ট্রাম্পের মন বুঝতে দুগ্গা দুগ্গা বলে ময়দানে নামলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে
নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বার বার বলেছেন যে তিনি আমেরিকার স্বার্থ দেখবেন সবার আগে আর তার জন্য যদি ওয়াশিংটনের পুরোনো মিত্রদের থেকে সরে আসতে হয়, তাতেও তিনি রাজি
নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বার বার বলেছেন যে তিনি আমেরিকার স্বার্থ দেখবেন সবার আগে আর তার জন্য যদি ওয়াশিংটনের পুরোনো মিত্রদের থেকে সরে আসতে হয়, তাতেও তিনি রাজি
প্রথম থেকেই তাঁকে নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলির। এবারের মার্কিন নির্বাচনের প্রচারের সময়ে যেভাবে তিনি বার বার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ক্ষমতায় এলে তিনি ওয়াশিংটনকে তার প্রথাগত বিদেশনীতি থেকে সরিয়ে অন্য পথে চালনা করবেন, তাতে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে অনেক বনধু রাষ্ট্রেরই।
আর এবার সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যি সত্যি মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন জেতার পরে দুগ্গা দুগ্গা বলে মাঠে নেমে পড়ল ওয়াশিংটনের অন্যতম বড় বনধু টোকিও। সংবাদ সূত্রের খবর, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সহযোগিতার ব্যাপারে কথা বলবেন বলে সরকারিভাবে জানা গিয়েছে।
জাপান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ট্রাম্প এবং আবের মধ্যে ইতিমধ্যেই টেলিফোনে কথা হয়েছে এবং দু'পক্ষই তাঁদের দেশের মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা আরও দৃঢ় করার কথা বলেছে।
আবে পেরুতে আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনোমিক কো-অপারেশন বা আপেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথেই ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গিয়েছে। জাপানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসন গুছিয়ে ওঠার আগেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পুরোনো মৈত্রী ঝালিয়ে নিতে চায়।
ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারে বার বার বলেছেন যে তিনি সবার আগে আমেরিকার স্বার্থ দেখবেন; এমনকি পূর্ব এশিয়াতে মিত্র দেশ জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়াতে অবস্থিত মার্কিন সৈন্যবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ওই দেশগুলিকে বেশি করে নিতে বলেন। এই সমস্ত সামরিক মিশন চালানোর কারণে মার্কিন কোষাগারে বিপুল টান পড়ছে বলে তিনি সেনা সরিয়ে নেওয়ারও আভাস দেন আর তাতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে টোকিও বা সিওল।
কারণ, আগ্রাসী চিন এবং পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে সামলাতে মার্কিনিদের ছাতার তলায় আশ্রয় বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিভাষায় যাকে বলা হয় 'অফশোর ব্যালান্সিং' তাদের অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, ১২ দেশীয় ট্রান্স-প্যাসিফিক ট্রেড-এর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আপত্তিও ভাবনায় ফেলে ওই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান ক্যাম্পাসের এশিয়ান স্টাডিজ-এর প্রধান জেফ্রি কিংস্টন রয়টার্সকে বলেন যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তা এবং বাণিজ্য -- এই দুই বিষয়ের উপরেই মার্কিন সহযোগিতার প্রশ্নে উদ্বিগ্ন।
এখানে প্রসঙ্গত বলা ভালো, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে বরাবর সওয়াল তুলে আসা জাপান সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে পরমাণু অস্ত্র-মুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলার একটি উদ্যোগকে সমর্থন জানাতে রাজি হয়নি। উদ্দেশ্য, মিত্রকে না চটানো। কিনতু তাতেও কি কার্যসাধন হবে? প্রশ্ন এখন সেটাই।
রাজনীতি বা বিদেশনীতিতে নবাগত ট্রাম্পকে বিভিন্ন বাস্তব বিষয়ে বোঝানো যে সহজ নয়, তা মেনে নিচ্ছেন জাপানের আধিকারিকরা। এব্যাপারে যে পরাজিত প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে সমঝোতা করা যে অনেক বেশি সহজ ছিল, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত তাঁরা পোষণ করেননি।
আবে তাই ট্রাম্পের জয়ের খবর আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে অভিবাদন জানান এবং ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর সাফল্যের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি, জাপানের তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে যে ব্যবসায়িক লাভের ভাষায় ট্রাম্পকে আমেরিকার কাছে তার নিজের গুরুত্ব বোঝালে তিনি নিশ্চই বুঝবেন।
জাপানের তরফ থেকে চেষ্টার কোনও কসুর করা হচ্ছে না ট্রাম্পকে বোঝাতে। এখন তিনি কতটা বোঝেন সেটাই দেখার।