আইন নেই, নির্ভয়া কাণ্ডে মুক্ত নাবালক অপরাধী, তাহলে আসল দোষী কে?
নয়াদিল্লি, ২১ ডিসেম্বর : দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। আইন নেই এই ছুতোয় মাত্র তিন বছরের সাজা কাটিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই ঘটনার সবচেয়ে কনিষ্ঠ অপরাধীকে। আইনের ঊর্ধ্বে উঠে কিছু করা সম্ভব নয়, সমস্ত বিরোধ-প্রতিরোধ-হাহাকারকে ছাপিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এদিনের নির্দেশই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
নির্ভয়ার ঘটনাকে ব্যতিক্রমী আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। অথচ ঘটনার পর পাক্কা তিন বছর কেটে গেলেও মোট ছয় অপরাধীর এখনও সর্বোচ্চ সাজা হয়নি। এর মধ্যে কেউ মারা গিয়েছে। কেউ আবার নাবালক হওয়ায় জুভেনাইল আইনের ফাঁক গলে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে রবিবার। আর এখানেই প্রশ্ন তুলছেন নির্ভয়ার মা-বাবা, পরিজন থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজ।
যে ঘটনা ব্যতিক্রমী, তার ক্ষেত্রে তো সাজাও ব্যতিক্রমীই হওয়া উচিত। জুভেনাইল আইনে খুন, ধর্ষণ সহ সমস্ত অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা মাত্র তিন বছর থাকলেও কেন মুক্তি পাবে অপরাধী। কেন তার আরও সাজা হবে না?
অপরাধের ধরন যেখানে এতটা নারকীয়। আর নাবালক যে অপরাধী মুক্তি পেল সেতো সাবালকেরও বাড়া! সব অপরাধীদের মধ্যে কুকর্মে ও নৃশংসতায় সেই সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাহলে এসব দিক বিচারের মধ্যে কেন রাখা হল না?
দিল্লি মহিলা কমিশন আবেদন করেছিল যাতে অপরাধী কিছুতেই মুক্তি না পায়। সেই নিয়ে আবেদনও জানিয়েছিল। তবে মামলা গ্রহণ করলেও অপরাধীকে রবিবার মুক্তি দিয়ে এদিন সোমবার মামলা শুনেছে সর্বোচ্চ আদালত। আর সবদিক খতিয়ে দেখে আবেদনকারীদের সঙ্গে সমস্ত বিষয়ে সহমত পোষণ করেও নাবালক ধর্ষকের মুক্তি মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
এক্ষেত্রে আইনের না থাকাই সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, দোষটা আসলে কার? আদালত আইন তৈরি করতে পারে না। আইন তৈরি করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই আইন পাশ হওয়ার পরে তা লাগু হয় সারা দেশে।
ফলে নির্ভয়ার ঘটনা ঘটার পরে যদি জুভেনাইল আইন আরও কড়া কড়া যেত, অথবা ব্যতিক্রমী মামলাগুলিকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ করে দেওয়া যেত, তাহলে কি নির্ভয়ার বাবা-মাকে ফের সুবিচার চেয়ে রাস্তায় নামতে হত? হয়ত নয়।
নির্ভয়ার মা আশা দেবী কখনও হতাশায় হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, তো কখনও চোয়াল শক্ত করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু আসলে কি হবে সেটা কেউ জানে না। তবে একটা ধ্রুসত্য তিনি উপলব্ধি করেছেন, আর সেটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে আমজনতারও।
নির্ভয়া কাণ্ডের মতো ঘৃণ্য, পৈশাচিক ঘটনার বিচারে যদি ফাঁক থেকে যায়, সেই ফাঁক গলে যদি বেরিয়ে যায় অপরাধী। আর বিচারের বাণী শুনে নীরবে-নিভৃতে কাঁদতে হয় নিগৃহীতার পরিবারকে। তাহলে এদেশে সুবিচারের আশা করে কেন আদালতের কড়া নাড়বে আমজনতা? প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল।