ওয়াশিংটন আর বেজিং-এর মধ্যে পেন্ডুলামের মতো দুলছেন ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রপতি!
বেজিং সফর শেষ করে বাড়ি ফিরেই ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রপতি দুতার্তে বললেন যে তিনি আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেননি; খামখেয়ালি এই রাষ্ট্রনেতাকে বিশ্লেষণ করে কী বলল চিনা সংবাদমাধ্যম?
ফিলিপিন্সের বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি রড্রিগো দুতার্তে কি চিন সফর শেষ করে নিজের দেশে ফিরেই ডিগবাজি খেলেন? চিনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস-এর একটি সম্পাদকীয়তে সেই আশঙ্কাই করা হয়েছে।
দুতার্তে, যিনি গত সপ্তাহে তাঁর বেজিং সফরকালে ঘটা করে ফিলিপিন্সের পুরোনো মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন ভবিষ্যতে ফিলিপিন্স রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে, পরে দেশে ফিরে উল্টো সুরে গাইতে থাকেন।
"মার্কিন বিদেশনীতির সঙ্গে ফিলিপিন্স নিজেকে জড়াবে না"
দুতার্তে বলেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ বলতে তিনি কূটনৈতিক সম্পর্ক শেষ করার কথা বলেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন যে ম্যানিলা এর পর থেকে আর ওয়াশিংটনের বিদেশনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াবে না।
চিনের পক্ষে ইতিমধ্যেই বলা হচ্ছে যে বেজিংয়ের থেকে অনুদান পাওয়ার পরেই ভোল বদলে যায় ফিলিপিন্সের এই বিতর্কিত রাষ্ট্রনায়কের, জানিয়েছে গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়। যদিও দুতার্তের এই দ্রুত অবস্থান বদল নিয়ে ঠাট্টা করতে ছাড়েনি চিনা মহল, কিনতু একই সঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশও করেছে।
"দুতার্তে রাতারাতি বদলে ফেলবেন তাঁর দেশের বিদেশনীতি, এমনটা চিনের কূটনৈতিক মহল বিশ্বাস করে না"
গ্লোবাল টাইমস-এর সম্পাদকীয়টির মতে, চিনের কূটনৈতিক বিশেজ্ঞরা বিশ্বাস করেন না যে দুতার্তে তাঁর মার্কিন নীতিতে রাতারাতি কোনও পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে। এমনকি, তিনি বুক বাজিয়ে তা ঘোষণা করলেও না।
তবে গ্লোবাল টাইমস এটা স্বীকার করেছে যে দুতার্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে আর রাজি নন। তাঁর সরকারের থেকে বলা হয়েছে যে ওয়াশিংটন যেমন বনধু ছিল থাকবে, কিনতু ম্যানিলার চেষ্টা থাকবে মার্কিন-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তোলা। এ ব্যাপারে যে দুতার্তে তাঁর আগেকার প্রশাসকদের থেকে আলাদা, তা মেনে নিয়েছে গ্লোবাল টাইমস।
"তবে দুতার্তের লক্ষ্য যে পরিষ্কার, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই"
সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে যে দুতার্তে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি -- যেমন মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া বা ফিলিপিন্সের মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতি আনতে পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া -- চিনের সঙ্গে ফিলিপিন্সের দূরত্ব কমিয়েছে। আর দুতার্তে সেই সুবিধেটা নিয়েই চাইছেন নিজের দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি করতে। এ প্রসঙ্গে বলা যেতেই পারে যে ফিলিপিনো রাষ্ট্রপতির অবস্থান খুবই পরিষ্কার -- তিনি নিজের দেশের স্বার্থকেই রেখেছেন সর্বাগ্রে।
চিনা পত্রিকাটি এও জানিয়েছে যে ফিলিপিন্স-এর এহেন নীতি পরিবর্তন দক্ষিণ চিন সাগরে মার্কিন রণনীতির পক্ষে এক বড় ধাক্কা। অন্যদিকে, চিনের পক্ষে এ সুসংবাদই বটে। তবে উপসংহারে গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদকীয়টি জানিয়েছে যে দুতার্তের মতো খামখেয়ালি রাষ্ট্রনেতার উপর খুব বেশিরকম নির্ভরশীল না হওয়াটাই বেজিং-এর পক্ষে ভালো।