ডুমুরের ফুল হয়েও সাংসদ মুনমুন চেষ্টা করছেন, সার্বিক উন্নয়ন অধরাই বাঁকুড়ায়
ভোটের আগেই আওয়াজ উঠেছিল, জিতলে ডুমুরের ফুল হয়ে যাবেন না তো? সঙ্গে সঙ্গেই শ্রীমতীর জবাব ছিল, ‘জিতলে অন্তত মাসে সাতদিন বাঁকুড়ায় থাকব। এখানকার মানুষের জন্য কাজ করব।’ সেই কথা তিনি রাখেননি।
'আমি
শ্রীমতী।
শ্রীমতী
দেববর্মা।
ওরফে
মুনমুন
সেন।
আমি
আপনাদেরই
একজন।
আপনাদের
সঙ্গে
এবার
নতুন
করে
সংসার
বাঁধতে
চাই।'
এই
বলে
আলাপের
সূচনা
করছিলেন
মহানায়িকা
সুচিত্রার
তনয়া
মুনমুন।
তারপর
সুচিত্রার
তারকা-ভাবমূর্তির
ছটায়
বাঙালির
আবেগ
উসকে
দিয়ে
তিনি
সাংসদ
হয়েছেন।
হয়তো
চেষ্টাও
করেছেন
সকলের
একজন
হয়ে
উঠতে।
কিন্তু
প্রশ্নটা
এবার
উঠেই
পড়েছে,
ভোটের
আগে
তারকা
ইমেজ
ভেঙে
বেরনোর
চেষ্টা
করলেও,
ভোট
ফুরোতেই
ফের
আকাশের
ইন্দ্রধনু
হয়ে
গিয়েছেন
মুনমুন।
প্রজাপতির
মতো
পাখা
আর
মিলতে
পারলেন
কই!
ভোটের
আগেই
আওয়াজ
উঠেছিল,
জিতলে
ডুমুরের
ফুল
হয়ে
যাবেন
না
তো?
সঙ্গে
সঙ্গেই
শ্রীমতীর
জবাব
ছিল,
'জিতলে
অন্তত
মাসে
সাতদিন
বাঁকুড়ায়
থাকব।
এখানকার
মানুষের
জন্য
কাজ
করব।'
সেই
কথা
তিনি
রাখেননি,
রাখা
সম্ভবও
ছিল
না।
তবে
প্রথমবার
সাংসদ
হয়েই
তিনি
যথাসাধ্য
কাজ
করার
চেষ্টা
করেছেন।
হয়তো
এলাকা
বদলে
যাবে
না
সেই
কাজে,
হয়তো
চমকে
দিতে
পারবেন
না,
কিন্তু
সদিচ্ছা
যে
আছে,
তা
বলাই
বাহুল্য।
বাঁকুড়া
জেলা
তৃণমূল
কংগ্রেসের
সভাপতি
অরূপ
খাঁ
বলেন,
জনপ্রিয়
অভিনেত্রী
সাংসদ
হয়েছেন
বাঁকুড়ায়।
তিনি
এই
ক'টা
দিনেই
উন্নয়নের
প্রতীক
হয়ে
দাঁড়িয়েছেন।
এই
ক'টা
দিনেই
সাংসদ
প্রচুর
উন্নয়নমূলক
কাজ
করে
ফেলেছেন
ইতিমধ্যে।
আরও
অনেক
কাজের
পরিকল্পনাও
সারা।
সাংসদ হওয়ার পর কী কী কাজ করেছেন?
- দহলা জোড়ঘাট শ্মশানের সংস্কারমূলক কাজ।
-
কৃষিকাজের
উন্নতির
লক্ষ্যে
খাতড়ার
গোরাবাড়ির
বংশনালা
ও
ভুরুডাঙা
মৌজায়
সাবমার্সিবল
প্রতিস্থাপন
করা
হয়।
- সাবমার্সিবল বসানো হয় গোবিন্দধাম, কাপিস্তা, বিক্রমপুর, ধাওয়ানি মৌজায়।
- খালোগ্রামের কেলাটিতে কজওয়ে অর্থাৎ উঁচু বাঁধের রাস্তা নির্মাণ করা হয় সাংসদ তহবিলের টাকায়।
- সাংসদ কোটার টাকায় এলাকার বহু স্কুলের উন্নয়ন করা হয়। কম্পিউটার, লাইব্রেরির উন্নয়নে বরাদ্দ হয় সাংসদ কোটার টাকা। হরমাসরা, মেজিয়া স্কুলের উন্নয়নে অর্থ দেন সাংসদ। দেউলগোড়া পিপিএ হাইস্কুলের উন্নয়নও করেন সাংসদ।
- মেজিয়ার তারাপুর ঝিল সংস্কার হয় সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলে।
- মেজিয়া স্কুল থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করা হয়।
- কৃষিকাজের সুবিধার্থে রানিবাঁধের মুচিকাটা নতুন বাঁধ থেকে খেড়িয়াবাদ পর্যন্ত খাল খনন করা হয়। গোবরডাঙায় সেচ নালা খনন করা হয়।
- ধানারা গ্রাম পঞ্চায়েতের টিকরপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নয়নমূলক কাজ করেন সাংসদ।
- কালীপুর-বিসিন্দা সেতু নির্মাণ করা হয় সাংসদ সহবিলের অর্থানুকূল্যে।
- ছাতনার শুশুনিয়ার ইকো ট্যুরিজম পার্কে শিল্প-বাজার প্রদর্শশালা ও কর্মকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। দুটি ইউনিট তৈরি করতে খরচ হয়েছে চার লক্ষ টাকা।
- শুশুনিয়ার মুরুতবাহা ইকো পার্কে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের লক্ষ্য পর্যকদের রাত্রিবাসের জন্য কুটির নির্মাণ করা হয়েছে।
- জোর্দা থেকে ভীমপুর পর্যন্ত ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের সংযাগকারী রাস্তা নির্মাণ হয়েছে সাংসদ কোটায়।
