এসবি পার্কে গড়াচ্ছে সভ্যতার বিজয়রথের চাকা, বাঁক নেপথ্য কারিগরদের কাঁধে
'তোমার অট্টালিকা কার খুনে রাঙা? ঠুলি খুলে দেখো প্রতি ইটে আছে লেখা।' কিন্তু ঠুলি খুলে কেউ কি দেখেছে ইটে কার নাম লেখা আছে? না দেখেনি কেউ-ই। মানব সভ্যতা যাঁদের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে, সভ্যতার ভার বইতে গিয়ে যাঁরা মজুর, মুটে, কুলির রূপ নিয়েছে, যাঁরা তাঁদের পবিত্র অঙ্গে কালি মেখেছে, তাঁরা চিরকাল রয়ে গিয়েছে অন্ধকারে। সভ্যতার নেপথ্য কারিগরদের কথা আর কেউ বলুক বা নাই বলুক, শ্রমজীবী মানুষদের জীবনযুদ্ধের সেইসব কাহিনি এবার তুলে ধরেছে ঠাকুরপুকুরের এসবি পার্ক।
এসবি পার্কের পুজোর থিমে এবার স্থান করে নিয়েছেন ওইসব মেহনতি মানুষেরা। যাঁরা নগরে-প্রান্তরে প্রতিনিয়ত কাজ করে বেড়ায়, যাঁরা হাল ধরে থাকে মানবসভ্যতার, তঁদের কথা বলতে চেয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। এই পুজো মণ্ডপের 'সভ্যতার বিজয় রথের চাকা'য় ধ্বনিত হয়েছে তাঁদেরই নামগান।
হতে পারেন তাঁরা শ্রমিক। তাঁদের ঘামঝরা পরিশ্রমে ভর করেই তো মানবজাতি এগিয়ে চলেছে। তাই তাঁদের কথা ভাবারও যে প্রয়োজন রয়েছে তা এই মণ্ডপে এলেই দর্শনার্থীরা বুঝতে পারবেন। তাঁরা দেখবেন. এই মণ্ডপের প্রতিটা পদক্ষেপে কীভাবে শিল্পী ফুটিয়ে তুলেছেন মেহনতি মানুষদের কঠিন সঙ্কল্পকে। এসবি পার্ক সর্বজনীনের পুজোপ্রাঙ্গণে শ্রমজীবীদের জীবনযুদ্ধের সেই কথা শুনিয়েছেন থিমশিল্পী ভবতোষ সুতার৷
গতবছর চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছিল এসবি পার্কের মণ্ডপে৷ এবার শিল্পী ভবতোষ সুতারের পরিকল্পনায় দর্শনার্থীরা দেখবেন মেহনতি মানুষদের যন্ত্রণার ইতিহাস। সভ্যতার বিজয় রথের চাকায় কীভাবে পিষ্ট হয়েছে মেহনতি মানুষগুলো তাই দেখাবে এসবি পার্ক। জগৎজুড়ে দুর্বল ওই মানুষগুলো কীভাবে মার খাচ্ছে, তার ছবিই তো এঁকেছেন শিল্পী। তাঁর ভাবনার সফল বাস্তবায়নে তিনি ব্যবহার করেছেন ইট-কাঠ-পাথর-সহ মানবসভ্যতার সমস্ত বুনিয়াদি উপকরণকেই।
সমগ্র সভ্যতার ইতিহাসকে বোঝাতে শিল্পী তৈরি করেছেন বিশালাকার চাকা। যা তৈরি হয়েছে ফাইবার দিয়ে। বোঝাতে চেয়েছেন, ওই চাকাই হল সভ্যতার বিজয়রথের চাকা। শ্রমিকদের হাতে গড়া ওই বিজয় রথ এগিয়ে চলেছে৷ কিন্তু উত্তরণ হয়নি সভ্যতাকে এগিয়ে দেওয়া কারিগরদের জীবনযাত্রায়। তাই তো জীবনের ভার বয়ে চলেছে তাঁরা। তা দেখাতে শিল্পী ব্যবহার করেছেন একটি বাঁক৷ কাঠের উপর কারুকার্য করে তৈরি ওই বাঁকেই তিনি বয়ে চলেছেন সভ্যতার বিজয়রথকে।
মাটি খুঁড়ে বানানো বাঁকের পাত্র, ফাইবারের তৈরি রথের চাকা- এমন হাজারো জিনিসের সম্ভার মনে করিয়ে দেবে সভ্যতার ইতিহাসকে৷ প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী স্বয়ং। পুজোয় থিম সংগীত গেয়েছেন কবীর সুমন৷