আঙুলে কালি দিয়ে নোটের লাইন 'ভোটের' লাইনে বদলে গেলেও মানুষের দুর্ভোগ কতটা কমবে?
কালো টাকা সাদা করার প্রয়াসকে আটকাতে এবং উপচে পড়া ভিড় কমাতে এবার কর্তৃপক্ষ কালি লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে এই সিদ্ধান্ত?
নোটের লাইন এখন ভোটের লাইনে রূপান্তরিত হল। সরকার থেকে বলা হয়েছে যে কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্কে পুরোনো নোট বদলে নতুন নোট আনতে গেলে তাঁর আঙুলে কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে। লক্ষ্য, যে সমস্ত ব্যক্তি তাঁদের কালো টাকাকে সাদা করতে বারবার করে নিজে বা অন্য লোককে ব্যাঙ্কে পাঠাচ্ছে, তাঁদের চিহ্নিত করা। পাশাপাশি, নতুন নোটের চাহিদার জন্য যে বিপুল ভিড় হচ্ছে ব্যাঙ্কগুলিতে, তাও কমানো।
আপাতদৃষ্টিতে সরকারের এই পন্থা কার্যকরী মনে হলেও বাস্তবিক তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে।
এই নির্বাচনী বিধিপ্রয়োগ করে কি আদৌ ব্যাঙ্কগুলি অসাধু ব্যক্তিদের আটকাতে পারবে? হুড়মুড়িয়ে যেখানে ভিড় ভেঙে পড়ছে, সেখানে ক'জনের আঙুলে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে কালি লাগানো হবে? আর যদি কোনও মানুষের একাধিক ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে থাকে, তাহলে সে একটির বেশি দু'টি একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে গেলেই সমস্যায় পড়বে? এত বাঘ মারতে পুরো জঙ্গলে আগুন ধরানোর সামিল।
উপনির্বাচনের পরে কী হবে? কোন কালি কার কে ঠিক করবে?
তাছাড়া, সামনেই বেশ কয়েকটি উপনির্বাচন। যদি ব্যাঙ্কে কোনও ব্যক্তির আঙুলে কালি লাগানো হয় তবে সে ভোট দেবে কীভাবে? আর কারও আঙুলে যদি ভোট দেওয়ার জন্য কালি লাগানো হয়, তবে সেই ব্যক্তি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলবে কীভাবে?
আসলে সরকারের ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া এই বিপুল মিশন হাতে নেওয়ার ফলে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে এখন সবকিছুই করে দেখতে হচ্ছে।
মুখে যদিও মসৃণভাবে ব্যাপারটা উতরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বস্তুত দেখা গিয়েছে নোট বাতিলের ফলে সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। অত্যাধিক ভিড়, টাকা ফুরিয়ে যাওয়া, অচল এটিএম মেশিন, জনসাধারণের ভোগান্তি এবং ধৈর্যচ্যুতি ইত্যাদি সামলাতে গিয়ে এখন কালির আশ্রয় নিতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে সত্যিকারের সমস্যায় পড়া মানুষ কতটা উপকৃত হবে? যে বাড়ির বৃদ্ধ দম্পতি ব্যাঙ্কে যেতে পারেন না এবং অন্যের উপর ভরসা করে থাকেন, তাঁদের সেই ভরসার পাত্রটিকে আটকে দিয়ে কর্তৃপক্ষ কোন বাহাদুরিটা করবেন?
এই হঠকারিতায় যে ভোগান্তি চলছে, তার দায় কার?
কোনও চিন্তাভাবনা না করে দর্শকের তালি কুড়োনোর এই হঠকারিতা দেশের ক্যাশ ইকনমিকে সম্পূর্ণ স্তব্ধ করে দিয়েছে। যাঁরা দৈনন্দিন জীবনে ক্যাশ ব্যবহার করেন না, তাঁরা মজা দেখলেও বাস্তবে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে একটি বড় ধাক্কা দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। অথচ সামান্য একটু প্রস্তুতি নিয়ে এগোলে এই পুরো ডামাডোলটাই এড়ানো যেতে পারত।
কিন্তু ওই যে, দর্শকের তালি কুড়ানোটাই যখন আসল লক্ষ্য হয়ে যায়, তখন বাকি সব গৌণ।