'সেফ ড্রাইভ' কি আদৌ হচ্ছে যে 'সেভ লাইফ' হবে? নেতানেত্রীরাই কি নিয়ম মানছেন?
মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং যখন সচেষ্ট মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, তখন তাঁর দলের নেতারা কতটা নিয়ম মেনে চলছেন? এই প্রশ্ন কিন্তু এবার উঠতে শুরু করেছে।
বেশিদিন হয়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথ নিরাপত্তার উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর রাজ্যের পরিবহণ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন 'সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ' প্রচার করতে, পই-পই করে বলেছেন নিয়ম মেনে, সতর্কতা অবলম্বন করে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে। কিন্তু এই উদ্যোগের মাসখানেকের মধ্যেই গাড়ি উল্টে আহত হলেন মুখ্যমন্ত্রীরই ভাইপো এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় যুবনেতাও।
প্রশ্ন উঠছে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং যখন সচেষ্ট মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে, তখন তাঁর দলের নেতারা কতটা নিয়ম মেনে চলছেন?
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর অনেকেরই জিজ্ঞাসা : পিছনের সিটে বসলেও কি অভিষেক সিট বেল্ট পড়েছিলেন? তাছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যখন গাড়িতে সফর করেন, তখন সামনের আসনে বসলেও কি তিনি সিট বেল্ট বাঁধেন? অভিষেকের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির সামনের আসনে বসার কারণে সিট বেল্ট এবং এয়ারব্যাগের কৃপায় বেঁচে যান তৃণমূল নেতার ব্যক্তিগত সচিব এবং গাড়ির চালক। কিন্তু সার্বিকভাবে নিয়ম মানেন কতজন?
আসলে মুখে যতই রাজা-উজির মারা হোক না কেন, কাজের ক্ষেত্রে আমরা সুরক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত উদাসীন। ওই আইনকে টপকাতে যেটুকু না করলেই নয়, ততটুকুই। আর এই বিপুল সংখ্যক 'উদাসীন' মানুষজনকে শুধু লালচক্ষু দেখিয়ে পথে আনা সম্ভবপর ব্যাপার নয়। গাড়ির পিছনের বেল্টে সিট বেল্ট পরে বসা তো দূরের কথা, সেখানে আদৌ সিট বেল্ট থাকে কিনা, তাও জানেন না বহু লোকই।
এছাড়া গতির ব্যাপারটিও রয়েছে। এখন যদিও ভারতে জাতীয় সড়কগুলি আগের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে, কিনতু পাশাপাশি গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে হু-হু করে আর তার উপর, সবাই যে সবসময়ে ঠিকঠাক নিয়ম মেনে জাতীয় সড়কে চলেন তাও নয়। আর প্রচণ্ড গতিতে চলা অবস্থায় সামান্য একটু ভুলচুক হলেই তার পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। এয়ারব্যাগের ভরসায় থেকেও উল্কাগতিতে গাড়ি ছোটানোর মধ্যে কোনও বীরত্ব আছে বলে তো মনে হয় না।
অনেকে বলছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ির চালক নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আর তাই সামনের গাড়িটিকে দেখতে পাননি বলে সংঘর্ষ হয়েছে। এটিও আমাদের অসচেতনতার আরেকটি দিক। আমরা কি দূরপাল্লার ভ্রমণের সময়ে যথেষ্ট বিশ্রাম নিয়ে গাড়ি চালাই? আর সরকারি ক্ষেত্রে তো তাড়াহুড়োর চোটে তা আরওই হয়ে ওঠে না। আর তার পরিণাম এদিন দেখা গেল সিঙ্গুরের কাছে।
আমরা নিজেরা সাবধান এবং সচেতন না হলে পথদুর্ঘটনার সংখ্যাটি বিশেষ কমবে না, সে মুখ্যমন্ত্রী যত চেষ্টাই করুন না কেন। কিন্তু আরও বড় ব্যাপার হল : পথ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন করতে আগে সচেতন হতে হবে নেতানেত্রীদেরই। সে-ব্যাপারে কি তাঁরা যথেষ্ট সচেষ্ট?