চিনা পণ্য বয়কট নিয়ে ভারতের হাঁকডাকই সার, সেদেশের সংবাদপত্রে লিখলেন ভারতীয় লেখক
চিনা পণ্য বয়কট করা নিয়ে ভারত জুড়ে যখন দাবিদাওয়ার ঝড় উঠেছে, তখন চিনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় সেই প্রতিবাদকে খোঁটা দিয়েই একটি সম্পাদকীয় লিখলেন এক ভারতীয় ফ্রিল্যান্স লেখক।
চিনা পণ্য বয়কট করা নিয়ে ভারত জুড়ে যখন দাবিদাওয়ার ঝড় উঠেছে, তখন চিনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় সেই প্রতিবাদকে খোঁটা দিয়েই একটি সম্পাদকীয় লিখলেন এক ভারতীয় ফ্রিল্যান্স লেখক।
ভারতে লগ্নি নয়, চিনা সংস্থাগুলির উচিত নিজেদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা, প্রতিবেদনটির মূল বিষয় এটাই।
প্রতিবেদনটির লেখক গৌরব ত্যাগী, যিনি চিনের গানসু প্রদেশের বায়িনের বাসিন্দা, বলেন যে যদিও ভারতের সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে চিনা পণ্য বয়কট করার দাবি নিয়ে খুব হাঁকডাক করা হচ্ছে, কিন্তু আসলে এসবই বাইরের দেখনদারি। "ভারতীয় মানসিকতা আমি ভালোমতো জানি। ভারতীয় সংস্থাগুলি কখনওই চিনের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারবে না এবং তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, " সোজাসাপ্টা বলেন গৌরব।
কারণ দর্শাতে গিয়ে লেখক বলেন যে ভারতের পরিকাঠামো সেরকম পোক্ত নয় এখনও। "ভারতকে নিজের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে। ভারতের বিদ্যুৎ এবং জল উৎপাদন এখনও যথেষ্ট নয়। আর তাছাড়া সরকারি স্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে দুর্নীতি," বলেন তিনি।
ভারতের বিদেশনীতিকেও একহাত নিয়ে গৌরব বলেন: "ভারতের রাজনীতিবিদরা পশ্চিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই ব্যস্ত যেখান তাঁদের উচিত চিনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কারও বন্ধু নয়। তারা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব দেখাচ্ছে চিনলে চাপে রাখতে কারণ চিনের উন্নতি দেখে তারা ঈর্ষাকাতর।"
"প্রধানমন্ত্রী মোদীর 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্প অবাস্তব"
গৌরব আরও বলেন: "ভারতের অর্থ যে নেই তা নয় কিন্তু তা কয়েকটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষের হাতেই কেন্দ্রীভূত। করদাতাদের এই পয়সা ক্ষমতাশালীরা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে খরচ করেন। দেশে লগ্নির জন্য তাই ডাকা হয় বিদেশী সংস্থাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চালু করতে হয় 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্প।" এই প্রকল্পকে "অবাস্তব" বলেও আখ্যা দেন তিনি।
"ভারতে লগ্নি করতে গেলে তা চিনের পক্ষ্যে আত্মহত্যার সামিল"
গৌরব বলেন বর্তমান পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির দ্বারা এখন উৎপাদনের কাজ সম্পাদিত হচ্ছে সারা দুনিয়া জুড়ে। আমদানি-রপ্তানির অর্থনীতিতে এখন মন্দার ছোঁয়া। আর এই অবস্থায় চিনা সংস্থাগুলির পক্ষে ভারতে উৎপাদন ক্ষেত্রে লগ্নি করা মানে তা আত্মহত্যার সামিল।
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীরও সমালোচনা করে লেখক বলেন যে তারা বিশেষ দক্ষ নয় এবং এদেশে শ্রমিক ইউনিয়নের সমস্যাও রয়েছে। "এই ইউনিয়নগুলির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে কম কাজ করে কারখানার মালিকের থেকে বেশি টাকা আদায় করা।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দলে দলে চিনে গিয়ে সেখানকার পণ্য কিনে সেগুলিই আবার ভারতে বেচেন। এই ব্যবস্থা যখন চিনের হিতেই কাজ করছে, তবে শুধু শুধু ভারতে কারখানা গড়ে পয়সার শ্রাদ্ধ করা কেন, চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন গৌরব।
তিনি নিজে যেখানে থাকেন, সেই উত্তর-মধ্য চিনের গানসু প্রদেশ সম্বন্ধেও বলেন গৌরব তাঁর সম্পাদকীয়তে।
"গানসু প্রদেশ বেজিং, সাংহাই বা শেনজেন-এর মতো উন্নত নয়। কিনতু এই প্রদেশে প্রচুর জমি রয়েছে। রয়েছে একটি শিক্ষিত শ্রমিক শ্রেণী এবং অপেক্ষাকৃত শস্তা জীবনযাত্রা। তাই চিনের ফোন-নির্মাতা সংস্থাগুলির উচিত ভারতে না গিয়ে গানসুতে তাঁদের কারখানা প্রতিষ্ঠা করা। ভারতের নেতৃত্ব চিনের সঙ্গে তাঁদের বাণিজ্যিক ঘাটতি নিয়ে যতই চেঁচান না, বাস্তবে তাঁরা কিছুই করে উঠতে পারবেন না," জানায় গৌরবের তীক্ষ্ণ কলম।