কীভাবে কেরল হয়ে উঠল 'ভারতের হাওলা রাজধানী'?
প্রতি বছর ২৩ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, কেরলে বছরে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঢোকে হাওলা খাতে। মনে রাখতে হবে, কেরলের প্রচুর ছেলেমেয়ে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে কর্মরত। আবার এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি রয়েছে।
কেরলে বছরে এত বিপুল পরিমাণ টাকা হাওলা পদ্ধতিতে ঢোকে কারণ আগেই বলা হয়েছে যে, এখানকার অনেকে কাজ করে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে। চিন্তার ব্যাপার এই যে, কেরলে হাওলা পদ্ধতিতে টাকা পাঠায় জঙ্গি সংগঠনগুলিও। সেই টাকা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতে। তা ব্যবহার হয় নাশকতার কাজে। দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর ও আমেদাবাদে হাওলার টাকা ব্যবহার করেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে নিশ্চিত হয়েছেন ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: হাওলা কী, কাজ করে কীভাবে: সংক্ষিপ্ত আলোচনা
পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে কর্মরত কেরলের ছেলেমেয়েরা বাড়িতে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে হাওলা পদ্ধতিকেই বেছে নিয়েছে। আগেই বলেছি, শুধু সাধারণ ছেলেমেয়েরাই নয়, জঙ্গিরাও হাওলা পদ্ধতিতে টাকা পাঠায় বাড়িতে। এখন বিষয় হল, হাওলা পদ্ধতিতে পাঠানো টাকার পরিমাণ এতই বিপুল যে, কোনটা জঙ্গিদের টাকা আর কোনটা সাধারণ ছেলেমেয়েদের টাকা, তাই-ই ধরতে পারছেন না গোয়েন্দারা।
সবচেয়ে বেশি হাওলা দালাল
দেশে যেখানে সবচেয়ে বেশি হাওলার দালাল বা 'হাওলাদার' রয়েছে, সেটা হল কেরল। দিল্লির চেয়েও বেশি হাওলাদার রয়েছে এখানে। দিল্লিতে যেখানে সংখ্যাটা হল ২৮০, সেখানে কেরলে হল ৪০০ জন। এই দালালরা টাকার প্রেরকদের সম্পর্কে কোনও খোঁজখবর করে না। কেরল হল হাওলার দালালদের স্বর্গরাজ্য। রাজ্য সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না। এর কারণ হল, এই দালালরা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলে। হাওলার টাকার একটা অংশ ঘুষ হিসাবে দেয় নেতাদের। ফলে, এদের টিকিও কেউ ছুঁতে পারে না।
জঙ্গিদের অক্সিজেন
ইনটেলিজেন্স ব্যুরো ও কেরল পুলিশ একযোগে তদন্ত চালিয়ে দেখেছে যে, কেরলের একটি জেলখানা থেকে অন্তত দু'হাজার বার ফোন করা হয়েছে পশ্চিম এশিয়াতে। হাওলা মাধ্যমে টাকা চেয়ে এই ফোন করা হয়েছে। ২০০২ সালে হাওলা পদ্ধতিতে কেরলে যেখানে ৭০৩ কোটি টাকা ঢুকেছিল, সেখানে ২০১৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
বেকার যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে
বেকার যুবকদের হাওলাদার হিসাবে নিযুক্ত করা হচ্ছে। তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, কাজ পেতে মরিয়া যুবকদের ভালো রোজগারের টোপ দেওয়া হচ্ছে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এদের নিযুক্ত করা হচ্ছে। মোটামুটি রোজ এরা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা রোজগার করছে। শুধু টাকাই নয়, সোনা-রুপোও পাচার করা হয় হাওলা মারফত।
ডিরেক্টর অফ রেভিনিউ ইনটেলিজেন্সের মতে, কেরলের কন্নুর, মল্লপুরম ও পলক্কডে হাওলার নেটওয়ার্ক সবথেকে বেশি শক্তিশালী।
ধর্মীয় বিষয়ে টাকা ঢালা হচ্ছে
অন্তত ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ধর্মীয় কাজের নাম করে কেরলে টাকা পাঠানো হচ্ছে পশ্চিম এশিয়া থেকে। টাকার বাণ্ডিলের সঙ্গে কাগজ সেঁটে দিয়ে লিখে দেওয়া হয়, ধর্মীয় কারণে এই টাকা পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ যদি ঘটনাচক্রে এই টাকা ধরেও ফেলে, তা হলে তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দেয়। পাছে ধর্মীয় তহবিলের টাকা আটকালে সাম্প্রদায়িক গণ্ডগোল বাধে, এই ভয়ে তারা বেশি দূর এগোয় না।
সোনা পাচার
হাওলা পদ্ধতিতে শুধু টাকা নয়, পাঠানো হয় সোনাও। কেরলে বেড়াতে গিয়ে হয়তো কোনও ট্রাভেল এজেন্ট বা হোটেলকর্মীর সঙ্গে আপনার পরিচয় হল। আপনি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারবেন না যে, লোকটি হাওলার সঙ্গে যুক্ত। এদের গ্রাহকরা বেশ অর্থবান লোকজন। সরকারকে শুল্ক না দিয়ে সোনা পাচার করা ও পরে বেশি দামে বিক্রি করে অবৈধ মুনাফা লুটতে হাওলা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। কেরলে বিয়ের মরশুমে সবচেয়ে বেশি সোনা পাচার হয় হাওলা মারফত।