আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ডাক ও শোলার সাজ, বনেদিবাড়ির পুজোই টিকিয়ে রেখেছে শিল্পের অস্তিত্ব
থিমভাবনা আর বিষয়-বৈচিত্রে বাংলার শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জের পুজোমণ্ডপগুলিতে বিরাজ করছে অভিনবত্ব। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে প্রতিমার পোশাক ও অলঙ্কার-সজ্জাতেও।[(ছবি) ওঁরাই উৎসবের কাণ্ডারি, ওঁদের হাত ধরেই মা আসেন মর্ত্যে!]
হারিয়ে যেতে বসেছে পুরাতনী ডাকের সাজ বা শোলার সাজের সাবেকিয়ানা। মানুষের রুচি ও ইচ্ছার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে দেবদেবীর সাজসজ্জাও। তারই রেশ ধরে গ্রামবাংলার শোলা-শিল্পে তৈরি হয়েছে নতুন সঙ্কট।
বনেদি বাড়ির পুজো টিকিয়ে রেখেছে ঐতিহ্য
শুধু বনেদি বাড়ির পুজো ও সাবেকি প্রতিমার রেওয়াজই টিকিয়ে রেখেছে সেই শোলা শিল্পের অস্তিত্ব। একইভাবে অনেক ক্ষেত্রে ফিরে আসছে ডাকের সাজও।
বনেদি বাড়ির পুজো টিকিয়ে রেখেছে ঐতিহ্য
শুধু বনেদি বাড়ির পুজো ও সাবেকি প্রতিমার রেওয়াজই টিকিয়ে রেখেছে সেই শোলা শিল্পের অস্তিত্ব। একইভাবে অনেক ক্ষেত্রে ফিরে আসছে ডাকের সাজও।
গ্রামের পুজোয় ডাকের সাজের কদর
আজ থেকে তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেও বাংলার পুজোয় ডাকের সাজের কদর ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে সবকিছুরই। মানুষ হয়েছে সুক্ষ্ম রুচিসম্পন্ন। মাটির প্রতিমার বদলে ফাইবার, বাঁশ, বেত, ঝিনুক, টিন, প্লাস্টিকের প্রতিমাও তৈরি হচ্ছে। হচ্ছে সেই প্রতিমার আরাধনাও। সাজসজ্জায় ডাক বা শোলার বদলে আর্টের বৈচিত্র।
ফাইবার, জরি, রোলেক্স, গোল্ডেন গহনায় সজ্জিত করে তোলা হচ্ছে দেবী প্রতিমা। মাটির পোশাকে রঙের মিশেল প্রাণবন্ত করেছে প্রতিমাকে। পুরাতনী সেই ডাকের সাজ বা পরবর্তী সময়ে শোলার সাজের সেই বাড়বাড়ন্ত কোথায় এখন? এখন তো হাতে গোনা প্রতিমায় ওই পুরাতনী মেলবন্ধন।
দুর্গাপুজোর প্রচলন
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাংলাদেশে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার পর বিদেশ থেকে রফতানি করা সাদা ও রঙিন রাংতা দিয়ে প্রতিমার অঙ্গসজ্জা করতেন শিল্পীরা। খড়ের প্রতিমায় মাটি পড়ার পর রাংতা সহযোগে পোশাক ও অলঙ্কার পরিয়ে অঙ্গসজ্জার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দেব-দেবীর রূপ পেত প্রতিমা। সেই ডাকের সাজের বদলে কিছুদিন পরেই আসে শোলা-সজ্জা।
শোলার
সাজে
মৃন্ময়ী
প্রতিমা
হয়ে
উঠত
অপরূপা।
ধীরে
ধীরে
মানুষের
রুচিতে
প্রতিমা
এখন
আধুনিক
সজ্জায়
সজ্জিত।
এখনও
হাওড়ার
উলুবেড়িয়া,
বাগনান,
মুন্সিরহাট,
পূর্ব
মেদিনীপুর,
নদিয়ার
কৃষ্ণনগর,
বর্ধমানের
কাটোয়া
থেকে
কলকাতার
বড়বাজারে
আসে
ডাকের
সাজ,
শোলার
সাজ।
শোলা শিল্পীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।
কিন্তু এখন আর সেই বাজার নেই ডাক বা শোলার। যেটুকু বাজার তা এলাকার শিল্পীদের কর্মগুণে ও শিল্পকর্মে জনপ্রিয়তার নিরিখে। যেমন উলুবেড়িয়ার চাঁদমালার জনপ্রিয়তায় ভর করে এখনও শোলা-শিল্পীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কতদিন? প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পীরা স্বয়ংই।
সরকারি সহযোগিতার কোনও বালাই-ই নেই। তবে প্রতিকূলতার সঙ্গে শিল্পীরা পুরাতন ঐতিহ্য রক্ষায় লড়বেন কীভাবে? এখন সাবেকিয়ানাকে আঁকড়ে থাকা ছাড়া তাদের আর করার কী-ই বা আছে? তবে একটাই ভরসা ফের সাবেকিয়ানায় মজেছে আধুনিককালের মানুষ। আর রয়েছে বনেদিয়ানা।