নোট বাতিলের বিরোধিতা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা দেশ ঘুরলে রাজ্যের কাজ কে করবে?
শোনা যাচ্ছে ভারত পরিক্রমা করার জন্য নাকি বাতিল হতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাঙ্কক সফর; তবে কি এখন তাঁর কাছে নিজের রাজ্যই ব্রাত্য?
নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সোচ্চার তিনি। আর সেই লক্ষ্যেই বিরোধী জোটকে আরও শক্ত মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার ঠিক করলেন দেশের নানাপ্রান্তে সভা করে জনমত গড়ে তুলবেন। এ ব্যাপারে তাঁর লক্ষ্যের মধ্যে আছে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীর কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসী এবং তাঁর রাজ্য গুজরাতের রাজধানী গান্ধিনগর বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন। কর্মসূচিতে রয়েছে বিহার এবং জম্মু-কাশ্মীরের মতো রাজ্যও।
এ
মাসের
শেষ
সপ্তাহ
থেকেই
মমতার
দেশ
পরিক্রমা
শুরু
হবে
বলে
জানিয়েছে
দৈনিকটি।
এমনকী,
এই
সিদ্ধান্তের
জন্য
বাতিল
হতে
পারে
মমতার
আসন্ন
ব্যাঙ্কক
যাত্রাও।
ব্যাঙ্ককে
হতে
চলা
গ্লোবাল
এশিয়ান
কনফারেন্স
থেকে
মমতাকে
আমন্ত্রণ
করা
হয়েছিল
পশ্চিমবঙ্গের
অর্থনৈতিক
অগ্রগতির
পরিপ্রেক্ষিতে।
এর
আগে
দিল্লিতে
সেখানকার
মুখ্যমন্ত্রী
অরবিন্দ
কেজরিওয়ালকে
সঙ্গী
করে
মমতা
একটি
জনসভা
করবেন
জনগণের
মতিগতি
বুঝতে।
২০১৪
সালের
লোকসভা
নির্বাচনের
আগে
আন্না
হাজারের
ডাকে
সাড়া
দিতে
গিয়ে
খালি
জনসভায়
মুখ
পোড়ানোর
ঘটনা
তিনি
যে
ভোলেননি,
তা
বোঝাই
যাচ্ছে।
কিনতু এখন প্রশ্ন হল: যদি একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম ফেলে বিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাতেন, তাহলে তাঁর রাজ্যের হাল কে সামলাবে? ব্যাঙ্ককের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক ভাগ্যের নিরিখে। সেটা যদি মুখ্যমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে যান, তাহলে সেটা তাঁর রাজ্যের প্রতি কতটা সুবিচার হবে?
নোট বাতিলের জন্য দেশের সর্বপ্রান্তেই মানুষজন অসুবিধেয় পড়েছেন তা অনস্বীকার্য, কিনতু তাই বলে নিজের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজ ফেলে সেই নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার মধ্যে কতটা বুদ্ধিমত্তার ছাপ রয়েছে? আর বিশেষ করে মমতা যখন জানেন যে তিনি ছাড়া তাঁর সরকারে বা দলে কোনও দ্বিতীয় নির্ভরযোগ্য মুখ নেই।
যে ক'জন বিরোধী নেতা মোদীর নোট-সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তাঁদের মধ্যে প্রশাসনিক দায়িত্ব খুব কমই রয়েছেন। কেজরিওয়াল থাকলেও দিল্লির মতো নাম-কে-ওয়াস্তে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর অত গুরুত্ব নেই। সেখানে এমনিই কেন্দ্রীয় সরকারের উপস্থিতি রয়েছে। সমাজবাদী পার্টি বিরোধিতা করলেও উত্তরপ্রদেশের আসন্ন নির্বাচনের কথা ভেবে তা তারা করছে মেপেজুখে। আর দিল্লি থেকে বহুদূরে, সীমান্তের কাছে স্থিত একটি বিরাট জনসংখ্যার রাজ্যে যদি প্রশাসক অনুস্পস্থিত থাকেন 'বৃহত্তর স্বার্থ'-এর কথা ভেবে, তাহলে চলবে কী ভাবে?
আসলে মমতা জানেন এই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত রাহুল গান্ধীর মতো তাঁর সামনেও এক বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে ২০১৯-এর লক্ষ্যে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার। তাই রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় স্তরে তিনি জল মাপছেন। সেটা তিনি করতেই পারেন। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর বিরোধিতার জায়গাটি বলতে গেলে প্রায় শুন্যই পড়ে রয়েছে এ যাবৎ। কিনতু সেটা করতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী নিজের রাজ্যকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলছেন কেন?
যদি প্রধানমন্ত্রিত্বের দিকেই তাঁর নজর থাকে (দু'দুবার বঙ্গ দখল করে সেটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়) তবে মুখ্যমন্ত্রীত্ব তিনি ছেড়ে সেই লক্ষ্যেই এগোন। দেশজুড়ে দলের সংগঠন চাঙ্গা করুন। এই নোট বাতিলের বিষয়টি আজ না হোক কাল মিটে যাবে। তখন সব শান্ত হয়ে যাবে আগের মতোই। মমতার এই সমস্ত প্রয়াস যাতে তার পরেও উপকারে আসে, সে ব্যাপারে চিন্তা করাটা দরকার নয় কি?
একটি কথা মমতাকে ভুলে চলবে না যে সারা ভারতের নিরিখে তাঁকে গ্রহণযোগ্যতা দেখতে গেলে আগে রাজ্যের প্রশাসক হিসেবে সফল হতে হবে। যেমনটি করে দেখিয়েছিলেন মোদী। ২০০২ সালের দাঙ্গা সত্ত্বেও প্রশাসক হিসেবে সুনাম মোদীর আর সেই সুবাদে অনেক বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন।
মমতাকে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে গেলে আগে নিজের রাজ্যটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তাঁকে যে নজরেই দেখুক, সারা দেশের মানুষের চোখে মোদীর বিকল্প হয়ে উঠতে গেলে তৃণমূল নেত্রীকে এখনও অনেক পথ পেরোতে হবে। আর সেটা দু'নৌকোয় পা দিয়ে চললে হবে না। উল্টে তাঁকে সুবিধাবাদী নেত্রী হিসেবেই দেখা হবে।