প্লেনামে পাল্লা ভারী একলা চলো তত্ত্বের, আসন্ন উপনির্বাচনেই ‘মধুচন্দ্রিমা’ শেষ হতে পারে কং-সিপিএমের
জোট বিতর্ক পিছু ছাড়ল না এবারের প্লেনামেও। সিপিএম পার্টির কলকাতা প্লেনামে পাল্লা ভারী হল সেই একলা চলো তত্ত্বেরই। পার্টির অধিকাংশ নেতৃত্বের জোট-বিরোধী সওয়ালে কারাত শিবির উচ্ছ্বসিত হলেও, সুর্য-বিমানরা এখনও কংগ্রেসের সঙ্গে তালমিল রেখে চলারই পক্ষপাতী।
সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে আয়োজিত পার্টি প্লেনাম। সেখানে দিনভর উত্তপ্ত আলোচনা কংগ্রেস সঙ্গ নিয়ে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পার্টি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের অনেকে। অন্তত ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি তা-ই ইঙ্গিত করছে।
গত বিধানসভা ভোটের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, আখেরে লাভ হয়েছে কংগ্রেসের৷ ভবিষ্যতেও লাভ হবে কংগ্রেসেরই। আর আঙুল চুষতে হবে সিপিএমকে। পক্ষান্তরে ফ্রন্ট সঙ্গীরাও বেঁকে বসবে। তাই কংগ্রেস-সঙ্গ ত্যাগ করে একলা চলাই শ্রেয়।
ভোট পরবর্তী পর্যালোচনায় সবাই একটা ব্যাপারে সহমত যে, জোট করলেও কংগ্রেস সমর্থকরাও অধিকাংশই সিপিএম বা বাম প্রার্থীদের ভোট দেননি। ভবিষ্যতেও এই ট্রাডিশনই জারি থাকবে। তাই জোট ভেঙে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ফের শক্ত জায়গা তৈরি করতে হবে। মমতার ভুলত্রুটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বের মত এমনটাই।
এ ব্যাপারে তারা রাজ্য নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলেছে অনেকেই৷ জোট করে রাজ্য পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব ভুল করেছে বলেও অনেকের মত। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে যে একপ্রকার দলের নীতিই বিসর্জন দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারেও মত ব্যক্ত হয়েছে প্লেনামে৷ বর্তমানে রাজ্য পার্টি যে পন্থা অবলম্বন করে এগিয়ে চলেছে, তাতে ভবিষ্যতে পার্টির তৃণমূলস্তরে শৃঙ্খলা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
শুক্রবার থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে দু'দিনের সাংগঠনিক রাজ্য প্লেনাম৷ নিয়মমতো খসড়া রিপোর্ট পেশ করে পার্টির প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু আন্দোলনকে হাতিয়ার করার কথা বলেন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে। সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর বার্তাও দেন তিনি। উঠে আসে জোনাল কমিটি তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ। তা নিয়েও বিতর্ক হয় প্রবল।
এদিকে রাজ্য সিপিএম এখন এমনই কোণঠাসা অবস্থায় চলে গিয়েছে, তাতে শেষপর্যন্ত সূর্য-বিমানের জেদ কতদিন টিকবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েই যায়। তাই আসন্ন লোকসভার উপনির্বাচনেই কংগ্রেস-সিপিএমের মধুচন্দ্রিমা শেষ হতে পারে। বিধানসভা ভোটের আগে যেভাবে যৌথ কর্মসূচি করেছিল সিপিএম ও কংগ্রেস, তা এখন আর দেখা যাচ্ছে না৷ আলাদাভাবেই মিটিং-মিছিল করছে কংগ্রেস ও সিপিএম৷
পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও জোট হলেও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও রাজ্যে চতুর্মুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনাই প্রকট হচ্ছে ক্রমশ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে জোটের সেই ছবিটা এখন ম্লান। কংগ্রেসের অন্দরেও এই জোট নিয়ে তৈরি হয়েছে অনীহা। কেননা যেভাবে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে এবং বেশিরভাগ দলত্যাগী নেতাই যেভাবে সিপিএমের সঙ্গে এই গাঁটছড়া বাঁধাকে দায়ী করছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলায় একলা চলোর পক্ষেই বিরোধী শিবিরের দুই প্রধান দল হাঁটবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
কোচবিহার ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে আসন্ন উপনির্বাচনেও পৃথক প্রার্থী দিতে পারে কংগ্রেস-সিপিএম। তাই ২০১৯ নয়, হয়তো আসন্ন উপনির্বাচনেই পতন ঘটবে কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের।