সার্ক বয়কট করে ব্রিকস-এ আবার সেই পাকিস্তানকে নিয়েই চর্চা কেন?
ভারতের ব্রিকস-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সোচ্চার হওয়া অথবা বলা যেতে পারে পরোক্ষে পাকিস্তানকে কোনঠাসা করার প্রয়াস করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
পাকিস্তানে আগামী নভেম্বর মাসে হতে চলা সার্ক সম্মেলন ভণ্ডুল হওয়াটা ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে বেশ আনন্দের বিষয় ছিল। উরিকাণ্ডের পর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ভারতের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ বেশির অন্যান্য আরও দেশের সার্ক বাতিলের ডাক, ইত্যাদিকে নয়াদিল্লি মনে করছিল বেশ বড় রকমের কূটনৈতিক জয়। গত সপ্তাহান্তে গোয়াতে হওয়া ব্রিকস দেশগুলির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সদস্যদের আলাপচারিতায় পাকিস্তানকে উপেক্ষা করেছে ভারত।
পাশাপাশি, ইসলামাবাদকে আরও চাপে ফেলতে ব্রিকস-এর দুই বৃহত্তম সদস্য -- রাশিয়া এবং চিনকে কাছে টানার চেষ্টাও করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাশিয়া ইতিহাসগতভাবে ভারতের মিত্রই, কিনতু সাম্প্রতিক সময়ে তার বৈরী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি এবং ইসলামাবাদের সঙ্গে মস্কোর যৌথ সামরিক মহড়া হয়তো নয়াদিল্লিকে চিন্তায় ফেলেছিল।
আর চিন তো আগাগোড়াই ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে পাকিস্তানকে সমর্থন জুগিয়ে এসেছে -- তাকে প্রভাবিত করা ভারতের পক্ষে আরও অনেক অনেক কঠিন কাজ।
ব্রিকস-এর মঞ্চে পাকিস্তানকে নিয়ে আলোচনা কেন?
কিন্তু ভারতের ব্রিকস-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সোচ্চার হওয়া অথবা বলা যেতে পারে পরোক্ষে পাকিস্তানকে কোনঠাসা করার প্রয়াস করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি পাকিস্তানকে একঘরে করতেই ভারত এবছরের সার্ক সম্মেলনকে উপেক্ষা করে থাকে, তবে সেই পাকিস্তানকে নিয়েই ব্রিকস-এ এত চর্চা কেন?
ব্রিকস-এর প্রাসঙ্গিকতা সার্ক-এর থেকে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক বেশি, তাহলে সেই মঞ্চে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক লড়াইয়ের আলোচনা বেশি কেন? তাতে আখেরে ব্রিকস-এর কী লাভ হচ্ছে?
রাশিয়া, চিন পাকিস্তানের প্রতি কী নীতি নিয়ে চলবে তা তাদের ব্যাপার
নয়াদিল্লিকে বারবার দেখা গিয়েছে গোয়ার এই সম্মেলনে পাকিস্তান প্রশ্নে বেশি তৎপরতা দেখাতে, ব্রিকস-এর অন্যান্য সদস্য দেশগুলি -- বিশেষ করে রাশিয়া এবং চিন পাকিস্তানকে কিভাবে দেখে বা তার মোকাবিলা করবে সে নিয়ে মাথা ঘামাতে।
যদি ব্রিকসকে সত্যি আগামী দিনের বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে একটি বিকল্প মঞ্চ হিসেবে সফল হতে হয়, তবে তাকে ভারত-পাকিস্তানের মতো আঞ্চলিক বিবাদ-কলহের ঊর্ধে থাকতেই হবে। আর অতীতে জওহরলাল নেহরুর নির্জোট আন্দোলনের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃহৎ নেতৃত্ব দেওয়ার আশা মোদী করে থাকেন, তবে তাঁকেও পাকিস্তানের দিক থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে হবে।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারত যে এত দ্রুত বিপুল অস্ত্রসম্ভার কেনার চুক্তি সম্পাদিত করল, তার কারণ মুখ্যত রুশ-পাকিস্তানের সামরিক সমীকরণকে ধাক্কা দেওয়া। এক প্রাক্তন সেনা আধিকারিক তো বলেই দিয়েছেন যে পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা এবং তেল-এর দামের ক্রমাগত হ্রাস পাওয়ার কারণে রাশিয়ার অর্থনীতিতে যে মন্দা যাচ্ছে, ভারত এই বিপুল অস্ত্রসম্ভার কিনে পুরোনো মিত্র রাশিয়াকে সাহায্যই করছে। আর কে রাশিয়ার থেকে এত অস্ত্র কিনবে?
