১৮ বছর আগের কার্গিল যুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একনজরে
কীভাবে ভারতীয় সেনা শত্রুকে হঠিয়ে কাশ্মীরে ভারতের বিজয় কেতন ওড়ায় তা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই যুদ্ধের আঠেরো বছর পূর্তিতে এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য জেনে নিন একনজরে।
কাশ্মীরে কার্গিল যুদ্ধ চলেছিল প্রায় তিনমাস ধরে। বায়ুসেনা ও ভারতীয় স্থলসেনার যৌথ প্রচেষ্টায় ভারতেরই এলাকা কার্গিলকে ফের পুনর্দখল করে ভারত। বিজয় পতাকা ওড়ায় কাশ্মীরের মাটিতে। ১৯৯৯ সালের মে মাসে হঠাৎ করেই খবর পাওয়া গেল, কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরের দখল নিয়েছে পাকিস্তানি সেনা ও কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সেই খবর পাওয়ার পরে কীভাবে ভারতীয় সেনা শত্রুকে হঠিয়ে ভারতের বিজয় কেতন ওড়ায় তা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই যুদ্ধের আঠেরো বছর পূর্তিতে এর সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য জেনে নিন একনজরে।
কার্গিলের যুদ্ধ
১৯৯৯ সালে কার্গিলের যুদ্ধ হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। লাদাখের কার্গিল এলাকায় এই যুদ্ধ হয়। এই এলাকা আগে বালতিস্তান জেলা নামে পরিচিত ছিল। প্রথমবার কাশ্মীর যুদ্ধের সময় লাইন অব কন্ট্রোল দিয়ে তা আলাদা করে দেওয়া হয়।
কীভাবে শুরু
১৯৯৯ সালের মে মাসে কার্গিল এলাকায় অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করেন স্থানীয়রা। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। বলা হয়, অস্ত্র নিয়ে অনেকে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং বাঙ্কার ও পোস্ট তৈরি করছে।
আগের যুদ্ধ
কার্গিল যুদ্ধের আগে ১৯৭১ সালে একবার ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়েছিল। সেইসময়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন দেশ হিসাবে ভারতের মদতে স্বীকৃতি পায়। পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল সেসময়ের বাংলাদেশ। ভারতের প্রত্যক্ষ মদতে পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে পেরেছিল বাংলাদেশ।
বাজপেয়ীর সরকার
১৯৯৯ সালে যখন কার্গিল যুদ্ধ হয় তখন ভারতে কেন্দ্রের সরকারে ছিল এনডিএ-র সরকার। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অপারেশন বিজয়
ভারতীয় সীমান্তে পাকিস্তান জঙ্গি ও সেনা একসঙ্গে ঢুকে পড়ে দখলের চেষ্টা করলে তাদের হঠাতে ভারতীয় সেনা 'অপারেশন বিজয়' শুরু করে। সেই মিশনের মধ্য দি্য়েই কাশ্মীরের এলাকা দখল মুক্ত করতে সক্ষম হয় ভারতীয় বীর জওয়ানরা।
ভারত-পাক চুক্তি
ভারত-পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে সিমলা চুক্তি সাক্ষর হওয়ার আগেই কার্গিলের যুদ্ধ হয়েছিল। সিমলা চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের কেউই অস্ত্র হাতে যুদ্ধের ময়দানে নামতে পারবে না।
ভারতীয় বায়ুসেনার কেরামতি
কার্গিল যুদ্ধ জেতার ক্ষেত্রে বায়ু সেনার শক্তি দারুণভাবে ভারত কাজে লাগিয়েছে। সেবারই প্রথম ৩২ হাজার ফুট উঁচুতে উঠে ভারতীয় সেনা সীমান্তে পাক সেনা, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি ঘাঁটি খুঁজে বের করে হামলা চালায়। মাত্র এক সপ্তাহের ট্রেনিংয়ের মধ্যেই ভারতীয় বায়ুসেনা একাজ করে দেখিয়েছিল।
সৈন্যের ব্যবহার
সবমিলিয়ে মোট ৬৯টি ফ্রন্টলাইন বায়ুসেনার বিমান ভারত যুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এর পাশাপাশি কার্গিল যুদ্ধ জিততে ৭ লক্ষ ৩০ হাজার সেনা সীমান্তে পাঠিয়েছিল ভারত।
বাজপেয়ীর ঘোষণা
১৯৯৯ সালে 'অপারেশন বিজয়'-এর সাফল্যের কথা এই ২৬ জুলাইয়ের দিনই ঘোষণা করা হয়। তবে সরকারি ঘোষণার অনেক আগে ১৪ জুলাই কার্গিল যুদ্ধে জয়ের কথা ঘোষণা করে দেন ততকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী।
শহিদের তথ্য
কার্গিলের যুদ্ধে ভারতের প্রায় ৫০০ বীর জওয়ান শহিদ হন। রিপোর্ট অনুযায়ী পাকিস্তানের প্রায় ৩ হাজার সৈন্য, মুজাহিদিন ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের মৃত্যু হয়।
উচ্চ পার্বত্য এলাকায় লড়াই
কার্গিলের যুদ্ধ যেখানে লড়া হয়েছিল তা অনেক উচ্চ পার্বত্য এলাকা। রুক্ষ-শুষ্ক এমন এলাকায় যুদ্ধ লড়া এমনিতেই কঠিন কাজ। পৃথিবীর খুব কম এমন দেশ রয়েছে যারা এত উঁচু এলাকায় যুদ্ধে শামিল হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের উৎসাহ
কার্গিলের যুদ্ধ আর একটি দিক থেকেও ঐতিহাসিক। তা হল, পরমাণু শক্তিধর দুটি দেশ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। এবং এই যুদ্ধ নিয়ে যেভাবে সংবাদমাধ্যম উৎসাহ দেখিয়েছে তা আগে দেখা যায়নি।