‘পিছুটান’-এ ঠাকুমার ঝুলি থেকে রূপকথার গল্প শোনাবে হিন্দুস্থান পার্ক
একান্নবর্তী পরিবারের ঐতিহ্য এখন ভেঙে খান খান। এখন সমাজে 'থিম' ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। কিন্তু ছোট পরিবারের পথে হাঁটতে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। ঠাকুরমা-দাদুর স্নেহের পরশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাতি-নাতনিরা। তাই তো অরুণ-বরুণ-কিরণমালা, নীলকমল-লালকমলের মতো রূপকথায় গল্প আর শুনতে পায় না শিশুরা। শৈশব মনে যারা আজও কল্পনার জাল বুনতে থাকে, তাদের হারানো সেই শৈশব ফিরে আসবে হিন্দুস্থান পার্কের দুর্গাপুজো মণ্ডপে৷
এবছর হিন্দুস্থান পার্ক শোনাবে রূপকথার গল্প। কচিকাঁচারা দাদু-দিদিমা, ঠাকুরদা-ঠাকুরমার কোলে বসে সেই স্বাদ পাবে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের আঙিনায়। থিমের নাম 'পিছুটান'৷ নাতি-নাতনিদের জীবনে ঠাকুমার ভূমিকা যে কতখানি তা-ই তুলে ধরেছে হিন্দুস্থান পার্কের মণ্ডপসজ্জা। বলাই যায় ঠাকুরমার ঝুলি নিয়ে এখানে হাজির হচ্ছেন দেবী দুর্গা। মাতৃবন্দনার এই মঞ্চেই ঠাকুমা-দাদুর কাছে গল্প শুনে সময় কাটবে নাতি-নাতনিদের।
এই প্রজন্ম যে সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত, তা আর কেউ না জানুক, এই হিন্দুস্থান পার্কের পুজো উদ্যোক্তারা উপলব্ধি করেছেন। শহর বলুন বা শহরতলি, শিশুরা এখন মজে কম্পিউটার গেমে৷ অরুণ-বরুণ-কিরণমালার গল্প তারা জানে না, তারা এখন বুঁদ অ্যানিমেশনের ফাঁদে৷ সেই ফাঁদ থেকে তাদের বের করবে কে? ঠাকুমার ঝুলির উপাখ্যান তো আছেই। সেইসঙ্গে আছে হিন্দুস্থান পার্কের মতো পুজো। এই পুজো মণ্ডপে প্রবেশ করলে আপনি অনুভব করবেন সত্যি সত্যিই আপনি চলে এসেছেন একেবারে রূপকথার জগতে৷ মণ্ডপে প্রবেশের দ্বারেই থাকছে সেই আভাস। বিশাল এক পক্ষীরাজ ঘোড়া মণ্ডপ দ্বারে স্বাগত জানাচ্ছে আপনাকে। তারপর রথ, ঘোড়া, হাতি, সৈন্য-সামন্ত, নীল আকাশ, ডানা মেলা পরী- কী নেই? আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবেই দেবে হিন্দুস্থান পার্কের দুর্গা মণ্ডপের পরিমণ্ডল৷
কিন্তু কেন চোখ ধাঁধাবে দর্শকমণ্ডলীর? কী সেই জাদুকাঠি? অনির্বাণ শোনালেন তাঁর ভাবনার কথা। কী সেই ভাবনা আর কীভাবেই বা তার প্রকাশ? অনির্বাণ বললেন, ঠাকুমার কথা ভাবলেই প্রথমে মনে পড়ে যায় পানের ডাবর, সুপুরি, জাঁতির কথা৷ তাই মণ্ডপসজ্জার উপকরণ হিসেবে সেসব ব্যবহার করা হয়েছে৷ এখন তো একান্নবর্তী পরিবার নেই। সমাজের সম্পর্কের বাঁধনটাই হারিয়ে যেত বসেছে।
কিন্তু একটা পরিবারে ঠাকুমা-দাদুর ভূমিকা যে কতখানি, সেটাই আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি। বাড়ির ছোট্ট সদস্যরা ঠাকুমা-দাদুর সংস্পর্শে কীভাবে নিজেদের ভিত গড়ে তোলে, তা দেখানোর চেষ্টা করেছি। চেয়েছি মানুষের মনে একান্তবর্তী পরিবারের মধ্যে থাকার ইচ্ছাকে আবার জাগিয়ে তুলতে। যাতে নাতি-নাতনিরা আর বঞ্চিত না হন ঠাকুমা-দাদুর কাছে রূপকথার গল্প শুনতে।
উদ্যোক্তাদের কথায়, আমরা উৎসবের আঙিনায় তুলে ধরছি হারিয়ে যেতে বসা সেই রঙিন বাস্তবকেই। চেষ্টা করেছি, সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত করে গড়ে তুলতে। কেননা সম্পর্কটাই তো আসল। সেই বাঁধনটাই যদি পলকা হয়ে যায় থাকবে কী! তাই ৮৬-র হিন্দুস্থান পার্কে সামাজিকতার বার্তা, সম্পর্কের বন্ধনের সঙ্কল্প নিয়ে হাজির 'পিছুটান'।