিস্তানকে, তখন নয় ইসলামাবাদ এব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। বক্তব্য পরিষ্কার: অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ মামলায় নাক গলাতে গিয়ে নিজের অসুবিধা কোরো না।
প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে যে পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তানের মাটিতে হওয়া জঙ্গি কার্যকলাপের পিছনে যেন কোনওভাবেই তার কোনওরকম অবদান না থাকে। বলা হয়েছে 'ভালো' আর 'খারাপ' তালিবানের মধ্যে তফাৎ তৈরী করার অভ্যেস পাকিস্তানকে এবার ছাড়তে হবে।
যদি পাকিস্তান তার আফগান নীতিতে এই বদলগুলি আনতে পারে, তবে তা তার আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৈরী হওয়া ব্যবধানকে কমাতেও সাহায্য করবে বলে প্রতিবেদকদের মত। এমনকি, আফগানিস্তানের হাক্কানি গোষ্ঠীকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে লেখাটির মধ্যে দিয়ে। লক্ষ্য আর কিছু নয়: ওয়াশিংটনের কাছাকাছি ফেরা।
পাকিস্তানের ভাবমূর্তি বিশ্বের কাছে মলিন, স্বীকার করা হল
প্রতিবেদনটির মধ্যে দিয়ে স্বীকার করা হয়েছে যে তালিবানের সঙ্গে পাকিস্তানের মাখামাখি এবং কাশ্মীরের জঙ্গিবাদকে পাকিস্তান অতীতে উস্কানি দিয়েছে -- এমন ধারণা আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি যথেষ্ট মলিন করেছে। মুম্বই হামলায় অভিযুক্তদের বিচার বিলম্বিত হওয়াটাও পাকিস্তানের জঙ্গি-বিরোধী অবস্থানকে ক্ষুণ্ন করেছে বলে জানিয়েছে পাক দৈনিকের-এর প্রতিবেদনটি।
"ভারতের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া জরুরি"
পাকিস্তানের ভারত নীতি সম্পর্কে প্রতিবেদকদের বক্তব্য: "পাকিস্তানের উচিত ভারতের সঙ্গে বার্তালাপ চালিয়ে যাওয়া কারণ দু'টি দেশই পরমাণু শক্তিধর। তবে শান্তিপ্রক্রিয়ায় কাশ্মীরের নেতৃত্বকেও সামিল করা জরুরি যাতে কাশ্মীরিরা তাঁদের নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নিরূপণ করার সুযোগ পান।"