যক্ষ্মারোগে ভারতের অবস্থা বিশ্বের নিরিখে সবচেয়ে শোচনীয়, বলছে হু-র রিপোর্ট
যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এই রোগের কি পরিস্থিতি তা জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। তাতেই যে রিপোর্ট এসেছে তা ভারতের জন্য ভয়াবহ।
ক্যানসার, এইচআইভি-র মতো রোগে যেখানে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছেন, সেখানে ভারতের অবস্থাও শোচনীয়। তবে সন্তর্পনে, একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে যে রোগ ভারতে দাপট দেখাচ্ছে তা হল টিবি বা যক্ষ্মা রোগ। [যৌন দাসত্বের কারবারে ভারতের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গ]
যক্ষ্মা রোগ সংক্রান্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্ট সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সারা বিশ্বে এই রোগের কি পরিস্থিতি তা জানতে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। তাতেই যে রিপোর্ট উঠে এসেছে তা ভারতের প্রেক্ষিতে আশঙ্কার তো বটেই, ভয়াবহও বটে। ['গ্রামীণ ভারত নিমজ্জিত অপুষ্টিতে', ভয়াবহ তথ্য পেশ জাতীয় পুষ্টি পর্যবেক্ষণ ব্যুরোর]
হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ভারতে যেখানে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা ২২ লক্ষ ছিল, সেখানে ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৮ লক্ষ। এছাড়া বছরে গড়ে এদেশে এই রোগে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজারের মতো। যেখানে সারা বিশ্বে যক্ষ্মায় মোট মৃতের সংখ্যা ১৮ লক্ষ। ফলে ভারতে সবচেয়ে বেশি মানুষ যক্ষ্মায় মারা যাচ্ছেন বলে হু-র রিপোর্টে বলা হয়েছে। [দশম শ্রেণি পাশ করার পরই ভারতে পড়াশোনায় ইতি টানে ৪৭০ লক্ষ ছেলেমেয়ে!]
এই রিপোর্ট ভারতের জন্য সতর্কবাণী বলেই মনে করা হচ্ছে। কীভাবে টিবির সঙ্গে লড়া সম্ভব এবং কীভাবে তা নির্ধারণ করে আমজনতার জীবন বাঁচানো যায় তা সরকারের আশু লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভারতের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া, চিন, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা মেলালে সারা বিশ্বের মোট ৬০ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্তের বাস এই কয়েকটি দেশেই। [আধুনিক ভারতে এখনও ক্রীতদাস প্রথায় বাধ্য ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ]
সবচেয়ে ভয়ের কথা, যত দিন যাচ্ছে, ততই এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। এবং অনেক ক্ষেত্রে সঠিক রোগীর সংখ্যা ধরারই পড়ছে না কারণ রোগ যাচাইয়ে খামতি থেকে যাচ্ছে। ভারতের মতো দেশে যক্ষ্মার মতো রোগ চিনতে না পারাটাও একটা বড় সমস্যা তৈরি করছে।
ভারতের মতো বিশাল দেশে সরকারি চিকিৎসার পাশাপাশি বহু মানুষ বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা করাতে বাধ্য হন। আর সেক্ষেত্রে বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি টিবি সম্পর্কে সবসময় সঠিক রিপোর্ট তুলে ধরে না। ফলে সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত, চিন আর রাশিয়াকে ধরলে বিশ্বের মোট ৫০ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত এই তিন দেশে রয়েছেন। এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে একজায়গায় ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় কোথাও মতামত নেওয়ার মতো অবস্থায় থাকেন না ভারতের বেশিরভাগ রোগাক্রান্ত। আর সেজন্যই রোগীর সংখ্যা কমার বদলে দিন-দিন বেড়ে চলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ভারতের মতো দেশে চিকিৎসার পরও সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা শতকরা ৫০ শতাংশেরও কম। একই অবস্থা ফিলিপিন্স, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইউক্রেনে। ভারতে এই রোগকে এখনই কব্জা করা না গেলে অদূর অভিষ্যতে তা মহামারীর আকার নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেজন্য এই ধরনের রোগের মোকাবিলা করতে আরও বেশি করে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ যাতে মঞ্জুর করা হয়, সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
ভারতের গরিব জনসংখ্যাকে যক্ষ্মার হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে। এখন দেখার এরপর ভারত সরকারের কি পদক্ষেপ হয়।