লন্ডনে সালেমের হিন্দু মন্দির উঠে এসেছে কলেজ স্কোয়ারে, পাশেই রিও-র অলিম্পিক আসর
এক কথায় মাতৃবন্দনার সনাতনী ব্র্যান্ড। আধুনিক হয়েও সনাতন ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানা জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন। আড়ম্বরের আতিশয্য নেই, নেই থিম-বিষয় ভাবনার চাকচিক্য, তবু আজকের পৃথিবীর রুক্ষ মাটিতে চূড়ান্ত বাস্তব।
আসলে পুজো তো শুধু পুজো নয়, পুজো শখেরও। সেই শখের বশবর্তী হয়ে আধুনিকতার দোলা লেগেছে শহর-শহরতলির পুজোয়। তারই রেশ ধরে বছর বছর মাতৃপূজায় কত না নূতনত্বের ছোঁয়া লাগে। আর সেই শখ পূরণে অনেক ক্ষেত্রেই সনাতনী ভাব, চিরন্তনী প্রথাও উধাও হয়ে যায় নিমেষে।
কিন্তু এই থিমের লড়াইয়ের মধ্যে পড়েও সনাতনী ঐতিহ্য, সাবেকিয়ানা থেকে এতটুকু সরে আসেনি কলেজ স্কোয়ার সর্বজনীন। পোশাকি নাম বিদ্যাসাগর উদ্যান। কিন্তু খ্যাতি কলেজ স্কোয়ার নামেই। মধ্য কলকাতার সবথেকে বিখ্যাত পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এই পুজো।
কোনওদিনই থিমের মোহজাল ছিল না, আজও নেই। তবে চিরকালই সমাজ সচেতনতার একটা বার্তা দিয়ে এসেছে এই পুজো কমিটি। এবার সুবিশাল পুজো মণ্ডপ গড়ে তোলা হয়েছে লন্ডনের সালেম হিন্দু মন্দিরের আদলে। চারিদিকে হানাহানি, ধর্মীয় অস্পৃশ্যতা, কুসংস্কার। সম্প্রীতির বন্ধন যেন কতই না পলকা! সমাজের এই সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় কলেজ স্কোয়ার এমন এক মণ্ডপ উপহার দিচ্ছে এবার মাতৃবন্দনায়, যা মহামিলনের মন্ত্র দেবে দর্শনার্থীদের।
উদ্যোক্তা বিকাশ মজুমদারের কথায়, লন্ডনে এক মুসলিম তৈরি করেছিলেন এই মন্দির। তাঁর নামেই মন্দিরের নামকরণ হয় সালেমের হিন্দু মন্দির। একপ্রান্তে মন্দির, অন্যপ্রান্তে মসজিদ। সার্থক সহবস্থান। একই বৃন্তে দু'টি কুসুমের মতোই সেই মন্দির-মসজিদের অবস্থান। সম্প্রীতির বার্তা দিতে এই সালেমের মন্দিরই এবার তুলে ধরা হয়েছে কলেজ স্কোয়ারের পুজোর মণ্ডপসজ্জায়। বাঁশ, কাঠ, কাপড়, প্লাই, শোলা দিয়ে শিল্পীর হস্তনৈপূণ্যে যেন কলেজ স্কোয়ারেই অবস্থান করছে লন্ডনের সালেমের হিন্দু মন্দির।
আর প্রতিমাসজ্জায় যথারীতি সাবেকিয়ানা। পুরাতনী সুসজ্জিতা মাতৃপ্রতিমাই যে বরাবরের প্রধান আকর্ষণ এই পুজোর। এখানে দেবীর অঙ্গসজ্জা হয় পুজোকমিটির নিজস্ব অলঙ্কারে। আর আলোকসজ্জা তো থাকবেই। কলেজ স্কোয়ারের গোলদিঘি এবার পুজো ক'দিন রূপ নিচ্ছে রিও-র অলিম্পিক আসরে।
দিঘির পাড় সেজে উঠছে অলিম্পিক গেমসের নানান কোলাজে। আলোর কায়দায় এই রিও-র দেখা মিলবে দীপা কর্মকার, সাক্ষী মালিক, পিভি সিন্ধুদেরও। আবার ফেল্পসের সাঁতার, বোল্টের বিদ্যুৎ-গতিও চাক্ষুষ করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। পুজো কমিটি বরাবর সমাজ সচেতন। সেই আঙ্গিকে এবারও রক্তদান, বস্ত্রবিতরণ, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সাহায্যের মতো মানবিক দিকেও সমান গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।