কূটনৈতিক সমর্থনের বদলে জল চায় বাংলাদেশ: আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্বার্থই স্থায়ী
সার্ক সম্মেলন তো আগেই ভণ্ডুল হয়েছে। এবার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য নানা দেশও ভারতের পাশে দাঁড়াল পাকিস্তানের বিরুদ্ধাচরণ করে, বাংলাদেশ যাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নিয়মকে মাথায় রেখেই। সেটা কী? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী মিত্র বা শত্রু বলে কিছু নেই, আছে শুধু স্থায়ী স্বার্থ।
শুক্রবার বাংলার একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে পাকিস্তানকে একঘরে করার উদ্যোগে নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়ে ঢাকা চাইল তিস্তা চুক্তির সম্পাদনার কাজ যেন আরেকটু গতি পায়।
নানা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের কাছে তিস্তা জলচুক্তি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই সফল হলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যেমন দুর্ভিক্ষের সমস্যাকে অনেকটাই আয়ত্তে আনা যাবে, তেমনই রাজনৈতিকভাবে হাসিনার হাতও শক্ত হবে। প্রতিবেদনটির মতে, অক্টোবর মাসে গোয়ায় বিমস্টেক সম্মেলনে হাসিনার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হবে মোদীর সঙ্গে তিস্তার বিষয়টি উত্থাপন করা।
আর তাই ভারতের সঙ্গে জঙ্গি প্রশ্নে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান আগেই নিয়েছে বাংলাদেশ। বুধবার রাতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি নির্মূল করার যে ঘোষণা করেছিলেন ডিজিএমও, তার পরেও ভারতকে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
পাক-বাংলাদেশ সম্পর্ক কোনওদিনই ভালো নয়
সেই পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের সময় থেকেই ইসলামাবাদের সঙ্গের ঢাকার সম্পর্ক ভালো নয়। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান পূর্বের উপর অত্যাচার চালানো এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সাহায্য নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, সবই ইতিহাসগত। সেই কলঙ্কময় অধ্যায়ের রেশ আজও দু'দেশের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। তাছাড়া, সম্প্রতি যখন বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধপরাধীদের বিচারে তোলাকে কেন্দ্র করেও ঢাকা এবং ইসলামাবাদের মধ্যে যথেষ্ট মতানৈক্য দেখা দেয়।
বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের মদত দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে এবং দু'দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্তরে যথেষ্ট চাপানউতোর লক্ষ্য করা যায়।
গুলশনকাণ্ডের পর ঢাকা এখন অনেক সজাগ জঙ্গিবাদের প্রশ্নে
গত ১লা জুলাই ঢাকায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক জঙ্গিহানার পরে এখন হাসিনা সরকার অনেক তৎপর বাংলাদেশের নিরাপত্তা-সম্পর্কিত বিষয়ে আর এ-ব্যাপারে ঢাকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নয়াদিল্লিকে। একইসাথে বাংলাদেশের ভিতরে সংখ্যালঘুদের উপর হয়ে চলা অবিরাম জঙ্গি আক্রমণ এবং বহিরাগত বিপদ -- এই দুইকে সামলাতে গিয়ে আওয়ামি লীগ সরকার এখন রীতিমতো চাপে। আর এই চাপকে অনেকটাই কমানো যায় যদি হাসিনা সরকার তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন ঘটিয়ে তাঁর দেশের মানুষের বিশ্বাস জেতার এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। তাছাড়া, ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন যোগ দিতে গেলেও একটি ভুল বার্তা যেতে পারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। তাই এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো ঢাকা সার্ক বাতিল করে বাংলাদেশ এবং ভারত, দু'পক্ষকেই খুশি রাখল।
ভারতকেও এই সুযোগটা নিতে হবে
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গিবাদের গণতন্ত্রীকরণ হওয়ার ফলে ভারত এখন বাংলাদেশকেও পাশে পাচ্ছে। অন্যান্য দেশগুলি বুঝছে যে জঙ্গি সমস্যা নিয়ে ভারত যে ক্রমাগত গলা ফাটিয়ে এসেছে এতদিন, তা অহেতুক নয়। জুলাইয়ে গুলশনে ঘটে যাওয়া বিদেশিদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ কিছুটা হলেও জঙ্গি-বিরোধী ভাবনাচিন্তার সামিল হয়েছে। সেটা ভারতের পূর্ব সীমানার পক্ষে সুখবর।
মমতাকেও প্রয়োজন
তবে তিস্তার ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। নিঃসন্দেহে তিনি আগের থেকে এব্যাপারে অনেক সুর নামিয়েছেন কিন্তু তাঁকে এবার মোদী এবং হাসিনার হাত ধরে তিস্তার পরিবর্তে ভারতের জাতীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তাতে ভারত, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ - সবারই লাভ আখেরে।