নির্বাচনের ফলাফল মানবেন না? ট্রাম্প যা বলছেন সে তো স্বৈরাচারীরা বলে থাকেন, উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা
রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে বসেন যে আগামী ৮ই নভেম্বর নির্বাচনের ফল দেখে তার উপর তিনি মন্তব্য করবেন। অর্থাৎ, তিনি যদি হেরে যান তাহলে এই নির্বাচনের ফলাফলকে তিনি নাও মানতে পারেন।
গত সপ্তাহে এবারের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শেষ বিতর্কসভার শেষ লগ্নে রিপাবলিকান পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে বসেন যে আগামী ৮ই নভেম্বর নির্বাচনের ফল দেখে তার উপর তিনি মন্তব্য করবেন। অর্থাৎ, তিনি যদি হেরে যান তাহলে এই নির্বাচনের ফলাফলকে তিনি নাও মানতে পারেন বলে একটি বার্তা দিয়ে রাখেন তিনি।'
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন জিনিস তো দেখা যায় না!
আর এই বার্তার মধ্যেই অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো এবং আদৃত গণতন্ত্রের বিভিন্ন মহল। "এমন কথা তো একনায়করা বলে থাকেন; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী গণতন্ত্রেও এমন কথা শোনা যায়?" বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
গত রবিবার (২৩ অক্টোবর) আমেরিকার প্রথম সারির দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে এই একই উদ্বেগ।
গণতন্ত্র-বিষয়ক বিভিন্ন পণ্ডিতকেই চিন্তিত করেছে ট্রাম্পের এই মন্তব্য, বলছে প্রতিবেদনটি। তাঁদের মতে, এমন কথা বলে থাকেন সেই সমস্ত স্বৈরাচারীরা যাঁরা ক্ষমতা জোর করে হস্তান্তর করেন এবং নিজেদের স্বার্থে গণতন্ত্রকে জলাঞ্জলি দিতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেন না।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন লেভিটস্কি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান: "এরকম জিনিস তো আমরা দেখে থাকি রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, আজারবাইজান, মালাউই বা বাংলাদেশের মতো দেশে। কোনও স্থিতিশীল গণতন্ত্রে এ কখনও ঘটে না।"
এই প্রসঙ্গে বলা চলে, ট্রাম্প আগাগোড়াই বলে এসেছেন যে এবছরের নির্বাচনে তাঁকে হারাতে ব্যাপক কারচুপি (তাঁর কথায় "রিগড") হয়েছে। বিরোধীপক্ষ তো বটেই, সংবাদমাধ্যমকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন এই ধনকুবের প্রার্থী। এবং শেষমেশ ওই অন্তিম বিতর্কসভায় তাঁর নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণের প্রসঙ্গে ওই মোক্ষম জবাব: "যা বলার তখনই বলব। আপাতত এটা রহস্যই থাক।" ট্রাম্প যে মার্কিন মুলুকের গণতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই।
ক্ষমতান্ধ নেতারা গণতন্ত্র লক্ষ্য করেন নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে যে সমস্ত দেশে গণতন্ত্র দুর্বল, সেখানে ক্ষমতাপিপাসু নেতারা সাধারণত এই ধরনের কথা বলে থাকেন গণতন্ত্রের উপর থেকে মানুষের বিশ্বাস টলিয়ে দেওয়ার কারণে। হিংসাকে উস্কে দিতে তাঁরা পিছপা হন না নিজেদের স্বার্থের খাতিরে, তাতে গণতন্ত্র বাঁচল না মরল, তাঁদের কিছু এসে যায় না -- বলেছে এনওয়াইটির প্রতিবেদনটি।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এও বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গনণতান্ত্রিক কাঠামো এত নড়বড়ে নয় যে একজন ব্যক্তি তা বেলাইন করে দিতে পারে কিনতু ট্রাম্পের শব্দচয়ন একটু হলেও তাঁদেরকে ভাবায় কারণ এই প্রবণতা প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়ের দিকেই দেশকে নিয়ে যায়, বলেছে প্রতিবেদনটি।
ট্রাম্পের পরাজয় ঘটলে আমেরিকা জুড়ে হিংসা ছড়াতে পারে, ভয় পাচ্ছে বিশেষজ্ঞমহল
অধ্যাপক লেভিটস্কি বিশেষত চিন্তিত এই ভেবে যে ট্রাম্প যদি সত্যিই এই নির্বাচনে হেরে গেলে তা মানতে রাজি না হন, তখন আমেরিকা জুড়ে বিক্ষিপ্ত হিংসা দেখা দিতে পারে। কারণ এই না-মানার বার্তার মাধ্যমে ট্রাম্প স্বয়ং তাঁর সমর্থকদের বোঝাচ্ছেন যে এই নির্বাচন ঠিক ভাবে করা হয়নি এবং পরোক্ষে তাঁদের হিংসাত্মক প্রতিবাদের পথে যাবার জন্যই উৎসাহিত করছেন।
একই মতামত বার্নার্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শেরি ব্রেম্যানেরও। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদককে তিনি বলেন: "নির্বাচনকে রিগড বলার দু'টি প্রধান কারণ রয়েছে।
কেনিয়াতে যা হয়েছে, মার্কিন গণতন্ত্রেও তাই হবে?
প্রথমত, 'দেশের গণতন্ত্র রীতিমতো ভঙ্গুর' এমন বার্তা দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা আর দ্বিতীয়ত, স্থিতিশীলতা নষ্ট করে নিজের ব্যক্তিগত ফায়দা লোটা। এর ফলে মানুষের মনে এই ধারণাই বদ্ধমূল হয় যে মিটিং-মিছিল এবং হিংসার মধ্যে দিয়েই একমাত্র সম্ভব জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার আর তার ফলেই শুরু হয় মারামারি, সংঘর্ষ। দু'হাজার সাত সালে কেনিয়াতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমন সংঘর্ষই দেখা গিয়েছিল।
কিনতু যা কেনিয়াতে হবে, তা আমেরিকার মতো দুশোর্ধ বছরের গণতন্ত্রেও হবে? এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে সবাইকে।