ভারত-জাপান বুলেট ট্রেন সহযোগিতা আদতে চিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতাপ্রদর্শনের লড়াই
জাপান এবং চিনের মধ্যে বুলেট ট্রেনকে কেন্দ্র করে ভূরাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। শিনজো আবে চাইছেন বনধু মোদীর দেশে বুলেট ট্রেন চালু করে চিনকে মাটি দিতে।
অবশেষে শুক্রবার (নভেম্বর ১১) ভারত এবং জাপানের মধ্যে সাক্ষরিত হল অসামরিক পরমাণু চুক্তি। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় নয়াদিল্লির বিদেশনীতির মুকুটে এ নিঃসন্দেহে এক বড় পালকের সংযোজন। আর এই মধ্যে দিয়ে এশিয়াতে ভারত এবং জাপানের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলে তা আগামী দিনে দু'পক্ষকেই উপকৃত করবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিশেষ করে এই দুটি দেশের কাছেই যেখানে চিন একটি বড় মাথাব্যথার কারণ।
তবে পরমাণু চুক্তি ছাড়াও ভারত এবং জাপানের মধ্যে আরও একটি বিষয় রয়েছে যা এই দুই দেশকে কাছাকাছি নিয়ে এসে চিনকে ঈর্ষান্বিত করতে পারে। আর তা হল বুলেট ট্রেন।
ভারতে বুলেট ট্রেনের লাইন পেতে জাপান চিনকে পিছনে ফেলে দিতে চায়
বুলেট ট্রেনকে কেন্দ্র করে এখন এশিয়াতে জাপান এবং চিনের মধ্যে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠেছে। এক সময়ে জাপান এই প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকলেও এখন তাদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে চিনও। আরও সংক্ষেপে বললে, বুলেট ট্রেনের ব্যাপারে আধিপত্য দেখানোটা এখন ক্ষমতা প্রদর্শনের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
আর জাপান যদি এই সুযোগে ভারতে বুলেট ট্রেনের লাইন পেতে এদেশকেও তার রুটে সামিল করে নিতে পারে, তাহলে কৌশলগতভাবে তা চিনের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হবে। ভারতও চাইছে বুলেট ট্রেন তৈরি করে বিশ্বের সামনে নিজের অর্থনৈতিক মর্যাদা বাড়াতে। আর এব্যাপারে জাপানের থেকে বেশি উপকারী বনধু আর কেই বা আছে?
প্রধানমন্ত্রী মোদী আগেই জাপানের সঙ্গে এই ব্যাপারে সহযোগিতা পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। মুম্বই এবং আহমেদাবাদের মধ্যে দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন লাইন পাতার পরিকল্পনাও দানা বেঁধেছে। জাপানের আশা, তারা যদি লাইনটি পাততে সফল হয় (এর আনুমানিক খরচ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তাহলে ভবিষ্যতে ভারতে বুলেট ট্রেন লাইনের প্রসারণ ঘটলে তার বরাতও তারাই পাবে। আর এর মধ্যে যেমন ভারত ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে, অন্যদিকে চিনের মনে আরও ঈর্ষাও জাগানো যাবে।
রেলপথের মাধ্যমে ভূরাজনৈতিক সুবিধা জয় পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন কিছু নয়
রেলপথ নির্মাণ নিয়ে ভূরাজনৈতিক সুবিধাদখলের উদ্যোগ পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। ঔপনিবেশিক দুনিয়াতেও ব্রিটিশরা রেললাইন পেতে অনেক ক্ষেত্রেই ভূরাজনৈতিক সুবিধে আদায় করেছে। আর এখন এশিয়াতে চিন আর জাপানের মধ্যে নতুন যুগের নতুন (বুলেট) রেললাইন পাতার ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠেছে। আর ভারতকে পাখির চোখ করার কারণ এদেশে এই ক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই প্রতিযোগিতার সুফল পেতে মোদী যে কোনও কসুরই বাদ রাখবেন না, সেটা সহজেই বোধগম্য।
ভারত ছাড়া এশিয়ার অন্যত্রও চলছে চিন-জাপানের বুলেট ট্রেন প্রতিযোগিতা
ভারত ছাড়াও এশিয়ার অন্যান্য দেশেও জাপান আর চিনের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। গতবছর ইন্দোনেশিয়াতে বুলেট ট্রেনের লাইন পাতার বরাত পেয়ে জাপানকে টপকে যায় চিন। তাছাড়াও, সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, তাইওয়ান এবং ভিয়েতনামের মতো দেশেও চলছে জোর টক্কর কিনতু জাপান সেভাবে সাফল্য পায়নি কোনওখানেই। তাই ওই সমস্ত দেশগুলির চেয়ে আয়তনে অনেক বড় দেশ ভারতকে এখন লক্ষ্য করে এগোচ্ছে শিনজো আবে সরকার।
ভারতের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক মসৃণ না হওয়াতে জাপানের পক্ষে ভারতে বুলেট ট্রেন তৈরি করে চিনকে পিছনে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাছাড়া, আবের সঙ্গে মোদীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক দারুন ভালো হওয়াতেও এই ব্যাপারে তাড়াতাড়ি এগোনোর ব্যাপারেও আশাবাদী টোকিও।
একদিকে যেমন মোদী চাইছেন ২০২০ সালের মধ্যে ভারতে বুলেট ট্রেনের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যেতে, আবেও তাঁর দেশের বিশ্ববিখ্যাত শিনকানসেন (অতি দ্রুতগতিসম্পন্ন ট্রেন) প্রযুক্তির রফতানিও তিনগুণ বাড়াতে চাইছেন ওই বছরের মধ্যে। আর তাই কূটনীতির ট্রেন এখন ছুটছে বুলেট ট্রেনের থেকেও দ্বিগুণ গতিতে।