পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ : রাজীব কুমারের এক সিদ্ধান্তে পুলিশের জালে কাদের খান
কলকাতা, ৩০ সেপ্টেম্বর : সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পরে অবশেষে পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় বড় সাফল্য পেল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির অদূরে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই ধর্ষণ মামলার মূল অভিযুক্ত কাদের খানকে। একইসঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে তার সহযোগী আলি খানকেও। [সাড়ে চার বছর পর পার্কস্ট্রিট গণধর্ষণকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত কাদের ও তার সহযোগী আলি গ্রেফতার]
ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের একটি দল দিল্লি থেকে কাদেরকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গিয়েছে। এদিন তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হবে। নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে কলকাতা পুলিশ।
এতবছর পরে কাদেরকে গ্রেফতার কলকাতা পুলিশের সাফল্যের মুকুটে নয়া পালক যোগ করল বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ এতদিন ধরে এই হাইভোল্টেজ মামলার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারার জন্য বহু গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল পুলিশকে। এবার বোধহয় তাদের অভিনন্দন জানানোর পালা।
তবে যিনি একেবারে নেপথ্যে থেকে কাদেরের গ্রেফতারিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিলেন তিনি কলকাতা পুলিশের নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ভোটের পরে দায়িত্বে এসে সমাধান না হওয়া মামলাগুলির ফাইল খুলে বসেন তিনি।
জানা গিয়েছে, তখনই তাঁর নজরে আসে কাদেরের বিষয়টি। সঙ্গে সঙ্গে এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিকদের ডেকে কথা বলেন তিনি। জানতে চান, কেন এতদিনেও কাদেরকে গ্রেফতার করা গেল না? কোথায় সমস্যা হচ্ছে, আর কী সাহায্য প্রয়োজন, এসবই জানতে চান তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে।
জবাবে তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানান, কাদেরকে গ্রেফতারের সবরকম চেষ্টাই তাঁরা করেছেন। তবে সাফল্য আসেনি। নিগৃহীতা সুজেট জর্ডনকে ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত কাদেরের নাগাল পাওয়া সম্ভব হয়নি।
একথা জানার পরই রাজীব কুমার নির্দেশ দেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। ডিসি সাউথ মুরলীধর শর্মার নেতৃত্বে একটি বিশেষ দলও গঠন করে দেন তিনি।
এরপরই ডিসি সাউথের নেতৃত্বে একটি দল কাদেরের খোঁজে হন্যে হয়ে পড়ে। তদন্তে নেমে নতুন সূত্র পায় পুলিশ। জানা যায়, গাজিয়াবাদে আলফা-১ এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নাম বদলে আত্মগোপন করে রয়েছে পার্কস্ট্রিট হামলার মূল অভিযুক্ত ও তার এক সহযোগী।
এরপরই পুলিশের দল দিন দশেক আগে গাজিয়াবাদে রওনা দেয়। যার খোঁজে পুলিশ এসেছে, সে কাদেরই কিনা তা নিশ্চিত হয় পুলিশ। তখনই জানা যায়, দিল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে জন্মদিনের পার্টি উপলক্ষ্যে যাচ্ছে কাদের।
এরপরে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে কাদেরের পিছু নেয় কলকাতা পুলিশের একটি দল। পাশাপাশি একটি দল গাজিয়াবাদে যে ফ্ল্যাটে কাদের ভাড়া থাকছিল, সেটিকে কব্জা করে ফেলে। দিল্লি গিয়ে জন্মদিনের পার্টি সেরে গাজিয়াবাদে ফ্ল্যাটে ফিরতেই পুলিশ গ্রেফতার করে কাদের খানকে। এর পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় আলি খানকেও। কাদেরের গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লি যাওয়া ও ফেরত আসাতেও নজরদারির জন্য পুলিশ ছিল বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে গাজিয়াবাদ থেকে কাদেরের গ্রেফতারির সঙ্গে সঙ্গে এই মামলার অভিযুক্তদের গ্রেফতারির সংখ্য়া পূর্ণ হল বলেই মনে করছে পুলিশ। এবার কলকাতায় নিয়ে এসে তাকে আদালতে যেমন তোলা হবে, তেমনই এতদিন সে কোথায় কীভাবে ছিল, কে তাকে আশ্রয় দিয়েছে, এইসব তথ্য জেরা করে বের করার চেষ্টা করবে পুলিশ।
এই কাদেরকে গ্রেফতারের জন্য কম কাঠখড় পোড়ায়নি কলকাতা পুলিশ। শুধু দেশের মধ্যে নয়, কাদেরের নাগাল পেতে বাংলাদেশ পর্যন্ত ধাওয়া করেছে পুলিশ। তবে বারবারই হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে কাদের। কখনও খবর এসেছে সে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছে। কখনও খবর এসেছে দুবাইয়ে আত্মগোপন করে রয়েছে কাদের। তবে সেগুলির কোনওটিই সঠিক ছিল না। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশের দক্ষতাতেই জালে ধরা পড়ল পার্কস্ট্রিট ধর্ষণের মূল অভিযুক্ত।