শিক্ষক দিবস স্পেশাল : ভারতের সর্বকালের সেরা শিক্ষক ও তাঁদের অবদান
আজ শনিবার সারা দেশে পালিত হচ্ছে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান। প্রতিটি স্কুলে, কলেজে বা নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজের প্রিয় শিক্ষককে সম্মান জানাতে ব্যস্ত ছাত্রছাত্রীরা।
এই শিক্ষকরা তো রয়েইছেন যারা ব্যক্তিগতভাবে কাছে থেকে প্রতিটি যুব প্রাণকে সাহস দিচ্ছেন, এগিয়ে চলার প্রেরণা যোগাচ্ছেন। তাঁদের এই কর্মকাণ্ড সত্যিই তারিফ করার মতো।
তবে এছাড়াও কিছু মানুষ যাঁরা ভারতবর্ষের মাটিতে জন্মে আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছেন, নিজেদের শিক্ষা, চেতনা ও আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়ে জাতির জ্ঞানচক্ষুকে খুলে দিয়েছেন। সেই মনীষীরাও আমাদের প্রত্যেকের শিক্ষক।
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে শুরু করে ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ ও সদ্য প্রয়াত এপিজে আব্দুল কালাম। প্রত্যেকেই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন জাতির মধ্যে। নিচের স্লাইডে জেনে নিন এমনই কিছু মনীষীদের শিক্ষায় অবদানের কথা।
ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ
তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি পুঁথিগত বিদ্যার চেয়েও আধ্যাত্মিক জ্ঞানের উপর বেশি ভরসা রেখেছিলেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে দর্শনে স্নাতকোত্তর শেষ করে তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ানো শুরু করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত শিক্ষাক্ষেত্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।
স্বামী বিবেকানন্দ
কলকাতায় জন্মানো এই মানুষটিই প্রথম বিশ্বসভায় ভারতবর্ষের নামকে উঁচুতে তুলে ধরেন। তাঁর শিক্ষা যুবসমাজের চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করার তাঁর ভাবনা জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই চেয়েছিলেন তিনি।
গৌতম বুদ্ধ
যিশুখ্রিষ্টের জন্মের আগে ৪৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নেপালে জন্ম নেন গৌতম বুদ্ধ। যুবক বয়সে জাগতিক সুখকে ত্যাগ করে তিনি সাধনায় ব্রতী হন। তাঁর ভাবনা, আদর্শ আমাদের সকলের পাথেয়।
মহর্ষি বাল্মিকী
সংস্কৃতের মহাপণ্ডিত ছিলেন মহর্ষি বাল্মিকী। রামায়ণ, রামচরিতমানসের মতো কাব্যগ্রন্থের জনক এই বিদ্বান মানুষটি।
বেদ ব্যাস
মহাভারত রচনা করেন বেদ ব্যাস। বিষ্ণুর অবতার ছিলেন বেদ ব্যাস, এমনটাই মনে করা হয়। বেদের আসল সংস্করণকে চারভাগে ভাগ করে ঋক, সাম, যজু, অথর্বে ভাগ করেন তিনিই।
রামকৃষ্ণ পরমহংস
পুঁথিগত শিক্ষা না থেকেই কীভাবে নিজের এবং অন্যের জ্ঞানচক্ষুর পর্দা খুলতে হয়, তা রামকৃষ্ণের চেয়ে ভালো কেউ পেরেছেন বলে মনে হয় না। তাঁর জ্ঞান, চেতনা, দিব্য ভাবনায় তিনি ঈশ্বরের দেখা পেয়েছিলেন। এমন মানুষের কথা আমাদের সকলের পাথেয়।
শঙ্করাচার্য
৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা শঙ্করাচার্য কুসংষ্কারের সঙ্গে লড়াই করে গিয়েছেন। চেতনার জাগরণ ঘটানোর এটা মস্ত বড় একটি দিক, বিশেষ করে সেই সময়ের কুসংষ্কারাচ্ছন্ন ভারতে। এমন শিক্ষক আজকের দিনেও প্রয়োজন রয়েছে।
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী
আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মহান সাধক ছিলেন। বৈদিক ধারণার সংষ্কার সাধন করেন তিনি। আধুনিক ভারতের অন্যতম রূপকার তিনি।
চাণক্য
ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা চাণক্য ছিলেন মস্ত অর্থনীতি বিশারদ, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ। প্রাচীন ভারতে অর্থশাস্ত্রের পাঠ পড়ান তিনিই। তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
আর্যভট্ট
বিখ্যাত গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন আর্যভট্ট। পাটীগণিত, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি সহ একাধিক গাণিতিক বিষয় আবিষ্কার করেন তিনি।
রাজা রামমোহন রায়
ভারতের প্রথম আধুনিক পুরুষ হিসাবে ডাকা হয় রাজা রামমোহন রায়কে। অসম্ভব পণ্ডিত এই মানুষটি কুসংষ্কারের বিরুদ্ধে সারা জীবন লড়ে গিয়েছেন। সতীদাহ প্রথা রদ করা, পণ প্রথার বিরুদ্ধে সরব হওয়া এসবেরই বহিঃপ্রকাশ। আধুনিক ভারত গড়তে তাঁর অ্যতম অবদান রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শিক্ষার আলোকে শুধু নিজের রচনার মধ্য দিয়ে নয়, কাজের মধ্য দিয়েও ছড়িয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ। বোলপুরের শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় স্থাপন করেন কবিগুরু যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়।
শিক্ষাকে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে রেখে নয়, প্রকৃতির মাঝে থেকে আহরণ করার জন্য এখনও সেখানে বাগানে গাছের নিচে ক্লাস নেওয়া হয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ করে তোলেন বিদ্যাসাগরই। তিনিই বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন।
এপিজে আব্দুল কালাম
ভারতের 'মিসাইল ম্যান' নামে খ্যাত এই প্রথিতযশা বিজ্ঞানী শুধু বিজ্ঞানের দিক থেকেই ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাননি। শিক্ষাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। জীবনের শেষ মুহূর্তেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের মাঝেই বক্তৃতা করতে করতে প্রাণত্যাগ করেন।