হাওলা কী, কাজ করে কীভাবে: সংক্ষিপ্ত আলোচনা
হাওলা কী
'হাওলা' একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ, লেনদেন। মূলত পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে একদল দালাল রয়েছে। এরা পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। চিরাচরিত ব্যাঙ্ক বা অর্থব্যবস্থায় যে টাকা লেনদেন হয়, হাওলা হল তার সমান্তরাল একটি পদ্ধতি।
ব্যবসার খাতিরে প্রথম হাওলার উদ্ভব। প্রাচীনকালে টাকা বা সোনা নিয়ে দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দেওয়া নিরাপদ ছিল না। তখন টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে হাওলা পদ্ধতি সৃষ্টি হয়। আধুনিক যুগে দেখা গেল, বিদেশে বিশেষত পশ্চিম এশিয়ায় কর্মরত অভিবাসীরা দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে হাওলা পদ্ধতির আশ্রয় নিতে লাগল। ব্যাঙ্ক মারফত টাকা পাঠাতে গেলে কাগজপত্র (ডকুমেন্টস) থাকতে হবে এবং কর দিতে হবে। কিন্তু হাওলার ক্ষেত্রে এ সব দরকার নেই। হাওলা গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ, জঙ্গিরা নাশকতা চালাতে যে অর্থ জোগাড় করে কিংবা রাজনীতিবিদরা ভোটের সময় যে খরচ-খরচা করে, তার সিংহভাগ টাকা আসে এই পদ্ধতিতে।
কীভাবে কাজ করে হাওলা
একদল দালাল থাকে টাকা সংগ্রহ করার জন্য। এদের বলা হয় হাওলাদার। ধরা যাক, একটি দেশে থাকা হাওলাদার কারও থেকে টাকা পেল। তখন সে যোগাযোগ করবে যেখানে টাকা পাঠাতে হবে, সেই দেশে নিজের এজেন্টের সঙ্গে। এ বার সেই এজেন্টকে টাকা পাঠানোর পাশাপাশি একটা 'পাসওয়ার্ড' দেওয়া হবে। এমন একটি শব্দ, যা মনে রাখতে হবে এজেন্টকে। যে লোকটিকে এজেন্ট টাকা দেবে, তাকেও বলে দেওয়া হবে ওই শব্দ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এসে ওই 'পাসওয়ার্ড' এজেন্টকে বললে তবেই এজেন্ট টাকা তুলে দেবে গ্রাহকের হাতে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) তদন্ত করে দেখেছে, ইদানীং সময়ে হাওলার ক্ষেত্রে 'স্টার', পান খায়া' ইত্যাদি শব্দ 'পাসওয়ার্ড' হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটা লেনদেনের ক্ষেত্রে হাওলাদাররা দুই শতাংশ কমিশন নেয়। মুখে-মুখে লেনদেন হয় বলে ব্যাঙ্ক বা বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে এর কোনও প্রমাণ থাকে না।
ভারতের চিত্র
ভারতে হাওলা লেনদেনের ছবিটা ভয়াবহ। আইআইএম ব্যাঙ্গালোরের অধ্যাপক আর বৈদ্যনাথনের মতে, ভারত গত ছয় দশকে কর ফাঁকি বাবদ দেড় লক্ষ কোটি ডলার হারিয়েছে। আর এর ৪০ শতাংশই হয়েছে হাওলা লেনদেনের কারণে।
হাওলা অবৈধ
হাওলা নিয়ে যা আইন আছে, তা খুব কড়া। কিন্তু হাওলায় এত বিপুল টাকা দেওয়া-নেওয়া হয় যে, গোয়েন্দারা এখন তা বন্ধ করতে পারেননি। বিদেশে কর্মরত অনেক ভারতীয় আছেন, যাঁরা ব্যাঙ্ক মারফত টাকা পাঠান না। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশে হয়তো বেআইনিভাবে বসবাস করছেন। ব্যাঙ্কে গেলে নাম-ঠিকানা দিয়ে টাকা পাঠাতে হবে। সেক্ষেত্রে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বাড়িতে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে হাওলার আশ্রয় নিতে হয়। ভারতে হাওলায় টাকা লেনদেন বেআইনি ঘোষিত হয়েছে দু'টি আইন মারফত। একটি হল ফেমা বা ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০০ এবং প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২।
তবুও এটা লোকে ব্যবহার করে
বিশ্ব
তথা
ভারতে
ধরপাকড়
সত্ত্বেও
লোকে
হাওলাতেই
ভরসা
রেখেছে।
টাকা
লেনদেনের
ক্ষেত্রে
হাওলাকে
ব্যবহার
করছে।
বিভিন্ন
কারণে
হাওলার
ওপর
আজও
নির্ভর
করছে
অনেকে।
কারণগুলি
হল:
- বেআইনিভাবে বিদেশে বসবাসকারীরা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা পাঠায় না। সেখানে নাম-ধাম, আয় ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে বলে। হাওলায় কাগজপত্রের ঝক্কি নেই, আয়ও জানাতে হয় না কাউকে।
- হাওলায় যে দালাল বা এজেন্টরা থাকে, তারা খুবই বিশ্বস্ত। কারও থেকে টাকা নিয়ে ঠকিয়েছে, টাকা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেয়নি, এমন ঘটনা সাধারণত ঘটে না।
- ব্যাঙ্ক মারফত টাকা পাঠাতে গেলে যে পরিমাণ কমিশন দিতে হয়, হাওলায় তার পরিমাণ অনেক কম। তাই সাশ্রয় হয়।
- হাওলায় যত খুশি টাকা পাঠাও, কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু ব্যাঙ্ক মারফত পাঠানো টাকার পরিমাণ বেশি হলে হাজারো প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।
(কেরলকে 'ভারতের হাওলা রাজধানী' বলা হয়। কেন? প্রকাশিত হবে আগামীকাল)