মোদীর নোট বাতিলের বিরোধিতা করা মমতার পক্ষে যতটা সোজা, অন্যদের পক্ষে নয়
মমতা চেষ্টা করছেন ঠিকই কিনতু তাঁর মতো মোদীর নোট বাতিলের নীতির বিরোধিতা করা উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের দলগুলির পক্ষে বেশ কঠিন
তাঁর কাছে এ এক বিরাট সুযোগ জাতীয় রাজনীতিতে মাথা তোলার। নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব তিনি কিনতু তিনি এও জানেন যে তাঁর একার পক্ষে জাতীয় স্তরে কিছু করে ওঠা কঠিন। আর তাই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোদী-বিরোধী জোটকে শক্ত করতে।
কিনতু এখনও পর্যন্ত মমতা জোটের কাজটি গুছিয়ে উঠতে ব্যর্থ। প্রথমে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে অনেক দলই বেঁকে বসে। আর এখন শিবসেনাকে পাশে পেতেই তৃণমূলের হাতছাড়া হয় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। এদিকে বিজেপিও চেষ্টা করছে এনডিএ শরিক শিবসেনাকে নিরস্ত করতে। আর শেষ পর্যন্ত যদি উদ্ধব ঠাকরের দল সরে যায়, মমতার তৃণমূল চেষ্টা করবে ফের কেজরিওয়ালকে ফিরে পেতে। আপাতত চলছে এই সমীকরণ তৈরির লড়াই।
মোদীর আড়াই বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে বিরোধীরা সবচেয়ে বড় সুযোগ যদি পেয়ে থাকে তাই এই নোট বাতিলের পর্বেই। কিনতু, বড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এখনও একজোট হয়ে উঠতে পারলেন না। নোট বাতিলের জন্য জনগণের হয়রানি না নোট বাতিল নীতিরই বিরোধিতা তাঁরা করবেন, সেটাই এখনও ঠিক নেই। অথচ তাঁদের মনে রাখা দরকার যে যতক্ষণ এই ডামাডোল চলছে, ততক্ষণই তাঁদের সুযোগ জীবিত থাকবে। এই সময়ে তাই বেশি প্রয়োজন রাস্তায় নেমে জনমত তৈরি করা। একে ওপরের আঁচল ধরে টানাটানি পরে করলেও চলবে।
মমতা বা কেজরিওয়ালের মতো আঞ্চলিক নেত্রী-নেতাদের সুবিধে হচ্ছে যে এই মুহূর্তে আর কংগ্রেস দ্বিতীয় ফ্রন্ট নয়। তৃতীয় ফ্রন্ট বলে যে অচল রাজনৈতিক মঞ্চটিকে আগে দেখা যেত ভোটের মুখে, তার গুরুত্ব আজ বেড়েছে কারণ কংগ্রেসের পতনের পর দেশের প্রধান বিরোধীদের আজ দ্বিতীয় জোটেই প্রয়োজন। কিনতু তাও বিরোধী কণ্ঠ এক হতে পারছে না দেশজুড়ে নোট বাতিলের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠা সত্ত্বেও।
আসলে মুখে বললেও এই বিরোধী নেতারা নিজেদের ইগো ছাড়তে রাজি নন। মমতা, কেজরিওয়াল বা উদ্ধব যেহেতু সংসদের সদস্য নন, তাই সেখানে এই নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা হয়ে অন্য দলগুলি ক্ষীর খেয়ে যাক, তা তাঁদের মনঃপুত নয়। তাঁরা চাইছেন নিজেরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মোদীর বিকল্প হয়ে উঠতে।