পাকিস্তানের অত ক্ষমতা আছে নাকি? অর্থাৎ, ঘুরে ফিরে সেই পাকিস্তানেই আটকে যাই আমরা
কিনতু রাশিয়া ভারতের এই উপকার যদিও বা গদগদচিত্তে মেনে নেয় আর পাকিস্তানের দিকে বিশেষ কর্ণপাত নাও করে, চিনের কিনতু সেসবের প্রয়োজনীয়তাই নেই। অর্থনৈতিকভাবে চিনের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই এবং বিদেশনীতিতে ভারতকে চাপে রাখতে সে পাকিস্তানকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়ার নীতিতে বিন্দুমাত্র বদল আনবে না সেটাও জানা কথা।
এখন আবার সেই প্রশ্নটাই আসে। ব্রিকস-এর মূল লক্ষ্য যদি হয় উন্নতিশীল বিশ্বকে অর্থনৈতিক অর্থে বিকল্প পথ দেখানো, তবে সেখানে পাকিস্তানকে নিয়ে চিনের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে গিয়ে ভারত কতটা উপকার করছে নিজের বা ব্রিকসের? এমনিতেই নানা বিষয় নিয়ে ভারত-চিন তরজা লেগেই রয়েছে; একই গোষ্ঠীতে এই দুই দেশের সহাবস্থান যথেষ্ট কঠিন -- সেখানে পাকিস্তান নিয়ে পারস্পরিক চাপাচাপির কূটনীতি চলতে থাকলে ব্রিকসের আসল কাজের কী হবে?
ভারত-চিন বিবাদ চলতে থাকলে ব্রিকস-এর অবস্থা সার্ক-এর মতোই হতে পারে
কারণ,
রাশিয়া
বা
ব্রাজিলের
মতো
বিরাট
আয়তনের
দেশ
এই
গোষ্ঠীতে
থাকলেও
তার
আসল
চালিকাশক্তি
চিন
এবং
ভারতই।
তাই
ঠিক
যেই
কারণে
(ভারত-পাক
বিবাদ)
সার্ক
অসফলই
রয়ে
গিয়েছে
আজ
পর্যন্ত,
ব্রিকস-এর
ক্ষেত্রেও
সেই
একই
জিনিস
ঘটতে
পারে।
ভারতের
এটাও
মাথায়
রাখা
জরুরি
যে
চিন
বা
রাশিয়া
যেখানে
তাকে
কোনোরকম
চাপ
দিচ্ছে
না
তাদের
দুজনেরই
পয়লা
নম্বর
শত্রু
আমেরিকার
সাথে
ঘনিষ্ঠতা
কমাতে,
তবে
নয়াদিল্লি
কিসের
ভিত্তিতে
পাকিস্তানের
প্রসঙ্গে
ওই
দুই
দেশকে
চাপ
দিতে
পারে?
আর সেক্ষেত্রে, সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় পড়বে রাশিয়া
ব্রিকস যদি ভারত-চিন কলহের কারণে নিজের লক্ষ্য থেকে চ্যুত হয়, তবে তা রাশিয়ার কাছে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ হবে। কারণ বারাক ওবামার রক্ষণাত্মক বিদেশনীতির ফায়দা নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁর দেশকে আবার বিশ্ব রাজনীতিতে সেই ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে যাতে সেবারের 'পরাজয়' এবারের লড়াইতে তিনি মুছে দিতে পারেন।
আর সেইজন্যে মস্কোর প্রয়োজন ব্রিকস-এর মতো বিকল্প গোষ্ঠী যেখান থেকে হিলারি ক্লিন্টনকে (হ্যাঁ, ডোনাল্ড ট্রাম্প যা শুরু করেছেন, এখন ডেমোক্র্যাটদেরই হ্যাটট্রিক হবে বলে মনে হচ্ছে) চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। এখন যদি ভারত-হীন-পাকিস্তান ইত্যাদি প্রশ্নে ব্রিকস লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, তবে রাশিয়ার লোকসানই সবচেয়ে বেশি। আর সেক্ষেত্রে, মস্কো তাঁর সমস্যার জন্য নয়াদিল্লিকেই দায়ী মনে করলে তাঁকে বিশেষ দোষ দেওয়া যাবে না।