জিএসটি-র চালু করার পিছনে মূল কারিগর কারা? জেনে নিন একনজরে
১৯৯৯ সালে জিএসটির মূল ধারণা উত্থাপিত হয়। জিএসটি বলবৎ করার জন্য যা করা প্রয়োজন তা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ইউপিএ সরকারের আমলে ৮০ শতাংশ কাজ করে গিয়েছিল।
১৯৯৯ সালে জিএসটির মূল ধারণা উত্থাপিত হয়। জিএসটি বলবৎ করার জন্য যা করা প্রয়োজন তা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ইউপিএ সরকারের আমলে ৮০ শতাংশ কাজ করে গিয়েছিল। পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তিন বছরের মাথায় তা চালু করতে চলেছে। [আরও পড়ুন : অন্য দেশগুলিতে কীভাবে ও কবে জিএসটি বলবৎ হয়েছে জানেন কি]
প্রায় ১৮ বছরের চিন্তাভাবনা, কঠিন অধ্যাবসায় ও পরিকল্পনার ফসল এই জিএসটি কর ব্যবস্থা। এর আগে ১৯৮৬-৮৭ সালে মোডভ্যাট নামে কর চালু করেছিল রাজীব গান্ধীর সরকার। সেইসময়ে কেন্দ্রে অর্থমন্ত্রী ছিলেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং। পরে ১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর আমলে এনডিএ সরকার জিএসটি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে। [আরও পড়ুন : শুধু জিএসটি নয়, ১ জুলাই থেকে আরও অনেক কিছু বদলে যেতে চলেছে]
অটল বিহারী বাজপেয়ী
অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন জিএসটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেইসময়ে অটল ও তাঁর তিনজন সহযোগী প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর আইজি প্যাটেল, বিমল জালান ও সি রঙ্গরাজন জিএসটির প্রস্তাব দেন। সারা দেশে অভিন্ন কর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এরপরে ২০০০ সালে কেন্দ্রের বাজপেয়ী সরকার কমিটি গঠন করে। যার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। অসীমবাবুকে জিএসটি মডেল তৈরি করতে বলা হয়। বাজপেয়ী নিজে তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে অনুরোধ করেন যাতে অসীমবাবুকে এই বিষয়ে কাজ করার জন্য ছাড়া হয়।
অসীম দাশগুপ্ত
দেশের অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদদের একজন হলেন অসীম দাশগুপ্ত। পদে থাকাকালীন আর্থিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অত্যন্ত সাবলীলভাবে। তিনি একজন এমআইটি ডক্টরেট। অটলবিহারী বাজপেয়ী ছাড়াও পরে মনমোহন সিং সরকার কেন্দ্র ক্ষমতায় এলেও জিএসটি কমিটির প্রধানের পদ থেকে তাঁকে সরাননি তিনি। মনমোহন সিং নিজে অর্থনীতিবিদ হয়ে বুঝেছিলেন অসীমবাবু জিএসটি কমিটির প্রধান হিসাবে যেকাজটা করছেন তা অতুলনীয়।
মোট ৭ বছর জিএসটি কমিটির প্রধান থাকার পরে মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রিত্বে জিএসটি বিল নিয়ে আরও একটি কমিটির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। ২০১১ সালে তিনি জিএসটি কমিটি থেকে ইস্তফা দেন। তবে ততদিনে ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল।
কেএম মনি
কেরলের এই অর্থমন্ত্রী ২০১১ সালে অসীম দাশগুপ্তের পর জিএসটি কমিটির হাল ধরেন। জিএলটি বিল চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নেন। এক্ষেত্রে সরকারের হয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেন কেএম মনি। তবে ২০১৫ সালে তিনিও পদত্যাগ করেন।
অমিত মিত্র
কেএম মনি জিএসটি কমিটি থেকে বেরনোর পরে ফের একবার বাংলারই কৃতী অর্থনীতির ছাত্র তথা বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে জিএসটি কমিটির প্রধান করা হয়। অমিতবাবু আগে ফিকি বা বণিকসভার মহাসচিব ছিলেন। জিএসটির বাকী কাজগুলি তাঁরই নেতৃত্বে সেরে ফেলা হয়। এবং দেশে নতুন কর ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে।
পি চিদাম্বরম
দেশের দ্বাদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম জিএসটি নিয়ে দায়বদ্ধতা দেখান। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে তিনি জিএসটি চালু করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। নিজের বাজেট ভাষণেও জিএসটি নিয়ে তিনি বক্তব্য রাখেন। তবে তার পরে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়ে অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনিও জিএসটি খসড়াকে অনুংমোদন দেন। তবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলের শেষদিকে নীতিপঙ্গুত্বের কারণে আর জিএসটি বলবৎ করা যায়নি।
অরুণ জেটলি
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল জিএসটি চালু করবেন বলে ঠিক করেন। তবে পরে ২০১৭ সালের ১ জুলাই জিএসটির চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৬ সালেই জিএসটি বিল সংসদে পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্র। এবার মধ্যরাতে বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে জিএসটি বলবৎ হতে চলেছে।