ট্রাম্প যদি রক্ষক হন, তিনিই ভক্ষক হবেন না তো? আশঙ্কায় আম মার্কিন নাগরিক
এবারের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে ওই একটি টেপ। আর সবকিছু মাথায় উঠেছে । পৃথিবীর একমাত্র সুপারপাওয়ারের রাজনীতিতে এখন একটাই ইস্যু -- রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মহিলাদের কী নজরে দেখেন।
গত রবিবার (অক্টোবর ৯) নিউ ইয়র্কের টাউন হলে আয়োজিত দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দ্বিতীয় বিতর্কসভাতে সবার চোখ ছিল ট্রাম্প এক দশক পুরোনো ওই টেপ প্রসঙ্গে কী বলেন। যদিও ট্রাম্প আগেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাতে বিশেষ কিছু কাজ হয়নি। সমালোচকরা এবং বিশেষ করে মার্কিন মুলুকের মহিলা ভোটাররা ভেবেছিলেন যে ট্রাম্প এই বিতর্কসভার মঞ্চটিকে কাজে লাগাবেন নিজের বদনাম ঢাকতে।
কিন্তু কোথায় কী? বিতর্কটা ট্রাম্পকে বারংবার বলতে শোনা গেল যে ২০০৫ সালে উনি যা বলেছেন, তা নেহাতই "সাজঘরের মস্করা"। ট্রাম্পকে এব্যাপারে আদৌ লজ্জিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের অনেক মহিলাই যাঁরা আগামী ৮ই নভেম্বর মূল নির্বাচনে নিজেদের মতামত জানাবেন।
ব্যবসায়িক ক্ষমতার অহং-ই যদি এই হয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পেলে ট্রাম্প কী করবেন?
আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আম জনতা এখন ট্রাম্প সম্বন্ধে সন্ত্রস্ত। সামান্য ব্যবসায়ী হয়েই যাঁর ক্ষমতার এত অহংকার, যদি সত্যি সত্যি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পান যিনি, তাহলে কী যে হবে!, ভাবছেন অনেকেই।
আর ট্রাম্পের এই 'আদিম পৌরুষ' আদতে সাহায্য করছে তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিন্টনকেই। ছত্রভঙ্গ করেছে নিজের দলকে । ঐকবদ্ধ করেছে ডেমোক্র্যাটদের। এই কোলেট ম্যাকল্যাফারটির কথাই ধরুন। এই ডেমোক্র্যাট সদস্য প্রথমে ভেবেছিলেন যে তিনি গ্রিন পার্টির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জিল স্টেনকে ভোট দেবেন। কিনতু ট্রাম্পের কুমন্তব্য তাঁকে এখন ঠেলে দিচ্ছে হিলারির দিকেই, জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন।
ট্রাম্পের আর কোনও কথাই কেউ শুনবে না, ডেমোক্র্যাটদের পোয়াবারো
আর এখানেই ট্রাম্পের পরাজয়। ধনকুবের এই পদপ্রার্থী এখন রাষ্ট্ৰীয়স্তরে যাই বলুন না কেন -- যেমন মার্কিন বাণিজ্য নীতি, বিদেশ নীতি বা শরণার্থী কিংবা সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে কী অবস্থান নেওয়া উচিত হোয়াইট হাউসের; আপামর জনসাধারণের লক্ষ্য এখন স্থির থাকবে তাঁর ওই টেপে বন্দি হওয়া বচনের দিকেই। আর তাঁর জন্যে দায়ী ট্রাম্প নিজেই ।
ডেমোক্র্যাটদের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নেওয়া তো দূরের কথা, তিনি এখন নিজের গর্ত নিজেই খুঁড়ে বসে আছেন। আম মার্কিনিরা এখন আর বিদেশনীতি বা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভাবিত নন, তাঁরা ভাবছেন যাঁকে তাঁরা রক্ষক ভাবছেন, তিনিই শেষ পর্যন্ত না ভক্ষক হয়ে ওঠেন।
অবশ্য ট্রাম্পের পক্ষে যে কেউই নেই তা নয় । অনেকেই আছেন যাঁরা ভদ্রলোককে 'মানুষ' বলে মাফও করে দিচ্ছেন আর বলছেন রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়ার পর এইসবের আর কোনও গুরুত্বই থাকবে না। কিনতু বেশিরভাগই মনে করছেন যে ট্রাম্পের কথাবার্তা মোটেই সুবিধের ঠেকছে না; এমনকি ওই টেপকাণ্ডের পরেও না।
মহিলা প্রতিপক্ষ ট্রাম্পকে আরও কোনঠাসা করেছে
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বিপক্ষে একজন মহিলা পদপ্রার্থী। মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শেষলগ্নে আজ পর্যন্ত কোনও মহিলা-পুরুষের সামনাসামনি লড়াই হয়নি । হিলারির উত্থান সেদিক দিয়ে যেমন নয়া ইতিহাস রচনা করেছে, তেমনই নারীবিদ্বেষী ট্রাম্পকে ফেলেছে আরও বিপাকে ।
ট্রাম্প কোন পথ দিয়ে নিষ্কৃতি পাবেন, তা তিনি এবং তাঁর প্রচার সহযোগীরাই বলতে পারবেন । আর মার্কিন ভোটাররা কিভাবে এই দুঃস্বপ্নের প্রার্থীর থেকে রেহাই পাবেন, বা আদৌ পাবেন কিনা, তা জানা যাবে সামনের মাসের আট তারিখে।