ঘরে-বাইরে ওঁরাই দেবী, কালীঘাটে ‘দেবীরূপে মানবী’
যিনি রাঁধেন, তিনি চুলও বাঁধেন। আজকের পৃথিবীতে আর মেয়েরা পর্দানসীন নয়। তাঁরা ঘর-সংসার সামলানোর সঙ্গে বাইরের জগতেও সমান সাবলীল। সংসারের পাশাপাশি বিশ্ব সংসারেও এখন তাঁদের কর্তৃত্ব। আদতে মহিলারা প্রকৃত অর্থেই দশভূজা। তাঁরা দু'হাতেই দশহাতের সমান। দেবী দুর্গার দশ হাত তো নারীশক্তির সেই ভাবনারই পরিচায়ক।
ঘরে-বাইরে মহিলাদের উত্তরণের সেই ভাবনাই এবার মাতৃ আরাধনার থিম হিসেবে তুলে ধরেছে কালীঘাট মিলন সঙ্ঘ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার দুর্গাপুজো বলে কথা। একটু স্বতন্ত্র চিন্তা-ভাবনা তো থাকবেই। তাই তো কালীঘাট এম এসের থিম এবার 'দেবীরূপে মানবী'। কী এই থিম-ভাবনা?
পরিষ্কার করে দিলেন শিল্পী সৌমিক। তাঁর কথায়, 'দেবীরূপে মানবী'- এই থিমের আড়ালে আমরা প্রকাশ করতে চেয়েছি ঘরে-বাইরে সমান দক্ষতার অধিকারী মহিলাদের। তাই আমরা এমনও বলছি এই থিমের অপর নাম 'দেবী ঘরে-বাইরে'। আসলে এটা সেইসব মহিলাদের প্রতি আমাদের পুজো উদ্যোক্তা ও শিল্পীদের তরফে বিশেষ শ্রদ্ধার্ঘ্য, যাঁরা ঘোর সংসারী, আবার বাইরের কাজেও সমান পারদর্শী।
তাই মহিলারা কীভাবে ঘর-সংসার সামলান, কীভাবে বাইরের জগতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন, নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন কাজে স্বতন্ত্রী হয়ে ওঠেন, তা দেখাতে চেয়েছি আমরা।
বিশেষভাবে কারও দিকে লক্ষ্য করে আমরা এই বিষয় ভাবনার উপস্থাপনা করিনি। কারণ, জগৎজুড়ে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে, যাঁরা কাজের মধ্যে দিয়েই হয়ে উঠেছেন একজন দেবী। তিনিই দশভূজা, তিনিই মাতৃময়ী, তিনিই চিন্ময়ীরূপী মা। সেই মায়েরই অধিষ্ঠান আমাদের এই পুজো মণ্ডপে। মানবীদের মধ্যেই তাই দেবীসত্তাকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছি আমরা। আর এই কাজে আমার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করেছে পিয়ালি ও প্রদীপ।
এখানে দেবীমূর্তির দু'টি হাত। দেবী দশভূজা নন। দেখানো হয়েছে দশ মানবী এখানে দেবীর দশ হাত। তাঁরা দেবীকে দশ হাতে বরন করছেন। আবার দেবী ত্রিনয়নীও নন। মানবী-রূপী এই দেবীর মানুষের মতোই দু'টি চোখ। কিন্তু যে দশ মানবী দেবীকে বরণ করছেন, তাঁদের আবার দেখানো হয়েছে ত্রিনয়নীরূপে। মায়ের অধিষ্ঠান মানবীদের মধ্যেই। আবার ওই মানবীরাই দেবীর অংশ। আধুনিকতা বা আধুনিক ভাবনা বলতে এটুকুই, বাকি সব কিছুই একেবারে সাবেকি ধারায়।
মণ্ডপ সজ্জায় অনুসঙ্গ হিসেবে উঠে এসেছে সধবা মহিলার ব্যবহারী জিনিস। নারী হৃদয়ের কোমলা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে কোমল আলো। ঘর ও বাইরে বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠখোদাই চিত্র। মণ্ডপের প্রবেশ পথে থাকছে ছ'টি আয়না। সেই আয়নায় দর্শনার্থীরা তাঁদের নিজেদের মুখচ্ছবিতে দেখে নেবেন তিনি কে, তিনি কী করতে পারেন। নতুন করে নিজেকে চিনেই তিনি দেবীদর্শন করবেন।
সদস্য স্বরূপ ঘোষ বলেন, বিষয়ভাবনা সম্পূর্ণভাবেই শিল্পীর। তাঁরা শুধু শিল্পীদের সহায়তা করেছেন এই ভাবনাকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলতে। শিল্পীর পরিকল্পনা সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তারই ফল এই 'দেবীরূপে মানবী'।