শহরের আতঙ্ক এবার 'ফেসবুক কিলার'!
আকাঙ্খাকে খুনের পরে তাকে ভার্চুয়ালি 'জীবিত' রেখেছিল উদয়ন। শিনাকেও খুনের পর তাকেও একইভাবে 'জীবিত' করে রেখেছিল শিনার খুনীরা। অপরাধবিজ্ঞানীরাএই ধরনের খুনীদের একটি নাম দিয়েছেন, 'ফেসবুক কিলার'।
কলকাতা, ৫ ফেব্রুয়ারি : নিজের হাতে খুন করেও সোস্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় ভার্চুয়ালি দিব্যি মানুষটিকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখছে মৃতাকে? আকাঙ্খা শর্মা খুনের পর এই প্রশ্ন আবার বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আকাঙ্খাকে খুন করে, প্রেমিক উদয়ন দাস বাড়িতেই আকাঙ্খাকে পুঁতে বেদী বানিয়েছিল। যাতে সন্দেহ না হয় তাই আকাঙ্খার সোস্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এবং ফোন চালু রেখেছিল উদয়ন।
যাতে আকাঙ্খার খুনের বিষয়ে তার পরিবার বুঝতে না পার তাই নিয়মিত হোয়াটয়অ্যাপে আকাঙ্খা সেজে আকাঙ্খার পরিবারের কাছে নিজের কুশল খবর জানিয়ে যাচ্ছিল উদয়ন। ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়েই বাড়িতে ফোন করত না। ঠিক যেমনটা হয়েছিল শিনা বোরার সঙ্গে। শিনাকেও খুনের পর তাকেও একইভাবে 'জীবিত' করে রেখেছিল শিনার খুনীরা। অপরাধবিজ্ঞানীরা গবেষণায় এই ধরনের খুনীদের একটি নাম দিয়েছেন, 'ফেসবুক কিলার'।
মনোবিদদের একাংশের কথায়, এই ধরণের ঘটনায় মনোস্তাত্ত্বিক কোনও সমস্যা সাধারণত হয় না। এরা একেবারে সাধারণ জীবন যাপন করেন। মানসিক বিকার নেই। তবে এরা দ্বৈত জীবন পালন করেন। এদের পার্সোনালিটি ডিসোর্ডার থাকতে পারে যার ফলে সাময়িকভাবে এদের সহানুভূতি, সমবেদনা, অনুশোচনায় অসমর্থ হয় এরা। আবেগের বশবর্তী হয়ে এরা কোনও অপরাধ করলে ধরা পড়ার ভয়ে এরা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় একটু মিথ্যার মুখোশ তৈরি করে।
নিঠারি সিরিয়াল হত্যা মামলায় পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা ফরেন্সিক মনোবিদ জয়দীপ সরকারের কথায়,"এরা কয়েকটি ধরনের হয়। শিকারি (যারা ভুয়া প্রোফাইল, পরিচয়, জীবনযাত্রা তৈরি করে ), প্রতারক (নিজেকেই পীড়িত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়) এবং যারা কল্পনার জগতে বাস করে (যেখানে বন্ধুত্বের চিত্রনাট্য সাজায়, কোনওকিছুর টোপ দেয় এবং তারপর খুন করে।)"
এই ধরণের খুনীদের লক্ষণগুলি কী জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "মূলত সম্পর্ক তৈরি করা বা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কোনও মানুষকে খুন করা, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাড়িতে খুন করা।"
মনোবিদদের একটা বড় অংশই মনে করেন আজকাল কার ব্যস্ততম জীবনে মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ কমছে। তারই ফায়দা ওঠাচ্ছে এই দরনের অপরাধীরা। "আগেকার দিনে কারোর সঙ্গে কয়েকদিন যোগাযোগ না হলেই ঘনিষ্ঠরা নয় সশরীরে পৌঁছে যেত না হয় ফোন করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বাবা-মারা বা অভিভাবকরা অনেক বেশি স্বাধীন মনোভাব পোষণ করছেন। ছেলেমেয়ে শুধুমাত্র সোস্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করতে তাতেও তারা স্বচ্ছন্দ।"
তবে বিশেষজ্ঞরা একটি বিষয়ে একমত যে এই ধরণের ঘটনা আপাতত সংখ্যায় কম। তবে এখন থেকেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে না দেখলে এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা মুহূর্তের মধ্যে বেড়ে যেতে পারেন বলেই আশঙ্কা তাদের।