লক্ষ্মণ শেঠকে দলে নিয়ে কি লক্ষ্যপূরণ সম্ভব? নাকি কালিমাখাই সার বিজেপি-র?
লক্ষ্মণ শেঠকে দলে নিয়ে কি ঠিক করল বিজেপি? এই ‘লাখটাকা'র প্রশ্নটাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে বিজেপি-র অন্দরে। বহিষ্কৃত এই সিপিএম নেতাকে দলে নেওয়া নিয়ে একেবারেই বে-আব্রু হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র অন্দরমহল।
লক্ষ্মণ শেঠকে দলে নিয়ে কি ঠিক করল বিজেপি? এই 'লাখটাকা'র প্রশ্নটাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে বিজেপি-র অন্দরে। বহিষ্কৃত এই সিপিএম নেতাকে দলে নেওয়া নিয়ে একেবারেই বে-আব্রু হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র অন্দরমহল। প্রকাশ্যে চলে এসেছে দিলীপ গোষ্ঠী বনাম রাহুল গোষ্ঠীর লড়াই। পাশাপাশি এ প্রশ্নও উঠেছে, তাঁকে দলে এনে আদতে কি কোনও লাভ হবে আসন্ন তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে? নাকি কলঙ্ক মাখাই সার হল বিজেপি-র?
তাঁর বিরুদ্ধে এখনও নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের খাঁড়া ঝুলছে। এখনও তিনি অভিযোগ 'মুক্ত' নন। আর সিপিএম ছেড়ে নতুন দল গড়েও তিনি যে সফল, তা বলা যাবে না। তবে এ কথা এক বাক্যে স্বীকার করতে হবে যে, তিনি একটা সময়ে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের 'বেতাজ বাদশা' ছিলেন। তাঁর কথাতেই আবর্ত হত, হলদিয়া-তমলুক তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যাবতীয় কাজকর্ম। এমন এক নেতাকে নিজেদের দলে নিয়ে শক্তিবৃদ্ধি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। মূলত বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বদন্যতায় দলে নেওয়া হয়েছে লক্ষ্মণ শেঠকে। আশা, তাঁকে ঘুঁটি করেই তমলুক উপনির্বাচনে তাক লাগানো রেজাল্ট করা।
একটা
সময়
তো
হাওয়ায়
উড়ছিল
লক্ষ্মণ
শেঠকেই
তমলুকে
প্রার্থী
করতে
পারে
বিজেপি।
সেই
কারণেই
তড়িঘড়ি
তাঁকে
দলে
নেওয়ার
ভাবনা।
লক্ষ্মণবাবুও
আবার
গেরুয়া
শিবিরে
গিয়ে
রাজনীতির
মূল
স্রোতে
ফিরতেও
আগ্রহী
ছিলেন।
কিন্তু
লক্ষ্মণ
শেঠকে
দলে
নেওয়ার
পরই
যেভাবে
দিলীপবাবুর
বিরোধী
গোষ্ঠী
অর্থাৎ
রাহুল
সিনহার
শিবির
রে-রে
করে
উঠেছে,
তাতে
থমকে
গিয়েছে
তমলুকে
লক্ষ্মণবাবুকে
প্রার্থী
করার
বিষয়টি।
শুধু
রাহুল-গোষ্ঠীই
নয়,
দিলীপ
গোষ্ঠীর
অনেক
নেতা-নেত্রীদের
মধ্যে
এই
নিয়ে
ক্ষোভ
রয়েছে।
তাঁরা
বুঝে
উঠতে
পারছেন
না,
লক্ষ্মণ
শেঠকে
দলে
নেওয়া
ঠিক
হল
কি
না।
এক কথায় তাঁদেরও সায় নেই লক্ষ্মণবাবুকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে। আর দিলীপ গোষ্ঠীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমেছেন রাহুল-শিবিরের নেতারা। নতুন করে তাঁরা উজ্জীবিত। তাঁদের কথায়, লক্ষ্মণ শেঠের মতো একজন নেতাকে দলে ঢুকিয়ে আদৌ ঠিক কাজ করেননি রাজ্য সভাপতি। তাঁর এই সিদ্ধান্ত দলের জাত খোয়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা এখনও এ রাজ্যে সিপিএমই বিজেপি-র প্রধান শত্রু। সেই দলের বহিষ্কৃত একজন নেতাকে নিয়ে কী লাভ হতে পারে? তার উপর তিনি নন্দীগ্রাম কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, যে ঘটনায় ভর করে রাজ্যে পট পরিবর্তন হয়েছিল সাড়ে পাঁচ বছর আগে। এমন একটা ঘটনায় অভিযুক্তকে দলে নিয়ে প্রভূত লাভ হতে পারে না।
এমন নানা মন্তব্য দলের অন্দরে ও বাইরে ঘোরাফেরা করায় থমকে গিয়েছেন রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু। তাঁর ঘনিষ্ঠমহলেও অনেকে উষ্মা প্রকাশ করেছেন এই বিষয়ে। তাই তিনি এখনই লক্ষ্মণবাবুকে তমলুকে প্রার্থী করা বা দলের গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ দেওয়ার ব্যাপারটা ঝুলিয়েই রাখতে চাইছেন। আসলে লক্ষ্মণবাবুকে দলে নেওয়া একটা বড় ঝুঁকি। এমনিতেই তমলুক লোকসভায় কোনও সম্ভাবনা নেই বিজেপি-র।
এমন একটা অবস্থায় লক্ষ্মণ শেঠকে দলে নিয়ে যদি কোনও 'মিরাকেল' ঘটাতে পারেন দিলীপবাবু, তাহলে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তিনি বাহবা কুড়াতে পারবেন। কিন্তু যদি ব্যর্থ হন, তাহলে কিন্তু দলের অন্দরেই তাঁকে কঠোর সমালোচনায় পড়তে হবে। লক্ষ্মণবাবুকে দলে ঢোকানো নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠবেই। দলের নেতারা সভাপতির কাছে জবাব চাইবেন, কেন দলে নেওয়া হল সিপিএমের বহিষ্কৃত ওই নেতাকে?
সিপিএম থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর ভারত নির্মাণ পার্টি নামে একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গড়েছিলেন লক্ষ্মণবাবু। কিন্তু সেই দল আদতে কোনও নির্বাচনেই ন্যূনতম প্রভাবও ফেলতে পারেনি। শুধু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু ফল হয়েছে শূন্য। তিনি তাঁর নতুন পার্টিতে ব্যর্থ হয়েই নতুন দল খুঁজছিলেন। আর বিজেপিও খুঁজছিল এমন একজনকে যিনি নির্বাচনে মুখ হতে পারেন। কিন্তু বিতর্কিত চরিত্র লক্ষ্মণবাবুকে দিয়ে সেই অভাব পূরণ করা সম্ভব হবে কি না তা না বুঝেই হাত পোড়ালেন দিলীপবাবুরা।