হিলারি বা ট্রাম্প যেই আসুন, পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতির জন্য বিদেশনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে
রাশিয়া এবং চিনের চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই, তাছাড়াও সাইবার আক্রমণ, পরিবেশ এবং বিভিন্ন মিত্র দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অনিশ্চয়তার সমস্যা সামলাতে হবে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে
এবছরের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে যা কিছু নাটক তা আর দু'দিনের মধ্যেই খতম হবে। আগামী জানুয়ারির ২০ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ কে নেবেন - হিলারি ক্লিন্টন না ডোনাল্ড ট্রাম্প - তা জানা যাবে শিগগিরই।
কিন্তু যেই ওভাল অফিসে বসুন, পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতির পথ যে কণ্টকাকীর্ণ হবে প্রথম থেকেই, সে বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই। বিশেষ করে বিদেশনীতিতে ওয়াশিংটনের আসন্ন সময় মোটেই সহজ নয়। আর সেটা ট্রাম্প কতটা জানেন সেটা আন্দাজ না করা গেলেও পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ হিলারি ভালোমতোই বোঝেন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিদেশনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছেন।
রাশিয়া এবং চিনের মোকাবিলা করা তো রয়েছেই, পাশাপাশি সাইবার আক্রমণ বা পরিবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। পশ্চিম এশিয়াতে আগুন নেভার কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। শরণার্থী সমস্যায় জেরবার ইউরোপি সহ বিভিন্ন অঞ্চল। আর এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় আমেরিকার বিভিন্ন মিত্র দেশের সঙ্গে সম্পর্কে অনিশ্চয়তা।
পরবর্তী মার্কিন প্রশাসকের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হতে চলেছে এশিয়া। সিরিয়া নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত তো রয়েছেই, দক্ষিণ চিন সাগর এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অশান্তি দিন দিন আরও তুঙ্গে উঠছে। ফিলিপিন্সের মতো আমেরিকার পুরনো মিত্র চিনের প্রতি ঝোঁকার প্রবণতা দেখাচ্ছে। মালয়েশিয়াও তাই।
ওদিকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র সম্ভার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আফগানিস্থানের সমস্যার সমাধান এখনও মেলেনি। ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে সমঝোতা এগোলেও সম্পর্কে যে সুমধুর তা বলা চলে না।
এমনকী, পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু ইজরায়েলের সঙ্গেও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক ইদানিং খুব ভালো নয়। তাছাড়া, ইয়েমেনে আরেক মার্কিন মিত্র সৌদি আরবের আগ্রাসন নিয়েও ওয়াশিংটনকে নানা অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। আরেক মিত্র তুরস্কের সঙ্গেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন বেশ খারাপ, বিশেষ করে গত জুলাইতে তুরস্কে সামরিক অভ্যূত্থান ব্যর্থ হওয়ার পরে। ইস্তানবুল ওয়াশিংটনকে অভিযুক্ত করে এই অভ্যূত্থানের পিছনে কলকাঠি নাড়ানোর জন্য।
ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিস-এর এক্সিকিউটিভে ডাইরেক্টর মার্ক ডুবোভিৎজ জানিয়েছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব তাড়াতাড়িই বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছে, সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনের মতে। তিনি বিশেষ করে ইরানের প্রসঙ্গে সাবধান করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।
অন্যান্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন ইউরোপ এবং এশিয়া অঞ্চলেই মার্কিন প্রশাসন সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হবে আগামী দিনে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন হিলারি ক্লিন্টনকে পছন্দ করেন না। পুতিনের সন্দেহ, ২০১২ সালে রাশিয়াতে যে বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে, তাতে প্রাক্তন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনই মদত জুগিয়েছিলেন। আর এছাড়া উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আমেরিকাকে পরমাণু আক্রমণের হুমকি তো রয়েছেই।
ভিক্টর চা, যিনি একসময়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ জুনিয়রের উত্তর কোরিয়া-বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন, তিনি বলেন উত্তর কোরিয়া যে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই, জানিয়েছে সিএনএন-এর প্রতিবেদনটি। হুমকি, নিষেধাজ্ঞা, বয়কট - বারাক ওবামা প্রশাসনের কোনও নীতিই উত্তর কোরিয়াকে নিরস্ত করতে পারেনি এখন পর্যন্ত।
আট বছর আগের তুলনায় পরিস্থিতি আরও অনেক জটিল এই মুহূর্তে এবং ওবামার উত্তরসূরিকে অনেক কঠিন সমস্যার সঙ্গে যুঝতে হবে প্রতিনিয়ত, বলছেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই।