শুধু আতসবাজি তৈরি করে দুঃখ ঘোচে না, সঙ্কটে মালপাড়ার নিরন্ন বাজি কারিগররা
দীপাবলীর বাজির বাজারকে কেন্ত্র করেই মালপাড়া বাজি কারিগরদের রুটি-রুজি। কিন্তু শব্দবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বাজি-বাজার মন্দা, ঘোর সঙ্কটে এই গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাজি কারিগর।
''... অথচ নিজের ঘরেই নেই বাতি জ্বালাবার সামর্থ্য, নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।'' কবির এই কথা বেশ খেটে যায় উলুবেড়িয়ার মালপাড়ার নিরন্ন বাজি কারিগরদের ক্ষেত্রেও। আলোর উৎসব কালীপুজোর রাতে দীপাবলীর বাজির বাজারকে কেন্ত্র করেই এঁদের রুটি-রুজি। কিন্তু শব্দবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় বাজি-বাজার মন্দা, ঘোর সঙ্কটে এই গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাজি কারিগর।
এবার শব্দের মাত্র বাড়ানোর একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। আশার আলো সঞ্চার হয়েছিল প্রায় নিরন্ন বাজি কারিগরদের মনে। অচিরেই পূর্ব নির্দেশিকা জারি থাকার নিদানে আবারও উধাও হাসি।
অন্নের জোগাড় নেই। নেই লজ্জা নিবারণের জন্য পরনের কাপড়ের জোগান। পুজোর মরশুম এলেই স্বভাবতই এঁদের মনটা নেচে ওঠে। বাড়ির ঝাঁটা-জুতো বাদে সমস্ত কিছুই - থালা, ঘটি, বাটি বন্ধক দিয়ে মালপাড়ার শতাধিক গরিব পরিবারের সদস্যরা নেমে পড়েন বাজির কারবারে। বন্ধকের টাকায় কাঁচামাল কিনে শুরু হয় বাজি তৈরির কাজ।
আট থেকে আশি, শিশু থেকে মহিলা সবাই হাত লাগায় এই বাজি তৈরিতে। উলুবেড়িয়া দু'নম্বর ব্লকের খলিসানি মালপাড়ায় বাড়ি বাড়ি চলে এই কারবার। তঁদের আশা, বাজি বিক্রি করে দু'পয়সা লাভ করবেন। বন্ধকের জিনিসপত্র ছাড়িয়ে হাতে থাকবে বেশ কিছু দিনের সংস্থান। কিন্তু সেই আশা যে দুরাশাই। মালপাড়ার বাজি কারিগর জাকির হোসেন, জাহানারা বেগম, শেখ মহিন, শেখ ইসরায়েল বলেন, বিক্রিই নেই আতস বাজির। ২৫ শতাংশ বাজিও বিক্রি হয়নি এবছর। কী করে বন্ধকী সামগ্রী ছাড়াবেন দরিদ্র ওই কারিগররা সেই আতঙ্কে বিনিদ্র রজনী কাটছে এখন থেকেই।
গরিব এই কারিগররা শব্দবাজি তৈরি করার সাহস করেন না পুলিশের ভয়ে। অথচ বাজির ক্রেতারা এসে আগে খোঁজ করেন শব্দবাজিরই। আতসবাজিরই হাউই, রংমশাল, তুবড়ি, ফুলঝুরি, প্যারাসুটের বিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। প্রতিবারই ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য একটা না একটা নতুন ধরনের আতসবাজি উদ্ভব হয়।
এবারের আকর্ষণ জেনারেটর তুবড়ি। জেনারেটর তুবড়ি। জেনারেটর চলতে থাকলে যে আওয়াজ হয়, এই তুবড়ি পুড়লে সেই শব্দই হবে। তবুও আতসবাজির কারবার যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়। এলাকার তৃণমূল নেতা অরুণ দাস বলেন, এই গরিব বাজি কারিগরদের কথা কেউই ভাবেন না। এঁরা যাতে সুষ্ঠুভাবে এই ব্যবসা করতে পারেন, পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দেওয়ারও কেউ নেই। সরকার এই নিরন্ন কারবারিদের সাহায্যের জন্য আজও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। শব্দবাজির বিক্রি কিন্তু বন্ধ হয়নি, বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই গরিব কারিগরদের কারবার।
আলোর উৎসব তো আদতে শব্দেরও। তাই কালীপুজো হবে, শব্দবাজি ফাটবে না, তা তো হয় না। শব্দবাজি ফাটছে। বড় ব্যবসায়ীরা আতসবাজির আড়ালেই এই শব্দবাজি বিক্রি করছেন। অথচ মার খাচ্ছেন নিরন্ন বাজি কারিগররাই। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় অনেকেই কিনে এনে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। তাঁদের তৈরি আতসবাজির বিক্রি নেই।