শূণ্য থেকে শুরু করলে ভোটারদের আনুকুল্য পাওয়া অসম্ভব নয় সিপিএমের, তবে সময় লাগবে
বিধানসভা ভোট-যুদ্ধে অপ্রসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার পর এখনও ‘গৃহযুদ্ধ' অব্যাহত সিপিএমের। এখনও তারা ভাবছে কী করবে? কী হবে তাদের পথ? কংগ্রেসর সঙ্গে জোট? না কি একলা চলো?
চূড়ান্ত ফয়সালা এখনও হয়নি সিপিএমে! বিধানসভা ভোট-যুদ্ধে অপ্রসঙ্গিক হয়ে যাওয়ার পর এখনও 'গৃহযুদ্ধ' অব্যাহত। এখনও তারা ভাবছে কী করবে? কী হবে তাদের পথ? কংগ্রেসর সঙ্গে জোট? না কি একলা চলো? তবে এবার বেসুরো বাজছে বঙ্গ সিপিএমের জোটগান? ভাবনা শুরু শূন্য থেকে শুরু করার।
সত্যি কথা বলতে কি কংগ্রেসেকে সঙ্গে নিয়েই তারা চলবে? না কি একা? এই প্রশ্নে এখনও বিতর্ক থামেনি। যথারীতি কারাত-সহ কেরল লবির চাপে ইয়েচুরি এবং সূর্যকান্ত-সহ বাংলা লবি কোণঠাসা হয়েছিল অনেক আগেই। কারাতরা এই লড়াইয়ে পাশে পেয়ে গিয়েছেন বাংলা লবির একাংশকেও। ইয়েচুরিকে 'ডাউন' করার সুযোগ তাই হাতছাড়া করতে চায়নি কারাত লবি।
যদি জোট ক্লিক করে যেত, তাহলে কারাত লবি এভাবে গলা চড়াতে পারত না। ক্লিক করেনি বলেই বাংলা লবিকে একহাত নিয়ে জোটের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে বলে দিয়েছেন কারাতরা। পক্ষান্তরে গত দুটো লোকসভায় কারাত-লাইনও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এবার বিধানসভায় ইয়েচুরি-সূর্যকান্তদের জোট লাইনও ক্রমশ বেলাইন হয়ে পড়ছে। এখন বিমান বসুর মতো নেতারা জোট-তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে একলা চলতেই পছন্দ করছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের মুখে ফ্রন্টের ছোটো শরিকদের কথারই প্রতিধ্বনি।
এখন সিপিএমের বসে ঠিক করতে হবে এই ৫ বছর কোন লাইনে চলবে? যাতে তারা ফের ২০২১ ক্ষমতায় ফিরতে পারে বা ফেরার পথ মসৃণ করতে পারে। ইতিহাস বলছে বিপুল আসন পাওয়া এবং বিরোধী কন্ঠকে কোণঠাসা করার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। মাঝের এই ব্যবধান মুছে দিতে পারে সুযোগকে সদ্ব্যবহার করার বুদ্ধিমত্তা। আগামী ৫ বছর দীর্ঘ সময়। সিপিএম কি পারবে তা মুছে দিতে?
ইতিহাসই
বলছে
সম্ভব।
তবে
তার
শর্টকাট
পথ
করলে
হবে
না।
বিশেষজ্ঞদের
মতে,
বামেরা
আবার
যদি
শূন্য
থেকে
শুরু
করে,
ভোটারদের
আনুকুল্য
পাওয়া
অসম্ভব
নয়।
জোটের
ভূত
এরপরও
থাকলে
২০১৯-এ
তো
বটেই,
২০২১-এও
শোটনীয়
অবস্তা
হবে।
বামেরা
রাজ্যে
জমি
হারাতে
শুরু
করে
২০০৮-০৯
থেকে।
ছোটখাটো
ভরা
কোটালের
বানই
যে
২০১১-এ
সুনামি
হয়ে
ধাক্কা
দেবে,
তা
মনুষ
বুঝে
গিয়েছিল।
বোঝেনি
বামেরা।
৩৪ বছরের ক্ষমতা মারণ রোগ হয়ে যে ছোবল মারবে, তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ২০১১-র পর মধ্য ও নীচুতলার নেতাকর্মীরা আবার শূন্য থেকে শুরুর দাবি তুলেছিলেন। আর চেয়েছিলেন পক্ককেশ, বৃদ্ধাশ্রমকে হঠিয়ে সিপিএম তথা বামেরা ঝকঝকে একঝাঁক তরুণকে সামনে আনুক। তাদের প্রোজেক্ট করে লড়াই শুরু করুক। ৫ বছরের ঘসামাজায় তাদের গ্রহণযোগ্য করে তোলা হোক। তা করা হয়নি। বদলে গত ৫ বছর ধরে মানুষ দেখেছে পক্ক চুল আর বয়সের ভারে ন্যুব্জ নেতাদের দাপাদাপি। যাদের ঝুঁকি নিয়ে দাপিয়ে নতুন ভাবনা রূপায়িত করার তেজ বা জোশ নেই।
বরং বারবার মনে হয়েছে মননের দেউলিয়াপনা তাদের গ্রাস করেছে। টগবগে দাপিয়ে বেড়ানো তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে তাদের টিমটিমে মনে হয়েছে। ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকতে চান না। তাই তাঁরা শর্টকাট পথ হিসাবে বেছে নেয় জোটের পথ। আর কোনও বিকল্প পথের সন্ধান দেউলিয়া মস্তিষ্ক দিতে পারেনি।
অথচ বামেদের ঐতিহ্য গৌরবজ্জ্বল। দশকের পর দশক ধরে বহু লড়াই ঘাম রক্তক্ষয়ের মধ্যে দিয়ে তারা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছতে পেরেছিল। এই যে জোটের নামে বামেরা স্বেচ্ছায় রাজ্যের এক তৃতীয়াংশ জমি ছেড়ে দিল। ১০০ আসনে তাদের ভোটারদের অন্য প্রতীকে ভোট দিতে বললেন, তার কতটা ফিরিয়ে আনা যাবে- বাম নেতৃত্ব কি ভেবে দেখেছেন সেই কথা?
আসলে মানুষের আস্থা আদায়ের পথটা ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলতে পারেনি বামেরা। যা পেরেছিল শাসকদল। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে তারা ব্যর্থ। শক্তিশালী বিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি বামেরা। তাই কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করে এবার নিজেদের শক্তিশালী বিপক্ষ কর গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু হোক। সেই লক্ষ্য শুরু হোক একলা পথ চলা। সেটাই শ্রেয় হবে বামেদের। উপনির্বাচনের আগে অন্তত সেই ভাবনা বঙ্গ সিপিএমের অন্দরে। দেখাই যাক সেই ভাবনার ভবিষ্যৎ কী?