শুধু ভারত-পাক নয়, মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কেও তিক্ততা চরমে উঠেছে
বর্তমানে সারা বিশ্বে ন'টি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র রয়েছে । আর তার মধ্যে বেশ কয়েকটি এইমুহূর্তে বেশ উত্তেজিত । সুতরাং, বুঝতে অসুবিধা হয় না কী অস্থির সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি ।
শুধু ভারত-পাক নয়, মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্কের পারদও চড়ছে
জম্মু ও কাশ্মীরের উরিতে জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হানায় প্রায় কুড়িজন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারানোর পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ততা চরমে ওঠে। দু'দেশের সীমাতে সৈন্যবাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়; এমনকি পরমাণু যুদ্ধ হলে কার কতটা ক্ষতি হবে, তা নিয়েও চর্চা হয় বিস্তর । কিন্তু যে মুহূর্তে আমরা নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদ-এর আকচা-আকচি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত, আরও দু'টি পরমাণু দেশের মধ্যেও কিন্তু উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে এবং চিন্তিত দেখাচ্ছে আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে ।
আর এই দু'টি দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া । নানা বিষয় নিয়ে বারাক ওবামার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আজ তলানিতে ঠেকেছে । ইউক্রেন, নেটো নিয়ে সমস্যা তো ছিলই, এখন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ নিয়েও পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে ।
কয়েকদিন আগে আমেরিকা এবং রাশিয়া সিরিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি বাৰ্তালাপের প্রক্রিয়ার কথা ঘোষণা করলেও কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে । মার্কিনিরা সিরিয়াতে যুদ্ধবিরতি ক্ষিপ্ত রাশিয়া মার্কিনীদের সঙ্গে সাক্ষরিত বিভিন্ন পরমাণু-বিষয়ক চুক্তি এবং আলোচনা মুলতুবি করে দেয় । এছাড়া ওয়াশিংটনের মস্কোর বিরুদ্ধে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অভিযোগের তীর তো আছেই । তাই, সব মিলিয়ে, সমস্যা ক্রমেই বড় আকার ধারণ করছে ।
আর তা মেনে নিয়েছেন পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তিম রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভও । বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গর্বাচেভ সম্প্রতি জানান যে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা সারা বিশ্বের পক্ষেই বেশ "বিপজ্জনক" । ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের কৃতিত্ব অনেকটাই যাঁকে দেওয়া হয়, সেই গর্বাচেভ-এর এহেন শঙ্কাপ্রকাশ প্রমান করে পরিস্থিতি কতটা গম্ভীর।
পঁচাশি বছর বয়সী গর্বাচেভ, যিনি আশির দশকের মধ্য ও শেষভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন, বলেন ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে আলোচনা বন্ধ হয়ে যাওয়াটা একটা বড় ভুল । "এই দুই-দেশের মধ্যে কথোপকথন ফের শুরু হওয়া আশু জরুরি," তিনি বলেন ।
ঠিক তিরিশ বছর আগে রিকিয়াভিকে গর্বাচেভ লড়েছিলেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে শান্তিস্থাপনে
প্রসঙ্গত, আজ থেকে ঠিক তিরিশ বছর আগে ১৯৮৬ সালের এই অক্টোবর মাসেই আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকিয়াভিকে গর্বাচেভ এবং প্রয়াত মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগন-এর মধ্যে আলোচনা হয়। সেখানে গর্বাচেভ আগামী এক দশকের মধ্যে সমস্ত পরমাণু অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার পরামর্শ দেন । যদিও গর্বাচেভ-রেগন আলোচনা যে সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ হয়েছিল তা নয়, কিনতু তবুও এক বছর পর এই দুই দেশের মধ্যে সাক্ষরিত হয় পরমাণু-সম্পর্কিত আইএনএফ চুক্তি । ওয়াশিংটনে সম্পাদিত হওয়া এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ-এর পথে অনেকটাই এগোয় তদানীন্তন দুই সুপারপাওয়ার । হাঁফ ছেড়ে বাঁচে দুনিয়া ।
কিনতু সেই শান্তির পথপ্রদর্শক গর্বাচেভ বর্তমানের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দেখে ত্রস্ত । তিনি বলেন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ এবং পরিবেশরক্ষার মতো বিষয়গুলি নিয়ে আগে ভাবা প্রয়োজন । "বাকি বিষয় নিয়ে পড়ে ভাবলেও চলবে," বর্ষীয়ান এই নেতার অভিমত ।
কিন্তু গর্বাচেভের কথা শুনছে কে?
কিন্তু ওবামা বা পুতিন প্রশাসন এই ব্যাপারে বৃদ্ধ গর্বাচেভের কথা কতটা মন দিয়ে শুনবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে । বিশেষ করে, ওবামার রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতিতে যেভাবে রক্ষণাত্মক নীতি নিয়েছে, তাতে পুতিনের মতো আগ্রাসী নেতার বিশ্বজুড়ে প্রভাব বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্খা আরও বেড়েছে ।
ওয়াশিংটনের শত্রু (চিন, সিরিয়া) বা আগে মিত্র ছিল কিনতু এখন সম্পর্ক ভালো নয় (যেমন পাকিস্তান, ইসরায়েল, তুরস্ক) এমন দেশগুলির সঙ্গে সখ্য বাড়িয়েছে ক্রেমলিন । এবারের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছে জেনে বুঝেই যাতে তিনি জিতলে বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতাবাদের নীতি নেয় এবং তার পুরো ফায়দা লুটতে পারেন পুতিন । এই প্রবল শক্তির লড়াইয়ে গর্বাচেভ-এর মতো শান্তিকামী পরামর্শ যে বেশি লোকের কানে ঢুকবে না, তাতে আর আশ্চর্যের কী।