‘পৃথিবী একটাই দেশ’, জগৎজননীর চোখে বিশ্বদৃষ্টি সুরুচির
বিবিধের মাঝে মহামিলনের বাণী ছড়িয়েছে এ দেশ। বহুত্ববাদী এ দেশ গেয়েছে একতার জয়গান। তাহলে বিশ্বজুড়ে চলা ভেদাভেদ, হানাহানি ভুলে কেন আমরা এক হওয়ার বার্তা দেব না? কেন ভাবব না পৃথিবীটা তো একটা দেশ! পৃথিবীকে একটা একান্নবর্তী পরিবার ভাবলে তো সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যায় এক মুহূর্তেই। সেই ভাবনা যে একেবারেই অমূলক নয়, তা দেখিয়েছে নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ।
আক্ষরিক অর্থেই সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মাতৃ আরাধনায় তাদের থিম 'পৃথিবী একটাই দেশ'। এবার জগৎটাকে মায়ের চোখে দেখতে চেয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। দেখাতে চেয়েছেন দর্শনার্থীদের- তিনি যে জগৎজননী। তা-ই ফুটে উঠেছে মণ্ডপের পরতে পরতে। বিভেদ ঘুচানোর মন্ত্রকে সামনে রেখেই আরও এক বছর দুর্গতিনাশিনীর আরাধনার প্রস্তুতি সেরেছে সুরুচি সংঘ।
প্রতি বছরেই কোন না কোন প্রদেশকে তারা তুলে ধরেন পুজোর আঙিনায়। এবার 'সুরুচি'র পাড়ি দেশ ছেড়ে ভিনদেশে। 'পৃথিবী একটাই দেশ' বোঝাতে প্রতিবেশী দেশ ভুটানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সুরুচি-র ৬৩তম বছরে সুরুচিপূর্ণ অবদান হিমালয়ের কোলে অবস্থিত সুন্দর দেশ ভুটান। প্রতিবেশী দেশের শিল্প, কলা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে দুর্গামণ্ডপের পরতে পরতে ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিল্পীই জানালেন, সাড়ে চার মাস ধরে দেড়শো জন শিল্পীর অদম্য প্রচেষ্টায় গড়ে উঠছে সুরুচির থিম। মণ্ডপে কাঠ খোদাই করে এবং ধাতুর উপর রঙ-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভুটানের শিল্প-সংস্কৃতিকে। মন্দিরের গায়ে ভুটানের দেবী 'পালদেন লোমো'। ভুটানিদের বিশ্বাস তিনি বিপদ-আপদে রক্ষা করেন তাদের।
তাঁকে স্মরণ করলেই সমস্ত বিপদ থেকে রেহাই মেলে। মণ্ডপে গরু, সিংহের মূর্তি এবং ধর্মচক্র প্রতিস্থাপন হয়েছে ভুটানের রীতি মেনেই। পুজো প্রাঙ্গনে থাকবে সুবিশাল ' বজ্রায়ন বুদ্ধের মূর্তি'। ভুটানের অতি পরিচিত রঙবেরঙের পতাকা থাকছে।
এই পতাকাই বহন করে রয়েছে বুদ্ধের অমর শান্তি বাণী। মাতৃ প্রতিমা তৈরি হয়েছে বৌদ্ধ শিল্পকলার আঙ্গিকে। ১০ ফুট উচ্চতার এই দেবী মূর্তির আশীর্বাদে পৃথিবীকে এক সুত্রে বাঁধার সঙ্কল্প নিয়েছে কলকাতার বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠান।