সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান সমঝোতায় আদতে লাভ হবে কালো টাকা কারবারিদেরই!
অনেকে মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত আসলে গোড়ায় গলদ। কালো টাকা গচ্ছিতকারীরা সুইস ব্যাঙ্কের কালো টাকা এই সময়ের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে সমর্থ হবেন।
সুইস ব্যাঙ্কে কারা কালো টাকা গচ্ছিত রেখেছে এবার সেই তথ্য খুব শীঘ্রই ভারত সরকারের হাতে আসতে চলেছে বলে দু'দিন আগে জানা গিয়েছে। এর আগে সুইস ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্টধারী কিছু লোকের নাম প্রকাশ করা হলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। তবে এবার সম্ভবত সমস্ত তথ্যই ভারতের হাতে আসতে চলেছে।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত টাকার হিসাব চলে আসবে কেন্দ্রের হাতে। এর ফলে কালো টাকার উত্সে পৌঁছনো সম্ভব হবে বলে মনে করছে কেন্দ্র। তবে গোটা প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু হবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে সেই প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে।
আর এখানেই আশঙ্কার মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকে মনে করছেন এই সিদ্ধান্ত আসলে গোড়ায় গলদ। কালো টাকা গচ্ছিতকারীরা সুইস ব্যাঙ্কের কালো টাকা এই সময়ের মধ্যে সরিয়ে ফেলতে সমর্থ হবেন। যার অর্থ, যতদিনে কালো টাকা সম্পর্কিত সুইস ব্যাঙ্কের তথ্য ভারত সরকারের হাতে আসবে, ততদিনে টাকা অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়া হবে।
বস্তুত এর ফলে কালো টাকার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের অভিযান চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হতে চলেছে। যেমন ধরা যাক, কারও সুইস ব্যাঙ্কে কয়েক কোটি টাকার কালো ধন রয়েছে। ভারত সরকারের সমঝোতার ফলে সেই ব্যক্তি এক-দেড় বছরের অতিরিক্ত সময় পেয়ে যাচ্ছে।
ততদিন পরে যখন ভারত সরকারের হাতে সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টের তথ্য আসবে, ততদিনে সব টাকা সরানো হয়ে যাবে। কারণ ভারত সরকারের সঙ্গে সুইস সরকারের যে চুক্তি হয়েছে তাতে ২০১৮ সালের আগে এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য ভারতকে দেবে না সুইস সরকার।
যার মানে এই এগ্রিমেন্ট দরজা খুলে দিয়েছে কালো টাকা গচ্ছিতকারীদের নিজের টাকা অন্য কোনও নিরাপদস্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। যা সম্পর্কে কোনও তথ্যই হাতে আসবে না ভারত সরকারের।
গত ৬ জুন সুইস রাষ্ট্রপতি জোহান স্নেইডা-আম্মানের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে সেদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ভারতীয়দের সম্পত্তির হিসাব ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করের টাকা লুকিয়ে সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকার হিসাব ভারতের কাছে কতটা জরুরি তা বোঝান তিনি। এরপরই 'অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন'-এ সম্মতির কাজ এগোতে থাকে। এবং শেষপর্যন্ত সুইজারল্যান্ড ভারতের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করতে রাজি হয়েছে।
কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছ্বতা আনতে অর্গানাইজেশন অব ইকোনমিক কোঅপেরেশন অ্যান্ড ডেভলেপমেন্টের সদস্যভুক্ত দেশগুলি নিজেদের মধ্যে 'অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন' সমঝোতা করেছে। বছরে একবার করে এই তথ্য আদানপ্রদান করা হবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, গচ্ছিত টাকার হিসাব, ব্যক্তির নাম ঠিকানা, প্যান কার্ড নম্বর সমস্তকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রেও তথ্য আদানপ্রদানে দেশগুলির মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে। একটি হল ওয়েব ১ ও আর একটি হল ওয়েব ২ দেশ। ওয়েব ১ এর দেশগুলি ২০১৭ সাল থেকেই তথ্য আদানপ্রদান করতে পারবে। আর ওয়েব ২ এর দেশগুলি ২০১৮ থেকে তা শুরু করতে পারবে। আর ভারত ওয়েব ১ গোষ্ঠীভুক্ত দেশ, সুইজারল্যান্ড ওয়েব ২ গোষ্ঠীভুক্ত দেশ। ফলে ভারতের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের এই সমঝোতা কতটা সাফল্য পাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।