- বাংলা ব্লক অফিস মোড় ও সালিডহা বাসস্ট্যান্ডের সংস্কার হয়েছে। ব্যবস্থা হয়েছে পানীয় জল পরিষেবার।
- শীলাবতী নদীর পাড় বাঁধিয়ে শ্মশান ঘাট ও স্নান ঘাট নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে সাংসদ তহবিলের টাকা।
- আসানসোলের সঙ্গো সংযোগকারী তেঁতুলরাখ সেতুর নির্মাণ হয়েছে সাংসদের উদ্যোগে।
- ঢালাই রাস্তা নির্মাণেও বরাদ্দ করেছেন সাংসদ। মানকানালি থেকে মনসামেলা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ হয়েছে সাংসদ কোটায়। পাকা পিচের রাস্তা হয়েছে লাপুড়িয়া থেকে কেশিয়াড়া পর্যন্ত।
- বিসি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উন্নয়নের সাংসদ এগিয়ে আসেন। সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় সার্জারি মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিও দেওয়া হয় হাসপাতালে।
- ভেন্টিলেশন ব্যবস্থাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্স চালু করেন সাংসদ।
- গোবিন্দনগর হাসপাতালে রোগীর আত্মীয় পরিজনজনেদর জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হয়।
- তিনটি রিকশা স্ট্যান্ড আলোকিতকরণ করা হয় সাংসদ তহবিলের টাকায়। প্রধান প্রধান রাস্তার মোড়ে লাগানো হয় হাই মাস্ট লাইট।
- মুকুটমণিপুর শিশু উদ্যানে বসানো হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প।
- খাতড়ার সাহেব বাঁধে নির্মাণ হয়েছে কমিউনিটি হল।
- নাগরি জুনিয়র হাইস্কুলে প্রাচীর নির্মাণ হয়েছে সাংসদ তহবিলে। টিকরপাড়া পিএইচ সি-র প্রাচীরও নির্মাণ হয়েছে সাংসদকোটায়।
- মুচিঘাটা নতুন বাঁধ থেকে খেড়িয়া বাঁধ পর্যন্ত খাল সংস্কার হয়েছে।
- রানিবাঁধের রাজাকাটায় যাত্রী প্রতীক্ষালয়, সুলভ শৌচাগার, পানীয় জল পরিষেবা নির্মাণ করে দিয়েছেন সাংসদ।
- ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রধান প্রধান বাজারগুলিতেও বসানো হয়েছে হাই মাস্ট লাইট। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ পরিষেবাও চালু হয়েছে।
- এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পিএইচসি-র প্রাচীর নির্মাণে আর্থিক সহায়তা করেন সাংসদ।
কোথায় খামতি সাংসদের?
- দক্ষিণ বাঁকুড়ার রানিবাঁধ-সহ এমন কিছু এলাকা এই লোকসভা ক্ষেত্রে রয়েছে, যেখানে গরিব মানুষের বাস। তাঁদের জীবন-জীবিকা আজও অকুল পাথারে। এখন তো পশুপালনও বন্ধ। স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীর কাজও সেভাবে এগোচ্ছে না। জঙ্গলমহলের জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন। সাংসদের কিছু ভূমিকা থাকে।
- এলাকাবাসীর জীবন-মান উন্নয়ন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠার জন্য সে অর্থে কোনও ভূমিকা গ্রহণ করা হয়নি। উপভোক্তা তৈরি করে জীবনের মান উন্নয়নের পরিকল্পনা করা যেতই। কিন্তু বাম আমলে যা গুরুত্ব সহকারে হয়েছে, এখন সেভাবে হচ্ছে না। শুধু ভোট পাওয়ার জন্যই বিলিবণ্টন করা হচ্ছে।
- খাতড়া মহকুমা বাসস্ট্যান্ড আজও সংস্কার হয়নি। আধুনিক টার্মিনাস গড়ার কোনও উদ্যোগ নেই। নেই সেন্ট্রালবাসস্ট্যান্ড তৈরির পরিককল্পনাও।
- আজও খাতড়া স্টেডিয়ামও বিবর্ণ রূপে পড়ে রয়েছে। গ্যালারি নির্মাণ, মাঠের মানোন্নয়নের কোনও পরিকল্পনা আজ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। সাংসদ তহবিলের টাকায় একটা স্টেডিয়ামকে আধুনিক করা যেতেই পারত। সেই চিন্তাভাবনা কোথায়?
- এলাকায় সুইমিংপুল তৈরি বা কিছু গঠনমূলক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ধরা পড়েনি। সাংসদ যদি এলাকায় তাঁর স্বাক্ষর রাখতে চাইতেন তাহলে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা করতে পারতেন।
- সেচের জলের অভাব প্রকট এলাকায়। বোরো চাষে প্রতিবার বিলম্ব ঘটে। এবার যদিও বা হয়েছে, কিন্তু কংসাবতীর বাঁধের আধুনিকীকরণ হয়নি। এই কংসাবতীর বাঁধ নির্মাণের সুচারু পরিকল্পনাই বাঁচাতে পারত এলাকাকে। কৃষকদের সুদিন ফিরতে পারত এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হলে।
- ক্যানেল সিস্টেম একেবারেই ভেঙে পড়েছে এলাকায়। এ ব্যাপারেও কোনও পরিকল্পনা কখনও করা হয়নি। ক্যানেল সিস্টেম গড়ে ওঠেনি নতুন করে। ফলে প্রতি চাষে ভুগছেন মানুষ।
- পর্যটনকেন্দ্র উন্নয়নের ভাবনা-চিন্তাও নেই সাংসদের মধ্যে। মুকুমণিপুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন ক্ষেত্র রয়েছে। তা নিয়ে পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট।
- এখন ঝিলিমিলি মাওবাদীমুক্ত। আগে এখানে সমস্যা ছিল, কিন্তু এখন এই ঝিলিমিলক সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়নি। শুধু প্রস্তাবেই সীমাবদ্ধ থেকেছে নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার বিষয়টি। পর্যটকদের জঙ্গলমহল দেখানোর আশ্বাস এখনও বিশবাঁওজলে।
- বাঁকুড়ার একটা বড় অংশ বনসম্পদ। সেই বনসম্পদ রক্ষা করার কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আজও জানে না এলাকাবাসী। একটা সময় বনসম্পদ রক্ষা করার জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এখন সেসব উধাও।
- ছাতনা থেকে মুকুটমণিপুর রেললাইনের কাজের অগ্রগতি এতটুকু এগোয়নি। প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে যে রেললাইন সম্প্রসারণের প্রস্তাব জমা পড়েছিল, সেই কাজ শুধু মাটি ফেলা রাস্তা তৈরি পর্যন্তই হয়ে রয়েছে। সাংসদ এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি।
- পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন ওই রেল লাইন বিঞ্চুপুর দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুই পর্যটনক্ষেত্রকে এক রেললাইনে বাঁধতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই কাজও এগোয়নি এতদিনে।
- চামড়া শিল্প, বাসন শিল্প এলাকায় প্রসিদ্ধ। কিন্তু সেই শিল্পের মানোন্নয়নে মাথা ঘামায়নি কেউ। এগিয়ে আসেননি কোনও জন প্রতিনিধিই।
কী বলেছেন বিরোধীরা?
'আমি তোমাদেরই লোক' বলে ভোট নিয়ে গিয়েছিলেন সাংসদ। কিন্তু কতটা মানুষের পাশে থাকতে পেরেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। তাঁকে কখনই এলাকায় দেখা যায় না। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি আজ পর্যন্ত। কোন কাজ হচ্ছে ওনার তহবিল থেকে? একটাও দীর্ঘ মেয়াদি কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ হয়নি। শুধু কয়েকটা রাস্তায় আলো জ্বলেছে আর ওয়াটার সাপ্লাইয়ের কিছু কাজ হয়েছে। সিপিএম জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, যেটুকু কাজ হয়েছে, তা কোথা থেকে হয়েছে, কোন তহবিলের টাকা খরচ হয়েছে, তা নিয়েও ধন্দ এলাকায়। খাতড়ায় এমন একটা কাজের বোর্ড রয়েছে, যার একদিকে লেখা সাংসদ তহবিলের টাকায় উন্নয়ন, অন্যদিকে লেখা অন্য তহবিলে ওই কাজ হয়েছে।
কী বলছেন সাংসদ?
ভোটে দাঁড়ানোর জন্য বাঁকুড়াকে বেছে নিয়েছিলাম, কারণ মা বলতেন বাঁকুড়া খুব শিক্ষিত এলাকা। এখানে মাটির গন্ধ রয়েছে। এখানে রয়েছেন অনেক আদিবাসী মানুষ। তাঁদের দেখলেই মনে হয়, তাঁদের সঙ্গে আমার যেন কতদিনের পরিচয়! আমি তাঁদের উন্নয়নেই কাজ করতে চাই। মমতাদি আমাকে সুযোগ দিয়েছেন, তাই বাঁকুড়ার জন্য, বাঁকুড়ার মানুষের জন্য কাজ করতে আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। আগামী দিনে আরও কাজ করব।